‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না…’

প্রথম আলোর বয়স মাত্র ২৫ বছর, কিন্তু এর অর্জন অনন্য। প্রথম আলো তার স্বপ্নের পথে এগোতে এগোতে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে অভূতপূর্ব কিছু মাইলফলক স্থাপন করেছে। সাহসী সাংবাদিকতা, উদ্ভাবনী পরিকল্পনা, দেশ ও বিদেশের অগ্রগণ্য মানুষের সম্পৃক্ততা ছিল এর শক্তি। প্রথম আলোর ২৫ বছরের নির্বাচিত ও সংক্ষেপিত বিষয়বস্তু থেকে পাওয়া যাবে এর স্বতন্ত্র পথরেখার নিশানা।

জাহালম আদালতে হাজির ছিলেন
ছবি: প্রথম আলো

টাঙ্গাইলের নিরীহ পাটকলশ্রমিক জাহালমের কারাভোগ নিয়ে প্রথম আলোয় ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ‘৩৩ মামলায় “ভুল” আসামি জেলে: “স্যার, আমি জাহালম, সালেক না…”’ শীর্ষক এ প্রতিবেদন আমলে নিয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে হাইকোর্ট দুদক চেয়ারম্যানের প্রতিনিধিসহ চারজনকে তলব করেন। এরপর সব মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে জাহালমকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

জাহালমের কারাভোগের জন্য যাঁরা দায়ী, তাঁদের খুঁজে বের করতেও নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। আদালতের আদেশে ১ হাজার ৯২ দিন পর কাশিমপুর কারাগার থেকে ছাড়া পান জাহালম। এরপর সেদিন মধ্যরাতে ছাড়া পেয়ে জাহালম সোজা চলে যান মায়ের কাছে। টাঙ্গাইলে মা মনোয়ারা সেদিন প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘আমার সোনার ব্যাটা বিনা দোষে তিন তিনটা বছর জেল খাটল। আমার সোনার ব্যাটা আজ বাড়ি ফিরল।’

জাহালম জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর হয়ে ওঠেন পরিচিত মুখ। পরে দুদকের ১১ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। দুদকের তদন্তে উঠে আসে, তদন্ত কর্মকর্তাদের ভুলেই জাহালমকে জেল খাটতে হয়। মামলার তদন্তপ্রক্রিয়ায় থাকা অনুসন্ধান কর্মকর্তা, তদন্ত কর্মকর্তা ও তদারক কর্মকর্তা—সবাই ভুল করেছিলেন। দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংক কর্মকর্তারা নিজেদের বাঁচাতে যেকোনো ব্যক্তিকে যে আবু সালেক হিসেবে শনাক্ত করতে পারেন, তা দুদকের কর্মকর্তারা ভেবেই দেখেননি। দুদকের ১২ কর্মকর্তা মামলাগুলো তদন্ত করলেও একজন কর্মকর্তাও জাহালমের বাড়ি যাননি। জাহালমকে ১৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে বলা হয়, দুদকের আরও সতর্কতার সঙ্গে তদন্ত করা উচিত।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, গত বছরের সেপ্টেম্বরে ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষে জাহালমকে পাঁচ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করা হয়। জাহালম প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাকরি করতাম নরসিংদীর ঘোড়াশালে বাংলাদেশ জুট মিলে। দুদকের ভুলে বিনা অপরাধে আমাকে তিন বছর জেল খাটতে হয়। কোনো নিরীহ ব্যক্তিকে যেন মামলায় জড়ানো না হয়। যত দিন বেঁচে থাকব, এ কথাটি আমি বলে যাব…।’

প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০১৯