মুক্তিযুদ্ধ: এবার চাই নবজাগরণ

মুক্তিযুদ্ধের পর আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল সম্পদে অপ্রতুল একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ হিসেবে। কিন্তু নিন্দুকদের আশঙ্কা অসত্য প্রমাণ করে একের পর এক বাধা পেরিয়ে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। এই এগিয়ে যাওয়ার পথ রচিত হয়েছিল কিছু অভূতপূর্ব ঘটনা, অভিনব ভাবনা, ভবিষ্যৎমুখী পরিকল্পনা ও উদ্যোগে। আমরা ফিরে দেখছি বাংলাদেশের উজ্জ্বল সেসব মুহূর্ত।

আবুল মোমেন

স্বাধীন বাংলাদেশ দুই দশকের ধারাবাহিক সংগ্রামের ফসল। ভাষার অধিকার আদায়ে সূচিত আন্দোলন ক্রমে বাঙালির স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবিতে উপনীত হয়। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকায় মানুষের ক্ষোভ যেমন বেড়েছে, তেমনি আমাদের রাজনীতিও তা কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছিল। মানুষকে স্বাধীনতা এবং শোষণ-অপশাসন থেকে মুক্তির স্বপ্ন দেখাতে সক্ষম হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

ক্ষুব্ধ মানুষ সব অবমাননার প্রত্যুত্তর দিতে চেয়েছে সর্বাত্মক লড়াই করে প্রতিপক্ষকে পরাজিত করার মধ্য দিয়ে। পাকিস্তানি সামরিক কর্তা ও রাজনীতিবিদদের গোঁয়ার্তুমি ও ভ্রান্ত নীতি, ভারত ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির অনুকূল অবস্থান এবং আমাদের মুক্তিযুদ্ধকালীন নেতৃত্বের ভূমিকায় শেষ পর্যন্ত দেশ স্বাধীন হলো। যুদ্ধ, ধ্বংস, মৃত্যু, দেশান্তর বা অগণিত মানুষের বীরোচিত লড়াই ও ৩০ লাখ শহীদের কথা কখনো ভোলা যাবে না। এই বিপুল ত্যাগের মধ্য দিয়েই অর্জিত হয়েছে স্বাধীনতা।

স্বাধীনতার পরে স্বভাবতই দেশ পরিচালনার দায়িত্ব রাজনীতিকদের হাতে এসেছে। নেতৃত্ব অবশ্যই বঙ্গবন্ধুর হাতেই থাকল, আর তখন তিনি স্বাধীনতার রূপকার হিসেবে এক অবিস্মরণীয় ভাবমূর্তির অধিকারী। তাঁর নেতৃত্বে শাসনব্যবস্থা গুছিয়ে তোলা, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠন, নতুন রাষ্ট্রের অর্থনীতি ও উন্নয়নের অবকাঠামো নির্মাণ, শরণার্থী হিসেবে ভারতে যাওয়া মানুষদের পুনর্বাসন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মৈত্রীবন্ধন তৈরির মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ শুরু হয়েছিল ঠিকভাবেই। কিন্তু সংকটের ও করণীয়ের ব্যাপকতা এবং চ্যালেঞ্জ সামলে সব দিক বিবেচনায় নিয়ে সুদূরপ্রসারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ ছিল না। 

যেকোনো রকম যুদ্ধ ছিল বাঙালির জন্য সম্পূর্ণ নতুন অভিজ্ঞতা। স্মরণকালের ইতিহাসে যুদ্ধের কোনো অভিজ্ঞতা বা শিক্ষা তার ছিল না। প্রথম মহাযুদ্ধে কিছু বাঙালির অংশগ্রহণের কথা মাথায় রেখেও এ কথা বলা যাবে। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের রাজনীতির নতুন ভাবাবেগ হিসেবে যুক্ত হয়েছে, যে সমরনায়কদের পেলাম, তাঁরাও এ আবেগের চরিত্র হলেন। এই পরিবেশে অসংখ্য তরুণ যুদ্ধের পূর্ণ বা আংশিক বা নামমাত্র অভিজ্ঞতাকে ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি নির্মাণে পুঁজি করতে দ্বিধা করেনি। কিন্তু যুদ্ধের অভিজ্ঞতা তো কেবল বিজয়ের বা আত্মত্যাগের গৌরবগাথায় সীমাবদ্ধ নয়। এ তো মৃত্যু, ধ্বংস, নিষ্ঠুরতা, নীতিনৈতিকতার চূড়ান্ত বিপর্যয়, আক্রমণ, পলায়ন, আগ্রাসন, পশ্চাদপসরণ, যুগপৎ দুঃখ ও আনন্দের অভিজ্ঞতায় ঠাসা। যে তরুণেরা, মুক্তিযোদ্ধা তো অধিকাংশ তারাই ছিল, ঘরের নিরাপদ আশ্রয় ছেড়ে রণাঙ্গনে ছুটে গেছে, তাদের যুদ্ধান্তে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য কোনো সচেতন কর্মসূচির কথা কেউ ভাবেনি। রণাঙ্গন থেকে ঘরে ফেরা, অস্ত্রের সঙ্গ ছেড়ে ঘরোয়া জীবনকে সঙ্গী করা সহজ কাজ নয়। কেবল অস্ত্র সমর্পণের আনুষ্ঠানিকতায় যুদ্ধের অভিজ্ঞতা ও আবেগ মুছে ফেলার সুযোগ নেই। কিন্তু এই তরুণদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরা এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের বিশাল কর্মযজ্ঞে অংশ নেওয়ার শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার গুরুত্ব সংশ্লিষ্ট কেউই যেন উপলব্ধি করেননি। বরং মুক্তিযুদ্ধের গৌরব ধরে রাখার জন্য সরকারি ও সেনাবাহিনীর চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বাড়তি সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা করে এর অন্তর্নিহিত যে দেশপ্রেমের মহত্ত্ব ও মহৎ ত্যাগের গৌরব ছিল, তা–ও যেন ক্ষুণ্ন হলো। সেই থেকে মুক্তিযুদ্ধকে ব্যক্তিগত লাভজনক ব্যবহারের প্রক্রিয়া ও প্রয়াস আজ অবধি বন্ধ হয়নি। একে ঘিরে জাতির বিভাজন এবং সংঘাতের রাজনীতি ও সামাজিক অস্থিরতা আর থামেনি। যুদ্ধের বাস্তবতা কেবল জয়–পরাজয় বা হত্যা–জীবন রক্ষার মতো বিষয়েই শেষ হয় না, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যেমন জিগীষা, তেমনি জিঘাংসাও তৈরি হয়, যেমন দেশপ্রেমের তেমনি তীব্র বৈরিতা ও ঘৃণার বীজ অঙ্কুরিত হয়। তাই যুদ্ধ শেষে যেমন যুদ্ধাপরাধী বা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধীদের বিচার জরুরি, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ হলো সমাজে সমঝোতা ও মৈত্রীর পরিবেশ তৈরি। বঙ্গবন্ধু সে পথেই হাঁটতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তা অর্জনের জন্য যুদ্ধ–সংশ্লিষ্ট সব ইস্যু বিবেচনায় নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রমের অগ্রাধিকার নিশ্চিতে প্রশাসনের উদ্যোগ বা সহযোগিতা তেমন ছিল না, বঙ্গবন্ধু সময়ও পাননি।

কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ রাজনীতিতে ব্যবহৃত হতে থাকল, যা ছিল ঐক্যবদ্ধ জাতির বীরত্বের ফসল, তা হয়ে দাঁড়াল বিভাজনের রাজনীতিতে ব্যবহার্য অস্ত্র; যার মূল প্রণোদনা ছিল ত্যাগের, তা রূপ পেল ভোগের উপলক্ষের। আমাদের ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবময় অর্জনের এই পরিণতি নিয়ে আমরা কি ভাবব না?

যুদ্ধ, ধ্বংস, মৃত্যু, দেশান্তর বা অগণিত মানুষের বীরোচিত লড়াই ও ৩০ লাখ শহীদের কথা কখনো ভোলা যাবে না
ছবি: সংগৃহীত

২.

দেশের জন্মলগ্নের ইতিহাস থেকে আরও এক চলমান ভাবাবেগের বিষয় হলো বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং তার বীজ বাংলা ভাষা। যে ভাষার অধিকার নিয়ে একটি দেশের জন্ম, সেই বাংলা ভাষার চর্চা ও বিকাশ নিয়ে আন্তরিক উদ্যোগের অভাব প্রকট। গত শতকের তুলনায় বাস্তবতার অনেক পরিবর্তন হয়েছে সত্যি এবং ইংরেজির গুরুত্ব মেনেও বলা যায় বাংলা ভাষার চর্চা স্তিমিত বা বিপর্যস্ত হলে জাতীয় বিকাশ ব্যাহত হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার দাবি অনিবার্য হয়ে উঠেছিল এই ভাষাভিত্তিক সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য ও বৈশিষ্ট্য রক্ষার প্রয়োজনে। মার্কিন বা অস্ট্রেলীয়দের মতো আমরা এ ভূখণ্ডে বহিরাগত বা নবাগত নই, কিংবা ক্যারিবীয় বা অন্য কোনো অবিকশিত ভাষার সংস্কৃতির মানুষ নই যে বিশ্বায়নের মতো কোনো বাহ্য চাপে আমরা হারিয়ে ফেলব ভাষা–সংস্কৃতির ঐতিহ্য। এ মাটি এবং এখানকার হাজার বছরের চর্চা ও সৃজনের মাধ্যমেই আমরা বাঙালি। এ ভাষায় অনেক মহৎ মানবিক বাণী উচ্চারিত হয়েছে, যা বিশ্ব মানবতার ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করে। সেই ভাষা ও তার সংস্কৃতিকে আজ বৈষয়িক লাভের মোহে আমরা ভুলতে পারি না, উপেক্ষা করতে পারি না। কারণ, বৈষয়িক অর্জন বাহ্য, ব্যক্তির গণ্ডিতে বাঁধা এর ভূমিকা সাময়িক, আর শিল্পসংস্কৃতি হলো একটি জাতির অন্তরের সামগ্রী, যার প্রভাব চিরায়ত। অথচ আজ একুশে ফেব্রুয়ারি, বাংলা ভাষার প্রতি ভালোবাসা, মনীষীদের নামোচ্চারণে ভাবাবেগের প্রকাশ ঘটলেও অঙ্গীকারের দৃঢ়তা বা চর্চায় আন্তরিকতার প্রমাণ মেলে না। আমাদের শিক্ষায় বাংলা ভাষার চর্চা ও বাংলা সাহিত্য পাঠের গুরুত্ব নেই, আত্মপরিচয় নির্মাণ ও তার বিকাশের উপযোগী আকর্ষণীয় আয়োজন নেই। এভাবে ভবিষ্যতের বাঙালি সংস্কৃতিবোধহীন বেনিয়ায় পরিণত হলে অবাক হওয়ার থাকবে না। আমরা এ পরিণতির বিষয়ে উদাসীন হলেও মনে রাখা দরকার যে ১৮ কোটি মানুষের জাতি নিজ ঐতিহ্য–উত্তরাধিকার ছেড়ে কখনো পাশ্চাত্য বা আরবি বা এ দুইয়ের দো–আঁশলা সংস্কৃতিতে প্রত্যাবাসিত হবে না, হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু এই উদাসীনতার ফলে এমন সাংস্কৃতিক দৈন্য দেখা দেবে যে ভবিষ্যতের নাগরিকেরা সাংস্কৃতিক উদ্বাস্তুতে পরিণত হতে পারে। সেটা হবে জাতির জন্য সর্বনাশ। বুঝতে হবে যে কেবল প্রবৃদ্ধি বা উন্নয়ন দিয়ে স্থায়ী মর্যাদা অর্জন করা যায় না। আমাদের আর্থিক ও বৈষয়িক উন্নয়ন অবশ্যই চাই, কিন্তু তা নিজস্ব সংস্কৃতির সমৃদ্ধ ঐতিহ্যকে খাটো করে নয়। বৈষয়িকভাবে ধনী হতে গিয়ে মানবিক দারিদ্র্যের ফাঁদে পা যেন না দিই। উন্নতির নেশা অনেক সময় ব্যক্তিকে বস্তুর গণ্ডিতে বেঁধে ফেলে, বিষয়ের গভীরে যেতে দেয় না। আমরা মানবিক বা জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বিস্মৃত হচ্ছি, কেবল বস্তুগত উন্নয়নের হিসাব কষছি। 

৩.

এবার একটু থেমে অগ্রযাত্রার সার্বিক মূল্যায়ন জরুরি। গত ৫২ বছরে, বিশেষভাবে গত ১৫ বছরে দেশের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। সামাজিক সূচকেও অগ্রগতি লক্ষণীয়। বাংলাদেশ নতুন অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে চলেছে।

শিক্ষার হার অনেক বেড়েছে, প্রাথমিকে ভর্তি শতভাগ নিশ্চিত হয়েছে। মানুষের আয় ও আয়ু বেড়েছে। তবে মুক্তিযুদ্ধের সময় সমতার যে লক্ষ্য তৈরি হয়েছিল, সে আদর্শ থেকে বাস্তবতা বিপরীত রূপ নিচ্ছে। ধনী–দরিদ্রের ব্যবধান যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে দারিদ্র্যের হার। 

আবার শিক্ষা ও শিক্ষিতের হার বৃদ্ধি, সমাজে বাহ্যিক ধর্মকর্ম পালনের প্রবণতা বৃদ্ধি, আয়–সাচ্ছন্দ্য বৃদ্ধি এবং একটি সরকারের দীর্ঘ স্থিতিশীল শাসনের মধ্যেও সমাজে এক গভীর মানবিক সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে। মিথ্যাচার, প্রবঞ্চনা–প্রতারণা, দুর্নীতি, চারিত্রিক–নৈতিক চরম অবক্ষয়ে মানবিক সংকট চরমে পৌঁছেছে। এটি মূলত রাজনীতি ও সংস্কৃতির সংকট। উভয় ক্ষেত্রেই নৈতিক পুনরুজ্জীবন জরুরি। একে বিশ্বায়ন বা অর্থনৈতিক উন্নয়নের অজুহাতে বৈধতা দেওয়া যাবে না। নৈতিকতা বোধের অভাবে সমাজ ও রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানের অবক্ষয় অনিবার্য। এ কথাও মনে রাখতে হবে, উচ্চ নৈতিকতা সঠিক আত্মপরিচয় ও যথাযথ আত্মমর্যাদা বোধের সঙ্গে যুক্ত। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান থেকে ক্ষুদ্র সাংস্কৃতিক সংগঠন–প্রতিষ্ঠানও অবক্ষয়ের আঁচ থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। এ কেবল সুষ্ঠু নির্বাচন বা তার মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের বিষয় নয়। এর জন্য প্রয়োজন সমাজের বিভিন্ন পরিসরে সংলাপ ও আলোচনা এবং তা হওয়া প্রয়োজন খোলামেলা পরিবেশে। দুর্ভাগ্যের বিষয়, কার্যকর আলোচনা ও সংলাপের পরিবেশও আমরা হারাচ্ছি। সমাজে অসহিষ্ণুতা, অনুদারতা বাড়ছে, বাড়ছে কঠোর রক্ষণশীল উগ্রতা।

স্বাধীনতার অর্ধশতক পরে ব্যক্তিনাগরিক একধরনের স্বাধীনতার সংকটের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে পড়ছে। নাগরিকদের সংঘবদ্ধ সক্রিয় উদ্যোগের মাধ্যমেই এই বদ্ধ পরিবেশ থেকে মুক্তির কাজ শুরু হতে পারে। রাজনীতি আপাতত ক্ষমতার যূপকাষ্ঠে মাথা পেতে দিক, কিন্তু সমাজের মস্তিষ্ক যেন সক্রিয় হয়ে আলো জ্বালায় শিক্ষা ও সংস্কৃতির অঙ্গনে, যা আলোকিত করবে রাজনৈতিক অঙ্গনকেও। একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে একটি জাতির জাগরণ ঘটিয়ে স্বাধীন দেশের যাত্রার সূচনা করেছিল। আজ একই পথে সংস্কৃতির প্রাণ প্রতিষ্ঠা ও রাজনীতির চরিত্র নির্মাণের কাজের শুভারম্ভ ঘটাতে হবে জাতির নবজাগরণ বা রেনেসাঁর জন্য।


আবুল মোমেন: কবি, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক