সাদা কাগজ রাঙিয়ে তুলল শিশুরা, জিতল পুরস্কার

প্রতিযোগিতার ছবি বাছাই চলছে
ছবি: খালেদ সরকার

বাংলা একাডেমির প্রবেশমুখ থেকে শুরু করে আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনের প্রবেশমুখ পর্যন্ত দীর্ঘ পথে সারি বেঁধে বসে আঁকছিল শিশুরা। সাদা কাগজে রঙের ছোঁয়ায় পাঠক উৎসব রাঙিয়ে তুলেছিল তারা। প্রথম আলোর ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দিনব্যাপী পাঠক উৎসবের সূচনা হয় শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে। শিশুদের তুলিতে বর্ণিল হয়ে ওঠে প্রথম আলোর পাঠক উৎসব।

এ যেন ছিল অভিভাবকদের প্রতিযোগিতা আর শিশুদের উৎসব। সকাল সকাল বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে এসে হাজির হয় প্রায় হাজারখানেক শিশু ও তাদের সঙ্গে দুই-তিনজন করে অভিভাবক। নওগাঁ থেকে এসেছিলেন পল্লিবিদ্যুতের কর্মী মো. কামরুজ্জামান বিপ্লব। সদ্য স্কুলজীবন শুরু করেছে তাঁর মেয়ে বিভা। বাবা–ই ওর আঁকার মাস্টার। বাবার হাত ধরে নওগাঁ থেকে সে এসেছে পাঠক উৎসবের ছবি আঁকার প্রতিযোগিতায়।

জমে উঠেছে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা
ছবি: খালেদ সরকার

ক্যানভাসে মন ডুবিয়ে আঁকছিল তিন বছর বয়সী শিশু থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। কিন্তু তাদের কারও কারও তুলির আঁচড় যেন পেশাদার শিল্পীর মতোই। রাজধানীর নামকরা সব স্কুলের শিক্ষার্থীদের অনেকেই এ আয়োজনে আঁকতে বসেছিল। কথা হয় রুমা নামের এক গৃহিণীর সঙ্গে। স্বামী সেলুনকর্মী। দুই মেয়ে শারমিন ও সানজিদা পড়ে কামরাঙ্গীরচরের ওয়াজউদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ে যথাক্রমে নবম ও দশম শ্রেণিতে। শারমিন বলতে ও শুনতে পারে না। কিন্তু তার তুলি অনেক কথা বলছিল। রুমার অনুযোগ, বিশেষভাবে সক্ষম শিশুদের জন্য একটি আলাদা বিভাগ করা যেত এই প্রতিযোগিতায়।

প্রতিযোগিতার অন্যতম বিচারক শিল্পী সৈয়দ আবুল বারক আলভিও বলেন, আরেকটি বিভাগ থাকলে বিচারকাজ করতে আরেকটু সুবিধা হতো। তিনি বলেন, প্রতিবার শিশুদের প্রতিযোগিতার ছবি বাছাইয়ে যুক্ত থাকি। বেশ আনন্দ নিয়ে তাদের ছবি দেখি। এসব শিশু নানা জায়গায় শেখে। কখনো শিক্ষক, কখনো মা-বাবার নির্দেশনা অনুসরণ করে। একটা সময় এরা যদি নিজে থেকে আঁকতে শুরু করে, তারা ভালো করবে।

যাদের ছবি দেখলেন, তাদের ভেতর আবুল বারক আলভী বা রফিকুন নবীদের মতো শিল্পী হওয়ার সম্ভাবনা কতটা? জানতে চাইলে আবুল বারক আলভী বলেন, এদের ভেতর আরও বড় শিল্পী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রতিযোগিতায় অন্যতম বিচারক ছিলেন আতিয়া ইসলাম অ্যানি। বাছাইয়ের সময় একটি ছবি হাতে অন্য বিচারকদের বলছিলেন, এটি ওয়াশের কাজ, এটি করতে বেশ সময় লেগেছে। ছবিটিকে মনোনয়নে রাখা উচিত। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে শিশুদের আঁকা দেখে আসছি। আজও শিশুদের ছবি বাছাই করতে খুব ভালো লাগল। বয়সের সঙ্গে অঙ্কনশৈলী মিলিয়ে আমরা প্রতিযোগিতার ছবি বাছাইয়ের চেষ্টা করেছি।’

ছবি আঁকার প্রতিযোগিতার বিচারক হিসেবে আরও ছিলেন বরেণ্য শিল্পী রফিকুন নবী, আবদুল মান্নান ও অশোক কর্মকার। তাঁরা জানান, সংখ্যা ও গুণের বিচারে এত ছবি থেকে মাত্র ছয়টি ছবি বাছাই করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে তাঁদের। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অভিভাবকদের উদ্দেশে শিল্পী রফিকুন নবী বলেন, ‌‘শিশুদের হাতে রং–তুলি তুলে দিয়েছেন আপনারা, এটা একটা বড় ব্যাপার। যাদের হাতে রং–তুলি থাকবে, তারা প্রকৃতি চিনতে শিখবে রং চিনতে শিখবে। পাশাপাশি নিজেদের ভুলগুলো ধরতে শিখবে।

এভাবেই শিশুরা নিজেদের গড়ে তুলতে শেখে। যার হাতে রং–তুলি থাকবে, সে ভালো মানুষ হয়ে উঠবে। যারা ছবি আঁকে, গান গায়, তারা কখনো খারাপ মানুষ হতে পারে না। আজকের দিনটি শিশুদের সারা জীবন মনে থাকবে যে তারা প্রথম আলোর ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এসেছিল, অনেকের সঙ্গে বসে ছবি এঁকেছিল।’

ক গ্রুপে ছিল তিন বছর বয়স থেকে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। এই গ্রুপে প্রথম হয়েছে মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সুহাইল হোসেন ইলান, দ্বিতীয় হয়েছে স্কলাস্টিকার কেজি টুর শিক্ষার্থী অর্ঘ্য চক্রবর্তী এবং তৃতীয় হয়েছে মতিঝিল কলোনি স্কুলের প্লে গ্রুপের শিক্ষার্থী জাসিয়া বিনতে জসীম।

খ গ্রুপে প্রথম হয়েছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী অর্নিলা ভৌমিক, দ্বিতীয় হয়েছে আকিজ ফাউন্ডেশন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী আনিশা সান্তনি এবং তৃতীয় হয়েছে নারায়ণগঞ্জ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মায়মুনা চৌধুরী ফাইজা।

ছবি আঁকার প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া শিশুদের সবাই পেয়েছে অভিনন্দনপত্র। ক ও খ গ্রুপে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানজয়ী ছয় প্রতিযোগী পেয়েছে যথাক্রমে ১০ হাজার, ৬ হাজার ও ৫ হাজার টাকার বই, সনদ ও আঁকার সরঞ্জাম। শিশুদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন বিচারক শিল্পীরা।