ইরানে এবার স্কুলছাত্রীকে পিটিয়ে হত্যা, দেশজুড়ে বিক্ষোভ

‘তাঁর নাম মাসা আমিনি’—ইরানের রাস্তায় প্রতিবাদরত নারী-পুরুষ
ছবি: সংগৃহীত

ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে শ্রেণিকক্ষে থাকা এক স্কুলশিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। ওই শিক্ষার্থী একটি দেশাত্মবোধক গান গাইতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। গত সপ্তাহে ইরানের ওই স্কুলে অভিযান চালায় নিরাপত্তা বাহিনী। এদিকে স্কুলশিক্ষার্থী হত্যার ঘটনায় দেশটিতে বিক্ষোভ আরও জোরদার হয়েছে। এর আগে হিজাব নীতি না মানায় গত ১৬ সেপ্টেম্বর মাসা আমিনি নামের এক তরুণী দেশটির নীতি পুলিশের হেফাজতে নিহত হন। এর পর থেকে দেশটির বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এ বিক্ষোভে বিভিন্ন দেশে থাকা প্রবাসী ইরানিরা সমর্থন জানিয়েছেন। খবর দ্য গার্ডিয়ান–এর।

ইরানের কো–অর্ডনেটিং কাউন্সিল অব ইরানিয়ান টিচার্স ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন জানায়, ১৩ অক্টোবর শহীদ গার্লস হাইস্কুলে অভিযান চালায় নিরাপত্তা বাহিনী। সেখানে দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির প্রশংসা করে শিক্ষার্থীদের একটি গান গাইতে বলা হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তা অস্বীকার করলে তাদের পেটানো হয়। সেখান থেকে অনেক শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে পাঠানো হয় আবার অনেককে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই ঘটনায় ১৬ বছর বয়সী কিশোরী আসরা পানাহির হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত্যু হয়।

অবশ্য এ ঘটনায় নিরাপত্তা বাহিনীর দায় অস্বীকার করেছেন ইরানি কর্মকর্তারা। তবে এ ঘটনার পরপরই দেশজুড়ে তীব্র বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। তবে এ ঘটনার পর আসরার চাচা দাবি করে এক ব্যক্তি টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আসরার জন্মগত হৃদ্‌রোগ ছিল। তাতেই তার মৃত্যু হয়েছে।

মাসা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিক্ষোভে এখন স্কুলের শিক্ষার্থীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তারা হিজাব উড়িয়ে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করছে, এমন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনার পর থেকে ইরানি কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন স্কুলে অভিযান পরিচালনা করছে। অনেক স্থানে স্কুলের শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করা, তাদের বিভিন্ন শাস্তি দেওয়াসহ তাদের ওপর কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটেছে।

গত রোববার ইরানের টিচার্স ইউনিয়নের পক্ষ থেকে নিষ্ঠুর ও অমানবিক এই অভিযানের নিন্দা জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ইউসেফ নুরির পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ইরানের বিক্ষোভে ২৩টির বেশি শিশু মারা গেছে। তাদের মৃত্যু হয়েছে গুলি, খুব নিকট থেকে ছোড়া ধাতব বস্তু ও অমানবিক মারধরের ফলে। এ ছাড়া বিভিন্ন স্কুল থেকে অনির্দিষ্টসংখ্যক শিক্ষার্থীকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদের অনেককেই মানসিক চিকিৎসাকেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে তরুণী মাসা আমিনির মৃত্যুর ঘটনায় শুরু হওয়া বিক্ষোভে দমন-পীড়ন চালানোয় ইরানের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। নতুন এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে ইরানের নীতি পুলিশ, দেশটির রেভল্যুশনারি গার্ডের সাইবার বিভাগ, তথ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ আজারি জাহরোমি। লুক্সেমবার্গে দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক বৈঠক থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

ইরানে চলমান বিক্ষোভে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলো। গতকালের বৈঠকের আগে সূত্র জানিয়েছিল, বিক্ষোভে দমন-পীড়ন চালানোর ঘটনায় ইরান সরকারের উচ্চপদস্থ ১৫ কর্মকর্তার ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং ইউরোপে থাকা তাঁদের সম্পদ জব্দ করার ঘোষণা দেওয়া হতে পারে।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন