প্রথম আলোয় আছি ভালোই

সবে ঢুকেছি বিজ্ঞাপন বিভাগের নির্বাহী হিসেবে। ব্যাংকের কাজ ছেড়ে সরাসরি সেলসে। অভিজ্ঞতাবিহীন আমার জন্য যা ছিল নতুন চ্যালেঞ্জ। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত আরাম রেখে যেখানে রোজ যেতে হয় ক্লায়েন্টের দরজায় দরজায়। কী গরম, কী রোদ, কী বৃষ্টি! বিরাম নেই একদম। এর ওপর নতুন কাজে মানিয়ে নেওয়া।

আট বছর পর খুব মনে পড়ছে প্রথম ভিজিটের একটি স্মৃতি। পূর্বনির্ধারিত শিডিউল অনুযায়ী দেখা করতে যাই চট্টগ্রামের একটি বড় প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তির সঙ্গে।

রিসিপশনে কার্ড দিয়ে খবর জানানো হলো তাঁকে। তিনি আমাকে একটু বসতে বললেন। অপেক্ষা করতে লাগলাম আমিও। অপেক্ষা, প্রতীক্ষায় পরিণত হলো। মাত্র তিন ঘণ্টা পর তিনি জানালেন, আজ আর দেখা করতে পারছেন না। অন্য আরেক দিন আসতে বলে দিলেন তাঁর ব্যক্তিগত সহকারীর মাধ্যমে।

মুহূর্তে লজ্জায়, অপমানে আমি অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম। ওখান থেকে বের হয়ে হাঁটতে শুরু করলাম। একটা সম্পূর্ণ নতুন অভিজ্ঞতা হলো আমার। এমন হতে পারে তা ছিল আমার ধারণাতীত। আগে শুনতাম, প্রথম আলোর নাম শুনলেই মানুষ ভয় পায়, সবখানে সদর্প যাওয়া যায়। ভাবতে লাগলাম, যা শুনেছি তা কী ভুল তবে! আর এত অপমানের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। মনে স্থির সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম, এ চাকরি আর করব না। বিষয়টি খুব বিষণ্ন করে ফেলল আমায়। অফিসে ফিরে চুপ করে বসে রইলাম। আমার কিছু হয়েছে কি না জিজ্ঞাসা করলেন বস। না–সূচক উত্তর দিয়ে আমি মনের সঙ্গে যুদ্ধ করছি। পরক্ষণেই ভাবনা এল, এত সহজে হাল ছাড়ব কেন? আর প্রথম আলোই তো বলছে ‘বদলে যাও, বদলে দাও’। সে মন্ত্রে আমিও উজ্জীবিত হয়ে শুরু করলাম নবোদ্যোমে।

এভাবেই ধীরে ধীরে আমি কাজের সঙ্গে দোস্তি করে ফেললাম। অভ্যস্ত হয়ে উঠলাম, নিজেকে আবিষ্কার করলাম প্রথম আলোর একজন সত্যিকার কর্মী হিসেবে। যে প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তি আমাকে তিন ঘণ্টা বসিয়ে রেখেছিলেন, তাঁর সঙ্গে এখন আমার চমৎকার সম্পর্ক। ছোটবড় সব রকম প্রতিষ্ঠানে যেতে পেরেছি, তাঁদের নানান রকম বিষয় অকপটে আমাকে বলেছেন, সম্পাদক মহোদয়ের সাহস ও প্রজ্ঞার প্রশংসা করেছেন। প্রথম আলোর নানান উদ্যোগের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলোকে যুক্ত করতে পেরেছি।

আর হ্যাঁ, যে জনশ্রুতি রয়েছে, প্রথম আলোকে মানুষ ভয় পায়, তা আসলে একটি দায়িত্বশীল-নিরপেক্ষ গণমাধ্যমের প্রতি সমীহ ও শ্রদ্ধা, ভয় নয়।
লেখক: উপব্যবস্থাপক, বিজ্ঞাপন, চট্টগ্রাম অফিস