প্রথম আলোতে কেন লিখি

প্রথম আলোর নিয়মিত লেখক তাঁরা। কলাম লেখেন, বিশেষজ্ঞ মতামত দেন, ঘটনার নানা দিক নিয়ে বিশ্লেষণ করেন। এবার তাঁরাই বললেন, লেখালেখির জন্য প্রথম আলোই কেন তাঁদের সবচেয়ে পছন্দের জায়গা।

লেখার শক্তি পাই

মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান

প্রথম আলোয় আমার প্রথম লেখা ছাপা হয় ২০০২ সালের ৯ মে। দুই কারণে সেই লেখা বেনামে লিখেছিলাম। প্রথমত, বিষয়টি ছিল আমাদের পারিবারিক এবং দ্বিতীয়ত প্রথম আলোতে বিষয় ও লেখার গুণগত মান কতটা বিবেচ্য, সেটি দেখা। তখন প্রথম আলোয় কাউকে চিনতাম না। পরে বেশ কয়েক বছর ডেইলি স্টার–এ লিখেছি। এরই মধ্যে প্রয়াত সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের সঙ্গে পরিচয় হয়। আমি অবসরে যাওয়ার পর তিনি আমাকে প্রথম আলোয় লিখতে বেশ কয়েকবার অনুরোধ করেন। সেই থেকে প্রায় নিয়মিত লিখছি। 

আমি লিখি ব্যক্তিগত সামাজিক দায়বোধ থেকে। তাই লেখার জন্য প্রথম আলো বা অন্য কোনো পত্রিকা থেকে সম্মানী নিই না। তবে একটি শর্ত আছে। পূর্বালোচনা ছাড়া লেখার কোনো বক্তব্য পরিবর্তন করা যাবে না। প্রথম আলোতে এই সুযোগ অবারিত। 

একবার আমার একটি লেখা নিয়ে তিনটি মহল পত্রিকায় ফোন করে কড়া প্রতিক্রিয়া জানায়। প্রথম আলো থেকে আমাকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সামাল দিয়েছে। 

আমি জানি, নীতিনির্ধারকদের যাঁরা আমার লেখা পড়লে উপকৃত হতেন, তাঁরা কেউই পড়েন না। তবু লিখে যাচ্ছি। কারণ, দেশের ভেতর–বাইরের কতক অচেনা মানুষ ফোনে, ই–মেইলে বা মেসেঞ্জারে বলেন, ‘আমি অর্থনীতি বুঝি না, কিন্তু আপনার লেখা বুঝতে পারি। তাঁরা দোয়া করেন আমি যাতে দীর্ঘায়ু হই।’ তাঁদের প্রতিক্রিয়ায় লেখার শক্তি পাই।

লেখক, সাবেক সচিব ও অর্থনীতিবিদ

ভালোবাসা থেকে লেখার ইচ্ছা জাগে

আ ন ম মুনীরুজ্জামান

প্রতিদিন সকালে প্রথম দেখা হয় প্রথম আলোর সঙ্গে। প্রথম আলো পড়ার অভ্যাস আমার অনেক দিনের, সেই থেকেই ভালো লাগা। এই ভালো লাগা থেকেই এই পত্রিকায় লেখার ইচ্ছা জাগে। সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যাওয়ার পর সেই ইচ্ছাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা শুরু করি। প্রথম আলোর দেশে–বিদেশে বিপুল পাঠক রয়েছেন, বিশেষ করে অনলাইনে প্রতিদিন সারা বিশ্বের বাংলাভাষী পাঠকের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে এই পত্রিকা। যেকোনো লেখকই চান, তাঁর লেখা বিপুলসংখ্যক পাঠকের কাছে যাক। 

আমি সাধারণত ভূকৌশলগত ও নিরাপত্তার বিষয়ে লেখালিখি করি। এসব বিষয়ে প্রথম আলোর প্রকাশনীতে বিশেষ আগ্রহ আছে, কাজেই আমার লেখার যথার্থ স্থান হয়ে উঠে প্রথম আলো। লেখা প্রকাশের পর প্রথম আলোর উৎসাহী পাঠকদের মন্তব্য পেয়ে উদ্দীপ্ত হই, লেখার শক্তি পাই। ভবিষ্যতের সংবাদমাধ্যমকে নেতৃত্ব দেবে ডিজিটাল মাধ্যমে এবং প্রথম আলো যথার্থই সেদিকে এগোচ্ছে। কাজেই ইচ্ছে আছে, ভবিষ্যতে লেখালেখি ছাড়াও প্রথম আলোর মাধ্যমে এই বিষয়াদি নিয়ে পডকাস্ট ইত্যাদি করার। 

লেখক ও পাঠকের মধ্যে প্রথম আলো যে সেতুবন্ধ স্থাপন করেছে, সেটি ভবিষ্যতে আরও বহুমুখী হোক—সেটিই আশা করব। 

লেখক, মেজর জেনারেল (অব.), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সভাপতি

অনেকের কাছে পৌঁছানোর আশায়...

মো. তৌহিদ হোসেন

প্রথম আলো যাত্রা শুরুর এক সপ্তাহ আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সহকর্মীর কক্ষে সম্পাদক মতিউর রহমানের সঙ্গে পরিচয়। তাঁর সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছিল, এটি পড়ার মতো একটি পত্রিকা হতে পারে। সেই থেকে শুরু, এখনো আমি এই পত্রিকার নিয়মিত পাঠক।

আমার মনে হয়েছে, সীমাবদ্ধতার মধ্যেও প্রথম আলো নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতা বজায় রাখতে সচেষ্ট থেকেছে। তাই যদি লিখি, তাহলে প্রথম আলোই আমার স্বাভাবিক পছন্দ। পত্রিকাটির চেতনা ও সুরের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত ধারণা অনেকটা মিলে (সবই মিলতে হবে, এমন তো কথা নেই)। এটিও আমাকে প্রথম আলোতে লিখতে উদ্বুদ্ধ করেছে।

প্রথম আলোতে লেখার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ আছে। কোনো লেখক যখন কিছু লেখেন, তাঁর স্বাভাবিক চাওয়া থাকে, লেখাটি যেন অনেকে পড়েন। সমাজের বিভিন্ন স্তরের বিপুলসংখ্যক মানুষ প্রথম আলো পড়েন। তাঁরা সবাই হয়তো আমার লেখাটি পড়েন না। কিন্তু আশা থাকে, অনেকেই পড়বেন। আমার লেখার বক্তব্য, ধারণা অনেক মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে। 

ছোট্ট আরেকটি কারণও আছে। প্রথম আলোর সম্পাদকসহ অনেকের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে সম্পর্ক রয়েছে। এখানে যখন আমার লেখা ছাপা হয়, তখন নিজেকে তাঁদের একজন বলে মনে হয়। এই অনুভূতিটা আমার জন্য প্রীতিকর।

লেখক, সাবেক পররাষ্ট্রসচিব

বহু পাঠকের কাছে যাওয়ার মাধ্যম

আফসানা বেগম

শুধু ‘কেন লিখি’ ভাবতে গেলে বলতে হয়, হয়তোবা জীবনের অর্জিত অভিজ্ঞতার কথা কাউকে জানানোর জন্যই লিখি। আর সেই প্রকাশ যদি দেশের সবচেয়ে বেশি পাঠকের হাতে রাতারাতি উপস্থিত হয়, তাহলে? মাধ্যমটি প্রথম আলো। তবে সেই মাধ্যমে ‘কেন লিখি’ প্রশ্নের উত্তর কেবল এটুকুতেই শেষ হয় না। 

মতিউর রহমান, আমাদের মতি ভাইয়ের বহু বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল আজকের প্রথম আলো। পত্রিকাটিতে বিভাগ আর লেখার সুযোগ বাড়তে বাড়তে এমন হয়েছে, যেকোনো বিষয় বা মনোভাব তুলে ধরা যায়। কি কল্পকাহিনি, কি রূঢ় বাস্তবতা। সংশ্লিষ্ট সবার নিষ্ঠা ও মনোযোগ প্রথম আলোকে দিয়েছে অনন্য মাত্রা। একটি পত্রিকা এত বিপুল পাঠকের কেবল প্রতিদিনের পাঠে নয়, মনে স্থান করে নেবে—একদিন এই ভাবনা হয়তো অবাস্তব ছিল। কিন্তু প্রথম আলো তা করে দেখিয়েছে। 

একাধারে কাগজ ও অনলাইনের মাধ্যমে বহুসংখ্যক পাঠকের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ যেকোনো লেখকের জন্য আশীর্বাদ। অন্যদিকে দলমত–নির্বিশেষে বিচিত্র মনোভাব প্রকাশের সুযোগ থাকে বলে একদিকে যেমন লেখক হিসেবে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি, অন্যদিকে প্রথম আলো পাঠকের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করেছে জেনে তৃপ্তি পাই। তাই লেখার আহ্বানে বরাবর আনন্দিত হই। এ ছাড়া প্রথম আলো বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে লেখকদের যে সম্মান ও ভালোবাসা জানায়, তাতে আপ্লুত ও কৃতজ্ঞতা বোধ করি। 

লেখক, কথাসাহিত্যিক 

শিশুস্বাস্থ্য পরিচর্যার আলো

প্রণব কুমার চৌধুরী

সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত থাকার সময় ১৯৯০-৯১ সালে হাসপাতালে ভর্তি অপুষ্ট শিশুদের নিয়ে একটি সমীক্ষা প্রতিবেদন করেছিলাম। সেটি তখন একটি জাতীয় দৈনিকে ‘শিশুর কু-খাদ্য’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছিল। এতে শিশুর সঠিক খাবার ও খাওয়ানোর পদ্ধতি বিষয়ে মা-বাবা–অভিভাবকদের জন্য কিছু দিকনির্দেশনা ছিল। ছাপার অক্ষরে সচেতনতা তৈরির এই কার্যকর মাধ্য একসময় আমাকে শিশুস্বাস্থ্য বিষয়ে লেখালেখিতে আগ্রহী করে তোেল। এরপর থেকে প্রায় সব জাতীয় পত্রপত্রিকায় শিশুস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ে নিরলস লেখালেখি করে আসছি। 

প্রথম আলোর স্বাস্থ্য পাতার প্রথম সংখ্যা থেকেই আমি মোটামুটি নিজেকে জড়িয়ে েফলি। আমার ‘ভালো থাকুন’ শীর্ষক স্বাস্থ্য কলামে শিশু-যত্ন সর্ম্পকিত লেখা সাগ্রহে ও সানন্দে প্রকাশের সুযোগ করে দেওয়ায় আমি আরও বেশি উদ্বুদ্ধ। পাঠকপ্রিয়তার পাশাপাশি, শিশুর সুস্থতা-অসুস্থতা ও শিশু লালন-পালনের অনেক খুঁটিনাটি বিষয় পাঠককে জানাতে পেরে নিজে আনন্দ পাই। 

যেমন, প্রথম আলোতে প্রকাশিত ‘সিজারিয়ান বাচ্চা’ লেখাটা ওই দিন সারা দেশে সর্বাধিক পঠিত বিষয়ের তালিকায় স্থান করে নিয়েছিল। ‘শিশুখাদ্যে ভেজালের পরিণতি’ শীর্ষক লেখা প্রকাশের পর আমার বিরুদ্ধে মামলার হুমকি এসেছিল। কিন্তু প্রথম আলোর শক্তিশালী সাংবাদিকতা, সততা, নিরপেক্ষতা শিশুস্বাস্থ্যবিষয়ক লেখালেখির সুযোগ আমাকে আরও বেশি উৎসাহ জুগিয়েছে। 

 শিশু হলো সর্বজনীন ভালোবাসার উৎস। বড়দের জন্য যখন কেউ লেখেন, বড়রা সেই লেখা পড়ে স্বাস্থ্য পরামর্শ পান। কিন্তু মা-বাবা ছোটদের বিজ্ঞানসম্মত জীবনধারা পড়ে, সবকিছু আত্মস্থ করে তবেই আপন সন্তানের যত্ন-আত্তি নেন। সে কারণে শিশুস্বাস্থ্যবিষয়ক লেখালেখিতে দায়বদ্ধতা বেশি। 

দেশে শিশুস্বাস্থ্য–সেবার সামগ্রিক উন্নতিতে, শিশুস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও শিশু বিশ্ব গড়ার আন্দোলনে প্রথম আলোর রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। প্রথম আলো সত্যিকার অর্থে শিশু-স্বাস্থ্য পরিচর্যার আলো ফুটিয়ে চলেছে।

লেখক: সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

নারী স্বাস্থ্যে এভাবে পাশে থাকুক

শারমিন আব্বাসি

প্রথম আলো স্বাস্থ্য পাতায় একেবারেই সাধারণ মানুষের জন্য আমাদের লিখি। আমি নারী স্বাস্থ্যর নানা বিষয় নিয়ে লিখি, যা তাঁদের নানা ব্যক্তিগত সমস্যার সামাধান দেয়। সাধারণত নারীরা যেসব কথা গোপন রাখে, বলতে দ্বিধা–সংকোচ করে—সেসব কথাও আমি বলি। প্রথম আলো আমাদের লেখা ছেপে আমাদেরকে সাধারণ মানুষের মুখপাত্র করে তোলে। আমাদের সাহসী করে, উদ্যমী করে, ভালো কাজের উদ্দীপনা বাড়ায়। 

পাঠকের চাহিদা ও পছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে এখানে সমাধান তুলে ধরে প্রথম আলো। স্বাস্থ্য বিষয়ে বিজ্ঞানসম্মত সত্যকে তুলে ধরার চেষ্টা করে। যেকোনো বিশেষ দিন বা কোনো রোগ সম্পর্কে সচেতনতার মাসে বিশেষ লেখনীর মাধ্যমে আমরা মানুষের কাছে সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দিই। প্রথম আলো এই পাতার মাধ্যমে আমরা এমন অনেক বিষয়কে সামনে আনতে পেরেছি, যা সমাজের রোগব্যাধি নিয়ে অনেক কুসংস্কার দূর করতে সহায়তা করেছে। আমরা এখানে এমন অনেক বিষয় লিখতে পেরেছি যা হয়তো আগে কোনো পত্রিকায় ছাপেনি। স্ত্রীরোগের অনেক বিষয় বিশেষ করে বন্ধ্যত্বের সঙ্গে পুরুষ স্বাস্থ্যও জড়িত থাকতে পারে, সেটি আমরা মানুষকে জানিয়ে সচেতন ও চিকিৎসার আওতায় আনতে পেরেছি। আমার প্রত্যাশা, ভবিষ্যতেও এভাবেই নারী স্বাস্থ্যের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমরা যেন এভাবে সব শ্রেণির সব বয়সী নারী ও কিশোরীর পাশে থাকতে পারি। 

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হসপিটাল

প্রথম আলো না পেলে কঠিন হতো

বদরূল ইমাম

প্রথম আলো সত্য, নিরপেক্ষ সত্য ও সাহসী সত্য নির্দ্বিধায় প্রকাশ করে। এ জন্যই এই পত্রিকায় লিখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। পত্রিকাটির ব্যবস্থাপনায় কোনোরূপ লেজুড়বৃত্তির মনোভাব একটি নিরপেক্ষ ও স্বাধীন চিন্তাকে সরাসরি প্রকাশ করার কারণে মানুষের পছন্দের পত্রিকা হয়ে উঠেছে প্রথম আলো। 

আমি লেখায় মূলত দেশের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ে দেশীয় স্বার্থের প্রেক্ষাপটে আলোচনা–সমালোচনা করে থাকি। বৈজ্ঞানিক সত্যের ওপর প্রশাসনিক অযৌক্তিক মুনশিয়ানা যখন দেশের স্বার্থকে লঘু করে দেখে, তখন আমি তার বিরোধিতা করি। অনেক সময় প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তি আমার সমালোচনার লক্ষ্যবস্তু হয়ে থাকে। এরপরও কখনো প্রথম আলোর সম্পাদকীয় বিভাগ আমার লেখায় খবরদারি
করে না। 

একজন বিজ্ঞানী হিসেবে বৈজ্ঞানিক সত্যের ওপর আমার যে সার্বিক নির্ভরতা, তাকে তুলে ধরতে প্রথম আলো নির্ভেজাল সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। তাতে প্রশাসনের কর্তৃত্ববাদী মনোভাবকে অবজ্ঞা করা হয় বটে, কিন্তু দিন শেষে তা প্রশাসনের যুক্তিবাদী ব্যক্তিদের শক্তি জোগায়। জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার আলোকে আমি যেভাবে বিষয়গুলো তুলে ধরতে চাই, প্রথম আলোর মতো নিরপেক্ষ ও সাহসী প্ল্যাটফর্ম ছাড়া তা সত্যিই কঠিন হতো।

লেখক: অনারারি অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

মঙ্গলবারের জন্য তক্কে তক্কে থাকি

গওহার নঈম ওয়ারা

ঘটনাটি ২০১৭ সালের নভেম্বর হবে। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ‘ধর্ম অবমাননা’র গুজব তুলে রংপুর শহরের কাছেই এক হিন্দুপল্লি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। আগুন নিভে যাওয়ার পর পুড়ে যাওয়া ভিটায় মানুষ ফিরলে আমরা গিয়েছিলাম লেখার মালমসলা জোগাড় করতে। 

সেখানে ঘর বানানোর কাজে ব্যস্ত শ্রীমতী শাম্মা বালার সঙ্গে আলাপ হয়। এর আগে হিন্দু মেয়ের শাম্মা নাম শুনিনি। জানি না, তাঁর নাম শাম্মা, নাকি শ্যামা থেকে শাম্মা। সে প্রশ্ন তাঁকে করা হয়নি। কথা বলার সময় ইচ্ছা করেই প্রথম আলোর কথা বলিনি। কী করে শাম্মা যেন সেটি বুঝে ফেলেন। 

‘আপনের নামটা অন্য রকম কনে যেন দেকেচি। আমি হাসি।’ শাম্মা ধরে ফেলেন ‘প্রথম আলো?’ গল গল করে বলে চলেন, ‘আমি প্রতি মঙ্গলবারে রাখি, নকশার জন্য।’ 

শাম্মা এইচএসসি পাস করে বিএ ভর্তি হয়েছিলেন। বাবার বাড়ি থাকতে প্রতিদিন প্রথম আলো পড়তেন। তবে শ্বশুরবাড়িতে লেখাপড়ার তেমন চল নেই। তাতে কী? মানুষটি প্রতি মঙ্গলবার শাম্মার জন্য মনে করে প্রথম আলো আনেন। 

পোড়া ঘরের বেঞ্চির নিচে অর্ধপোড়া প্রথম আলো উঁকি দেয়। সাম্প্রদায়িক উৎপীড়ন নিয়ে শাম্মার ব্যাখ্যা শুনে মনে হলো, আহমদ ছফা
কথা বলছেন। আমি শাম্মার জন্যই লিখি, তক্কে তক্কে থাকি যেন মঙ্গলবারে ছাপা হয় আমার লেখা।


লেখক: গবেষক