আলো হয়ে আছে হৃদয়পুর
প্রথম আলোর চরণধ্বনি উঠল বেজে আমাদের অন্তরে;
সু্ন্দরের রূপকার কাইয়ুম চৌধুরীর তুলির ছোঁয়ায়
আলোর নাচন ছড়িয়ে পড়ে পাতায় পাতায়।
প্রথম রাতে ছাপাখানায় মেলা রাতে মতিউর রহমান,
লতিফুর রহমান, কাইয়ুম চৌধুরী, অশোক কর্মকার—
হাতে সদ্য ছাপা হওয়া প্রথম দিনের সূর্য,
আঁখি মেলে তোমার আলো প্রথম আমার চোখ জুড়াল...
মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, তরবারির মতো ঋজু, আলোকস্তম্ভের মতো খাড়া,
বলতেন, আমাকে একটা অফিস দিন এখানে।
আনিসুজ্জামান আসতেন তাঁর ঢোলা পায়জামা আর
পাঞ্জাবির বুক পকেটে ঝরনা কলম নিয়ে,
কফির মগে চামচ নাড়তে নাড়তে প্রুফ দেখছেন উবু হয়ে।
হাসান আজিজুল হক আসেন রাঢ়বাংলার লালমাটি
খদ্দরের পাঞ্জাবিতে মেখে নিয়ে,
সৈয়দ শামসুল হক জিনসের শার্ট কর্ডের ট্রাউজারে চৌকস;
শামসুর রাহমানের কালো মোটা ফ্রেমের আড়ালে
জল টইটম্বুর চোখ দুটোয় শিশুর সারল্য; বসে আছেন
আল মাহমুদের সবুজ পাঞ্জাবির পাশে, ঈদসংখ্যার
প্রীতি-আড্ডায়। পাশেই জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী,
সৈয়দ আবুল মকসুদ, রুবী রহমান...
এবিএম মূসা নিয়মিত আসেন সিএ ভবনে,
যেন বায়োস্কোপে দেখাচ্ছেন পঞ্চাশের ঢাকা,
আতাউস সামাদের দীর্ঘ ফোন সামলাচ্ছেন সোহরাব হাসান।
সুবর্ণা, আফজাল, শমী, বিপাশাকে নিয়ে আড্ডারত সাজ্জাদ শরিফ;
মাদককে না বলো, গিটারে সুর তুলে অস্তাচলে মিশে যান আইয়ুব বাচ্চু।
লতিফ সিদ্দিকীর স্থির দেহ কাফনে ঢাকা, আসে কারওয়ান বাজারে,
মিজানুর রহমান খানের সব্যসাচী কলম থেমে যায়,
দীর্ঘদেহী অরুণ বসুর স্মৃতি নিয়ে কলকাতায় বিদায় নেন শঙ্খ ঘোষ।
ঢেউয়ের পর ঢেউয়ের মতো আসে মামলা, ক্ষমতার চোখ রক্তিমতর;
সুফিয়া কামাল থেকে জাহানারা ইমাম; সাহসের মায়েরা
অভয়ের আঁচলে যেন মুছে দেবেন শঙ্কার স্বেদটুকু;
কোটি পাঠক সাহসের দীপ হয়ে জ্বলে টেকনাফে, রূপসায়, নিউইয়র্ক, লন্ডনে।
বন্ধুসভা ত্রাণ নিয়ে ঠেলে চলে জয়নুলের গরুগাড়ি কুড়িগ্রাম চরে।
এক মাদকাসক্ত পুত্রের মা আসতেন ট্রাস্টের পরামর্শসভায়।
ছেলে তাঁর সুস্থ আজ, মা প্রকাশ্যে বলেন, আমি দোয়া করি,
প্রথম আলোকে আল্লাহ যেন বেহেশত দেয়।
যখন ওই মায়ের দোয়ার কথা মনে পড়ে, ভাবি,
কোথায় স্বর্গ, কোথায় নরক, খুব কি বেশি দূর;
মানুষের ভালোবাসা ভরা পঁচিশের রজতশুভ্রতায়
অসামান্য আলো হয়ে আছে আমাদের সামান্য হৃদয়পুর।