ইরানে আবারও সংঘর্ষ–গুলি, একজন নিহত

মাসা আমিনির মৃত্যুর ৪০তম দিনে তাঁর কবর জিয়ারতের জন্য শোকাতুর হাজারো মানুষের স্রোত ছুটে যায় ইরানের কুর্দিস্তানের সাকেজ শহরে। এ সময় এক নারীকে গাড়ির ওপর দাঁড়িয়ে কিছু বলতে দেখা যায়
ছবি: এএফপি

ইরানে মাসা আমিনির মৃত্যুর ৪০ দিনের আয়োজনকে ঘিরে দেশটিতে নতুন করে বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ চলাকালে দেশটির পশ্চিমাঞ্চলের মাহবাদ শহরে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে এক তরুণের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

নরওয়েভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হেনগো অর্গানাইজেশন ফর হিউম্যান রাইটস গতকাল জানায়, গতকাল বুধবার ছিল মাসা আমিনির মৃত্যুর ৪০তম দিন। ওই দিন মধ্যরাতের পর মাহবাদ শহরে ব্যাপক বিক্ষোভ ও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হন কুর্দি তরুণ আফশিন আশহামের। ২৮ বছর বয়সী আশহামের কপালে গুলি লাগে।

কঠোর পোশাকবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে গত মাসে ২২ বছর বয়সী মাসা আমিনিকে গ্রেপ্তার করেছিল ইরানের নীতি পুলিশ। তাদের হেফাজতে নেওয়ার তিন দিন পর ১৩ সেপ্টেম্বর মৃত্যু হয় এই কুর্দি তরুণীর। গতকাল মাসা আমিনির মৃত্যুর ৪০তম দিনে তাঁর পরিবারকে দিবসটি উপলক্ষে কোনো ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করতে নিষেধ করেছিল ইরানের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো। এমনকি এদিন মাসা আমিনির কবর জিয়ারত করতে না যেতেও লোকজনকে সতর্ক করা হয়েছিল।

ইরানের প্রথা অনুযায়ী কারও মৃত্যুর ৪০তম দিনে শোক পালনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়। তাই নিষেধাজ্ঞা ও সতর্কতা উপেক্ষা করে গতকাল হাজারো মানুষ সমবেত হন ইরানের কুর্দিস্তানের সাকিজ শহরে। সেখানেই মাসা আমিনিকে কবর দেওয়া হয়েছে।

তাঁর কবর জিয়ারত করেন হাজারো মানুষ। সেই সঙ্গে চলে বিক্ষোভ। বিক্ষোভকারীদের ‘নারী, জীবন ও স্বাধীনতা’ স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।
তবে মাসা আমানির পরিবারের সদস্যদের এদিন কবরস্থানে দেখা যায়নি।

সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, তাঁদের গৃহবন্দী করে রেখেছে নিরাপত্তা বাহিনী। অবশ্য এ দাবির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

আরও পড়ুন

শুধু সাকিজে নয়, বুধবার ও গতকাল ইরানের ১২২টি শহর ও ১০৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ হয়েছে। স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠনগুলোর বরাতে রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। খবরে আরও বলা হয়, মাসা আমিনির মৃত্যুর পর উত্তাল হয়ে ওঠা ইরানে রক্তের স্রোত থামছে না। একদিকে চলছে তুমুল বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ, অন্যদিকে বিক্ষোভ দমনের নামে একের পর এক প্রাণহানি।

মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলেছে, লাগাতার বিক্ষোভ–সংঘাতে এখন পর্যন্ত ইরানে ২৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর ৩০ সদস্য রয়েছেন। আরও রয়েছে ৩৬ শিশু–কিশোর। এ ছাড়া বুধবার পর্যন্ত আটক করা হয়েছে ১৩ হাজার ৮০০–এর বেশি বিক্ষোভকারীকে।

এদিকে গতকাল বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় রাজধানী তেহরানে ১৫ জন চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। তাঁরা ইরানিয়ান লিগ্যাল মেডিসিন অর্গানাইজেশনের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করছিলেন। এ সময় ‘স্বাধীনতা, স্বাধীনতা’ বলে স্লোগান দেন তাঁরা। এই বিক্ষোভে অংশ নিয়ে পদত্যাগ করেছেন তেহরান মেডিকেল কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট।

আরও পড়ুন

ইরান সরকারের ভাষ্য, অস্থিতিশীলতা উসকে দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো। তারা মাসা আমিনির মৃত্যুকে ঘিরে ইরানে দাঙ্গা বাধাতে চাইছে। তবে সরকার কঠোরভাবে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে প্রস্তুত। এক মাসের বেশি সময় ধরে দেশজুড়ে চলা বিক্ষোভ–সংঘাতে হতাহতের সংখ্যাও প্রকাশ করেনি ইরান সরকার।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞা

১২ জনের বেশি ইরানি কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আজ বৃহস্পতিবার দেশটি বলছে, মাসা আমিনির মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সহিংসভাবে দমন করায় এই কর্মকর্তাদের কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রয়েছেন ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডের গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং সিস্তান ও বেলুচিস্তান প্রদেশের গভর্নর হোসেন মোদারেস খিয়াবানি। এ দুই এলাকায় বিক্ষোভে বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ইরানের নীতি পুলিশের হেফাজতে ২২ বছর বয়সী মাসা আমিনির মৃত্যুর ৪০ দিন পার হয়েছে। আমরা আমিনির পরিবার ও ইরানের জনগণের জন্য শোক ও তাঁদের সঙ্গে একাত্মতা জানাচ্ছি।’

আরও পড়ুন

আয়াতুল্লাহ খামেনির হুঁশিয়ারি

দেশজুড়ে চলা বিক্ষোভের মধ্যে গতকাল সন্ধ্যায় দক্ষিণাঞ্চলীয় শিরাজ শহরে শিয়া সম্প্রদায়ের শাহ চেরাগ দরগাহে বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বন্দুকধারীর নির্বিচার গুলিতে অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হন ৪০ জন। এ হামলার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস।

এ ঘটনার জেরে আজ ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভিতে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির একটি বিবৃতি পাঠ করা হয়। বিবৃতিতে খামেনি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সব ইরানিদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, শত্রু ও তাদের এজেন্টদের মোকাবিলা করা সব ইরানির কর্তব্য। এ হামলার পেছনে যারাই জড়িত থাকুক, তাদের শাস্তি পেতে হবে।

আরও পড়ুন