‘মন চাইলে করলাম, না চাইলে নাই’

সুইটি বেগম

সুইটি বেগম বলছিলেন, ‘এইটা হইল স্বাধীন কাজ। মন চাইলে করলাম, না চাইলে নাই।’ তাঁর সঙ্গে কথা হচ্ছিল খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে। মাঝারি আকারের এক বান্ডিল সংবাদপত্র দুই হাতে আঁকড়ে ধরে হাঁটছিলেন ফুটপাত ধরে।

সুইটি বেগমের বাঁধা গ্রাহক খুব বেশি নেই। তিনি মূলত খিলগাঁও ও আশপাশের এলাকায় ঘুরে ঘুরে সংবাদপত্র বিক্রি করেন। করোনার আগে এই মহল্লার কিছু দোকান ও বাসাবাড়ি মিলিয়ে প্রথম আলোর ৫০টি বাঁধা গ্রাহক ছিল তাঁর। এখন কমে ২০টিতে নেমেছে। হেঁটে হেঁটে চলতে হয়, তার ওপর কাগজের বান্ডিলের ওজন। একটানা খুব বেশি ঘুরতে পারেন না।

প্রতিদিন কাকভোরে উঠে তিনি হকার্স সমিতির নির্ধারিত পরিবেশকের কাছ থেকে প্রায় তিন শ কাগজ নিয়ে ফেরি করতে পথে নামেন। বাঁধা গ্রাহকদের কাছে কাগজ পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি খুচরা বিক্রির জন্য ঘুরতে থাকেন মহল্লার এপথে–ওপথে। এই করে দুপুর ১২টা বেজে গেলে বেচাকেনা বন্ধ করে ঘরের পথে পা বাড়ান।

সুইটি বেগমের গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে। তিনি বললেন, ১৩ বছর ধরে সংবাদপত্র বিক্রির ব্যবসা করছেন। আগে বাসাবাড়িতে ঠিকা গৃহকর্মীর কাজ করতেন। একেক বাড়িতে একেক রকমের কাজ করতে হতো। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত প্রায় নয়টা পর্যন্ত কাজ করতেন। তাতে পরিশ্রম হতো প্রচণ্ড আর অবসরও মিলত না। ছুটিছাটাও ছিল না। তার ওপর পরের বাড়িতে কাজ করে কাউকে সন্তুষ্ট করা যেত না। এমনই অভিজ্ঞতা হয়েছিল তাঁর।

খিলগাঁও পুলিশ ফাঁড়ির ঢাল এলাকায় থাকেন সুইটি বেগম। স্বামী রিকশা চালান। স্বামীর আয় মন্দ নয়, তবে তাঁর একটু আলসে স্বভাব। একদিন রিকশা নিয়ে বের হন তো আরেক দিন নিষ্কর্মা বসে থাকেন। সে কারণেই সংসারে একটু বাড়তি আয়ের জন্য সুইটিকে কাজে যেতে হয়। গৃহকর্মীর কাজে সুবিধা হচ্ছিল না। কিছুদিন করার পর ছেড়ে দিয়ে সংবাদপত্র বিক্রি শুরু করেন।

করোনার আগে অর্থাৎ ২০২০ সাল পর্যন্ত ভালোই উপার্জন হয়েছে সুইটি বেগমের। প্রতিদিন পাঁচ শর মতো কাগজ বিক্রি করতেন। করোনার পরে বিক্রি কমে এখন আড়াই শ থেকে তিন শ পর্যন্ত হয়। কোনো দিন আরও কম।