প্রথম আলোর ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত কর্মী উৎসবের শুরু হয় জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে। এ সময় অতিথিদের সঙ্গে প্রথম আলোর কর্মীরা দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীত গান। গতকাল রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে
ছবি: সাজিদ হোসেন

শুরু থেকেই প্রথম আলোর লক্ষ্য ছিল স্বাধীন সাংবাদিকতা। এই যাত্রাপথ সহজ ছিল না। অনেক বাধা এসেছে। সত্য প্রকাশ কোনো সরকার মেনে নিতে পারেনি। সত্য প্রকাশের শক্তিতে প্রথম আলো টিকে আছে, টিকে থাকবে। প্রথম আলো সত্য প্রকাশ করে যাবে।

দেশের শীর্ষ দৈনিক প্রথম আলোর ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত কর্মী উৎসবে প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা এই প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। গতকাল রোববার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে কর্মীদের জন্য আয়োজন করা হয় এই উৎসবের। প্রথম আলোর ঢাকা কার্যালয়ের পাশাপাশি সারা দেশের কর্মীরা এই উৎসবে অংশ নেন।

সকাল ১০টার আগেই ঢাকা ও ঢাকার বাইরের কর্মীরা উৎসবস্থলে জড়ো হন। নারী সহকর্মীরা পরেন অফিস থেকে উপহার হিসেবে দেওয়া শাড়ি আর পুরুষ সহকর্মীরা টি-শার্ট। হাসি, আড্ডা, গল্পে জমে ওঠে কর্মীদের মিলনমেলা। করোনার পর প্রথমবারের মতো সব কর্মী একসঙ্গে হওয়ায় উচ্ছ্বাস ছিল বেশি।

প্রথম আলোর কর্মীরাই শক্তি। তাঁরা আছেন বলেই প্রথম আলো আজকের অবস্থানে আসতে পেরেছে।ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি শাহাদৎ হোসেন বলেন, প্রথম আলো সততার সঙ্গে পথচলা শেখাচ্ছে।
রোজিনা ইসলাম, প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি
অনুষ্ঠান উপভোগ করছেন অতিথি ও প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ কর্মীরা
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

প্রথম আলোর কর্মীদের সমবেত জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে সকাল সাড়ে ১০টায় অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানস্থলের প্রবেশমুখে আঙুলের ছাপ দিয়ে ঢুকতে হয় কর্মীদের। এই ছাপ দিয়ে তৈরি ‘প্রথম আলো’ লেখা ভেসে ওঠে বড় পর্দায়। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক প্রথম আলোর ফিচার সম্পাদক সুমনা শারমীন সবাইকে তিন দফা করতালি দিতে বলেন। প্রথম দফা বাংলাদেশের জন্য, দ্বিতীয় দফা প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য ও তৃতীয় দফা প্রথম আলোর ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে।

প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ বলেন, গত ২৪ বছরে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে প্রথম আলো আজকের অবস্থানে এসেছে। সত্য সংবাদ প্রকাশে নানা বাধা আসে। সংকুচিত পরিবেশে কাজ করতে হয়। তবু স্বাধীন ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করে যেতে হবে। সত্য প্রকাশই পাঠকের অকৃত্রিম ভালোবাসার উৎস।

সুমনা শারমীন স্মরণ করেন ট্রান্সকম গ্রুপের প্রয়াত চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের কথা। তিনি বলেন, লতিফুর রহমান প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে সবার আগে আসতেন, সবার পরে যেতেন।

অনুষ্ঠানে প্রথম আলোকে নিয়ে নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করেন চারজন বিশেষ অতিথি শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল কাদীর, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। তাঁরা প্রত্যাশা করেন, প্রথম আলো ক্ষমতার কাছে মাথা নত করবে না।

প্রথম আলোর অনুষ্ঠানে আসা অতিথিরা মঞ্চে
ছবি: প্রথম আলো

প্রথম আলোর শুরু থেকে সঙ্গে ছিলেন ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম। গতকাল উৎসবেও তিনি উপস্থিত ছিলেন। উৎসবে কর্মীদের অংশগ্রহণে একাধিক মজার খেলার আয়োজন করা হয়।

বিভাগভিত্তিক প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন বিভাগ ছয়টি দলে ভাগ হয়ে অংশ নেয়। পাঠকদের হৃদয়ে আলো জ্বালাতেই প্রথম আলো কাজ করছে বলে জানান প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক। তিনি বলেন, প্রথম আলো বাংলাদেশের মানুষের জয়ের জন্য কাজ করছে। নিজেদের কাজ ঠিকমতো করতে পারলেই দেশ গড়া সম্ভব হবে।

অনুষ্ঠান চলার সময়েও প্রথম আলো অনলাইনের কাজ চলে
ছবি: প্রথম আলো

অনুষ্ঠানে প্রথম আলোর ঢাকা ও ঢাকার বাইরের কয়েকজন কর্মী তাঁদের অনুভূতি প্রকাশ করেন। প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি রোজিনা ইসলাম বলেন, প্রথম আলোর কর্মীরাই শক্তি। তাঁরা আছেন বলেই প্রথম আলো আজকের অবস্থানে আসতে পেরেছে।ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি শাহাদৎ হোসেন বলেন, প্রথম আলো সততার সঙ্গে পথচলা শেখাচ্ছে।

অনুষ্ঠানের শেষ ভাগে বক্তব্য দেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। তিনি বলেন, গত ২৪ বছরে প্রথম আলোর যাত্রা সহজ ছিল না। বাধাবিপত্তি পেরিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে প্রথম আলো। সৎ আর স্বাধীন সাংবাদিকতা অব্যাহত রাখবে প্রথম আলো। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা, গভীর বিশ্লেষণ, আরও মানবিক ও বিজয়ের গল্প বলতে হবে। মানুষকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণামূলক সাংবাদিকতা করতে হবে।

প্রথম আলোর অনুষ্ঠানে আসা কর্মীরা একই রঙের পোশাক পরেছিলেন
ছবি: প্রথম আলো

সংবাদপত্রের কাছে পাঠকের চাওয়া বদলে যাচ্ছে বলে মনে করেন মতিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘নতুন সম্ভাবনা দেখছি অনলাইন-ডিজিটাল জগৎ। এই জগতে আমরা আছি এখন। এখানে আমাদের আরও বড় হতে হবে। সাংবাদিকতায় নতুন নতুন বিষয় ও কৌশল শিখতে হবে। নতুন চিন্তা, নতুন কৌশল ও যোগ্যতা অর্জন করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে কর্মীদের অংশগ্রহণে ছিল একাধিক গানের পরিবেশনা। সেরা কর্মী, কুইজ ও সহকর্মীদের লেখা প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের পুরস্কার বিতরণ করা হয়। ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’ গানের মধ্য দিয়ে শেষ হয় উৎসব।