সত্যে তথ্যে ২৪ বছর

প্রথম আলোর ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমাদের শুভেচ্ছা এবং অভিবাদন গ্রহণ করুন। ২৪ বছর ধরে এই দিনটিতে আপনাদের শুভেচ্ছা জানানোর কাজটি আমি আনন্দের সঙ্গে করে থাকি। আপনারা আমাদের পাঠক, আপনারা আমাদের বন্ধু। আপনাদের সহযোগিতায় আমরা সামনে এগিয়ে চলেছি।

১৯৯৮ সালের ৪ নভেম্বর প্রথম আলো প্রকাশ পেল। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, ‘প্রথম আলোর চরণধ্বনি উঠল বেজে যেই, নীড়বিরাগী হৃদয় আমার উধাও হল সেই।’ আমাদের বেলায় এটা খুবই সত্য। বাংলাদেশ এবং পৃথিবী নামের আমাদের এই নীড়টাকে আরও গভীর ভালোবাসায় আঁকড়ে ধরলাম। আমরা সাহসের সঙ্গে সত্য প্রকাশের কাজ শুরু করলাম। তিন বছরের মাথায় প্রথম আলো হয়ে উঠল দেশের এক নম্বর সংবাদপত্র। আমরা নিজের আয়ে চলতে শুরু করলাম। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

১৯৯৮ সালে অল্প কজন মানুষের হাতে মোবাইল ফোন ছিল, আজকে হাতে হাতে মোবাইল ফোন এবং কোটি কোটি মানুষের মুঠোয় ইন্টারনেট। যেকোনো তথ্য এখন দ্রুত আপনারা হাতের মুঠোয় পেয়ে যান।

বাংলাদেশের মানুষের পরাজয় নেই। মানুষের জন্য বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা আছে। বাংলাদেশের মানুষের আছে সহমর্মিতা। আছে কষ্ট সহ্য করে টিকে থাকার আর এগিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা। হাড়ভাঙা পরিশ্রম করা কৃষক, গনগনে আলোর নিচে যৌবন কাটানো পোশাকশ্রমিক, মধ্যপ্রাচ্যে মগজগলা তাপে পরিশ্রম করে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠানো শ্রমিক, নতুন নতুন ধারণা নিয়ে আসা তারুণ্য আর উদ্যোক্তা আমাদের ভরসা। আমাদের কৃষকেরা মাছ-ফল-দুগ্ধ-ডিম উৎপাদনে রেকর্ড করেছেন। মেয়েরা ফুটবলে দক্ষিণ এশিয়ায় তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।

প্রথম আলো আজ শুধু একটা ছাপা খবরের কাগজ নয়, অন্যতম বৃহত্তম ডিজিটাল সংবাদমাধ্যম। একই সঙ্গে কিশোর আলো, বিজ্ঞানচিন্তা, গণিত অলিম্পিয়াড থেকে শুরু করে ক্রীড়া পুরস্কার, মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার, প্রথম আলো ট্রাস্ট, প্রথম আলো বন্ধুসভাসহ নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রথম আলো এই দেশের তরুণসমাজকে সঙ্গে নিয়ে ভালোর সাথে আলোর পথে চলার কাজটা অব্যাহত রেখে চলেছে।

মাত্র দুই বছর আগে, কোভিডের দিনগুলোয় আমরা প্রথম আলোর অফিস বন্ধ করে দিয়ে হোম অফিস চালু করেছিলাম। আমরা বেঁচে থাকব কি না, আবার কবে ঘর থেকে বের হতে পারব, সেটাই বা কে জানত! তবু আমরা থেমে থাকিনি। পাঠকের কাছ থেকে দূরে যাইনি।

বিগত বছরগুলোতে, করোনার দিনগুলোতে আমরা এই বিশ্বাস ধরে রেখেছি যে মানুষের ওপর আস্থা আর বিশ্বাস রাখতে হবে। এবং তা করে আমরা ভুল করিনি।

আজকে পৃথিবীতে যুদ্ধ, জ্বালানি-সংকট, দেশে দেশে ডলার-সংকট। বিশ্বজুড়েই খাদ্যসংকটের পদধ্বনি। বাংলাদেশকে এই সংকট থেকে উঠে দাঁড়াতে হলে আমাদের প্রত্যেককে সাহসের সঙ্গে চলতে হবে। নতুন নতুন উদ্ভাবনী ভাবনা নিয়ে সামনে এগোনোর পথ খুঁজতে হবে।

আপনারা, প্রথম আলোর পাঠকেরা, প্রথম আলোর সঙ্গে ২৪টা বছর ধরে আছেন সত্যের প্রতি আপনাদের ভালোবাসার জন্য। সেটাই আমাদের শক্তি। সেটাই আমাদের প্রেরণা।

সংবাদপত্রের জন্যও নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ সামনে চলে এসেছে। পাঠকের চাহিদাও বহুমুখী হয়ে গেছে। প্রযুক্তির ক্ষেত্রে পরিবর্তন হচ্ছে প্রতিদিন। নতুন করে আমাদের শিখতে হচ্ছে। সংবাদ কীভাবে লিখতে হবে, শিরোনাম কেমন হলে পাঠক আগ্রহী হবেন; আরও কত কিছু।

বাংলাদেশের মানুষের পরাজয় নেই। মানুষের জন্য বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা আছে। বাংলাদেশের মানুষের আছে সহমর্মিতা। আছে কষ্ট সহ্য করে টিকে থাকার আর এগিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা। হাড়ভাঙা পরিশ্রম করা কৃষক, গনগনে আলোর নিচে যৌবন কাটানো পোশাকশ্রমিক, মধ্যপ্রাচ্যে মগজগলা তাপে পরিশ্রম করে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠানো শ্রমিক, নতুন নতুন ধারণা নিয়ে আসা তারুণ্য আর উদ্যোক্তা আমাদের ভরসা। আমাদের কৃষকেরা মাছ-ফল-দুগ্ধ-ডিম উৎপাদনে রেকর্ড করেছেন। মেয়েরা ফুটবলে দক্ষিণ এশিয়ায় তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।

পাশাপাশি নেতিবাচক খবরও আছে। পৃথিবীর শীর্ষ তালিকায় আমাদের দেশের নাম উঠেছে কোটিপতি উৎপাদনে, অর্থ পাচারে, বড় বড় দুর্নীতির কারণে। ছোট-বড় অনেক, সরকারের ভেতরে ও বাইরে এসব সমস্যা বাসা বেঁধে রাষ্ট্রের জন্য ভয়ংকর হয়ে উঠেছে।

আমরা জানি, এখানেই সংবাদমাধ্যমকে তার ভূমিকা পালন করে যেতে হবে। সততার সঙ্গে যাচাই-বাছাই করে সত্য প্রকাশ করতে হবে। এবং দেশের গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হবে, পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকর করতে সংবাদমাধ্যম হিসেবে আমাদের কর্তব্য পালন করে যেতে হবে।

আমরা জানি, সত্য প্রকাশ করতে গেলে বাধা আসবেই। কিন্তু সত্যের আছে নিজের শক্তি। এই যে আজ প্রথম আলো ছাপা কাগজ রোজ পড়েন ৫০ লাখ পাঠক, সারা পৃথিবীতে প্রথম আলো ডটকম এক নম্বর বাংলা পোর্টাল, প্রথম আলোর ফেসবুক পেজে প্রায় ১ কোটি ৯০ লাখ অনুসারী, এটা কেন হয়েছে। কারণ, আপনারা বিশ্বাস করেছেন যে প্রথম আলো সত্য কথা বলে। আর সেই সত্য প্রকাশের পেছনে যদি কোনো উদ্দেশ্য থেকে থাকে, তা হলো দেশের মানুষের মঙ্গল, বাংলাদেশের জয় দেখার ইচ্ছা। আমরা বিশ্বাস করি, প্রথম আলোর শক্তি তার অগণিত পাঠক।

সত্য তথ্য প্রকাশের কাজটা সাহসের সঙ্গে, সততার সঙ্গে করে যাওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের বিজয়যাত্রায় প্রথম আলো তার ভূমিকা পালন করে যেতে দ্বিধা করবে না, ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এই অঙ্গীকার আমরা আবারও করতে চাই।

আপনারা, প্রথম আলোর পাঠকেরা, প্রথম আলোর সঙ্গে ২৪টা বছর ধরে আছেন সত্যের প্রতি আপনাদের ভালোবাসার জন্য। সেটাই আমাদের শক্তি। সেটাই আমাদের প্রেরণা।

প্রথম আলোয় আমরা সবচেয়ে বেশি সচেষ্ট থাকি একটি ব্যাপারে। কোনো তথ্য পরিবেশনের আগে যাচাই-বাছাই করে নিয়ে এর সত্যতা বিষয়ে আগে নিশ্চিত হই। সেখানেই আমাদের সাহস। ফেক নিউজ বা মিথ্যা খবরের ভিড়ে এখন পাঠক চান প্রকৃত সত্য খবর। আরও চান বিশ্লেষণ আর আলোচনা।

সে জন্য আমরা বলি, এখনই স্বাধীন ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করার সময়। আমাদের সাংবাদিকদের আরও অনুসন্ধানী এবং আরও সাহসী সাংবাদিকতা করতে হবে। সেটাই প্রথম আলোকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এ জন্যই এ বছর বলছি আমরা, সত্যে তথ্যে ২৪। চাইলে ২৪-এর আরেকটি অর্থও করা যায়। ছাপা পত্রিকার বাইরে prothomalo.com এখন ২৪ ঘণ্টা সচল। ইংরেজি পাঠকের চাহিদা মেটাতেও আছে en.prothomalo.com। আছে বড় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে সরব উপস্থিতি।

সত্য তথ্য প্রকাশের কাজটা সাহসের সঙ্গে, সততার সঙ্গে করে যাওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের বিজয়যাত্রায় প্রথম আলো তার ভূমিকা পালন করে যেতে দ্বিধা করবে না, ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এই অঙ্গীকার আমরা আবারও করতে চাই।

বাংলাদেশের জয় হবেই। এই জয় নিশ্চিত করবে ১৭ কোটি মানুষ। প্রথম আলো মানুষের সেই অভিযাত্রার বিনীত সহযোগী মাত্র। প্রথম আলো সব সময় বিনয়ের সঙ্গে সহযোগীর ভূমিকায় থাকতে চায়। প্রথম আলো সব সময় থাকবে সৎ ও সাহসী। সত্য প্রকাশে থাকবে অদম্য।

২৪ বছর আগের সেই শুরুর দিনের প্রতিশ্রুতি আমরা এখনো ভুলিনি। কখনো ভুলব না।