কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বিত উদ্যোগ অর্জন করেছে গ্রাহক সন্তুষ্টি
ছবি: প্রথম আলো

‘হ্যালো মানডে, শিখতে চাই ...’ ছোট্ট একটি ধারণা। এই ধারণাকে কাজে লাগিয়ে গৃহীত সাপ্তাহিক কর্মসূচির কল্যাণে মাত্র এক বছরেই বদলে গেছে সোনালী ব্যাংকের চুয়াডাঙ্গা শাখা। পেয়েছে বড় সাফল্য। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বিত এই উদ্যোগ অর্জন করেছে গ্রাহক সন্তুষ্টি। পরিবেশসহ ব্যাংকিং খাতের প্রতিটি সূচকে ঘটেছে ইতিবাচক পরিবর্তন।

কর্মসূচির উদ্যোক্তা সোনালী ব্যাংক চুয়াডাঙ্গা শাখার ব্যবস্থাপক ও সহকারী মহাব্যবস্থাপক বশির আহমেদ। তিনি জানান, উন্নত দেশগুলোর অনেক দপ্তর সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে নিজেদের ভালো-মন্দ নিয়ে মুক্ত আলোচনা করে। সেই অনুযায়ী সমস্যা সমাধানে নানা উদ্যোগও নেন তাঁরা। পরীক্ষামূলকভাবে সেটিই সোনালী ব্যাংকের এই শাখায় চালু করা হয়। তবে রোববার গ্রাহকদের উপস্থিতি ও কাজের চাপ তুলনামূলক বেশি থাকে বলে সোমবারকে বেছে নেওয়া হয়েছে। উদ্যোগটির নাম দেওয়া হয় ‘হ্যালো মানডে, শিখতে চাই’। বশির আহমেদ বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠানকে একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠানে রূপ দেওয়া। ব্যক্তিজীবন ও প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তনের লক্ষ্যে প্রত্যেকের সেরা অভিজ্ঞতাকে একত্র করে সমৃদ্ধ আগামী নির্মাণের প্রত্যয় “হ্যালো মানডে, শিখতে চাই”। এতে অফিসের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশ নেন। আর অফিসপ্রধান তা বাস্তবায়ন করেন।’

সোনালী ব্যাংকের চুয়াডাঙ্গা শাখায় গিয়ে ইতিবাচক পরিবর্তন চোখে পড়ে। দৃষ্টিনন্দন টবে সারি করে রাখা পরিবেশবান্ধব গাছ, সেবাভিত্তিক সাইনবোর্ড, গ্রাহকদের বসার জায়গা, গ্রাহকদের সময় কাটানোর জন্য টেলিভিশন, পরিষ্কার টয়লেট, মাতৃদুগ্ধ কর্নার ও নামাজের জায়গা। ৭০ বছরের পুরোনো দেয়ালগুলোতে প্রাকৃতিক দৃশ্য। আর সবখানেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ছাপ।

শহরতলি দৌলাতদিয়ার ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন আল আজাদ ১৯৯৩ সাল থেকে সোনালী ব্যাংক চুয়াডাঙ্গা শাখার গ্রাহক। তিনি বলেন, ‘আর্থিক নিরাপত্তার কথা ভেবে প্রায় ৩০ বছর ধরে সোনালী ব্যাংকে লেনদেন করি। একসময় সোনালী ব্যাংক মানেই ছিল কাজের দীর্ঘসূত্রতা, একটি কাজের জন্য একাধিক টেবিলে দৌড়ঝাঁপ। এখন আর সেসব বালাই নেই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চালু হয়েছে ওয়ান–স্টপ সার্ভিস। বর্তমান সময়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্তরিক সেবায় সবাই খুশি।’ চুয়াডাঙ্গার বই ব্যবসায়ী হারুণ-অর-রশিদ জানান, ঋণপ্রক্রিয়া আগের চেয়ে সহজ হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রাহক জানান, অনেকটা অভিমানে দীর্ঘ ১৮ বছর তিনি সোনালী ব্যাংক থেকে দূরে ছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে সেবার মান ও গতি বৃদ্ধি পাওয়ায় আবারও ফিরে এসেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি সোমবার বিকেল ৪টা ১ মিনিটে সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিয়ে শিক্ষামূলক সভার আয়োজন করা হয়। এতে ব্যাংকের পদস্থ কর্মকর্তা ছাড়াও অভিজ্ঞ ব্যাংকার, অর্থনীতিবিদ ও শীর্ষ গ্রাহকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। এ সময় বিগত সপ্তাহের ভালো-মন্দ, ভুল-ত্রুটি নিয়ে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া হয়।

বশির আহমেদ জানান, এই কর্মসূচি কঠিন কাজকে সহজ করেছে। এ ছাড়া এই সভায় কর্মচারীদের উৎসাহ, নতুন কর্মচারীকে অভ্যর্থনা ও বিদায়ী কর্মচারীকে আনুষ্ঠানিক বিদায় দেওয়া হয়ে থাকে। সেরা কর্মীদের জন্য থাকে বিশেষ পুরস্কার। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, গত বছরের ১২ আগস্ট বশির আহমেদ ব্যবস্থাপক ও সহকারী মহাব্যবস্থাপক হিসেবে এই শাখায় যোগদান করেন। এরপর চাহিদা অনুযায়ী ব্যাংকের সার্বিক পরিবেশের উন্নয়নে নজর দেন।

এক প্রশ্নের জবাবে বশির আহমেদ জানান, গ্রাহকবান্ধব এই কর্মসূচি নেওয়ায় গত এক বছরে এই শাখায় কোয়ালিটি ডিপোজিট বেড়েছে ৩৬ দশমিক ৬ শতাংশ, কোয়ালিটি ঋণ বেড়েছে ৪৮ শতাংশ। দীর্ঘদিন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সরকারি চাকরিজীবীরা এখন সোনালী ব্যাংকের সেবা নিচ্ছেন, এটিএম বুথে সেবাগ্রহীতার সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। ২০২২ সালের বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা প্রথম দুই মাস অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই, ১০ মাস হাতে থাকতেই শতভাগ পূরণ হয়েছে।

সোনালী ব্যাংকের বর্তমান ও সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এই কর্মসূচিকে একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখছেন। ব্যাংকের অন্যান্য শাখায়ও ধারণাটি বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছেন তাঁরা। 

লেখক: প্রথম আলোর চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি