হল–মার্কের ২৭৩১ কোটি টাকার কারসাজি

প্রথম আলো ২৫ বছর ধরে অসংখ্য অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ছেপেছে। পেয়েছে অগণিত পাঠকের অকুণ্ঠ প্রশংসা। এর অনেক প্রতিবেদন দুর্নীতির স্বরূপ উন্মোচন করেছে। আবার মানুষের জীবন বদলে দিয়েছে কোনো কোনোটি। এমন একটি প্রতিবেদনের চুম্বক অংশ তুলে আনা হলো এখানে।

স্বল্প পরিচিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী হল–মার্ক গ্রুপ সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা (শেরাটন হোটেল) শাখা থেকে নানা কারসাজি করে মোট ২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা বের করে নিয়ে গেছে। এই শাখা থেকে আরও কয়েকটি কোম্পানি মিলে প্রায় একই প্রক্রিয়ায় ৩ হাজার ৫৫০ কোটি টাকার ঋণ দায় তৈরি করেছে। 

সোনালী ব্যাংকের নিজস্ব নিরীক্ষা ও পরিদর্শন প্রতিবেদনে এসব তথ্য বের হয়ে এসেছে। প্রতিবেদনে ব্যাংকের শাখার ব্যবস্থাপক ও সহকারী শাখা ব্যবস্থাপকের পাশাপাশি প্রধান কার্যালয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক (জিএম), উপমহাব্যবস্থাপক ও শাখা নিয়ন্ত্রক কার্যালয়কে এর জন্য দায়ী করা হয়েছে। 

গত ২৪ মে প্রথম আলোয় সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখা থেকে অখ্যাত হল–মার্ক গ্রুপের দুই হাজার কোটি টাকা বের করে নেওয়ার বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তখনই জানা গিয়েছিল, হল–মার্কের অর্থ বের করে নেওয়ার ঘটনাটি ঘটেছে সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদনেই। কারণ, ওই শাখায় গত মার্চ মাসে আমানতের পরিমাণ ছিল মাত্র ৬০৯ কোটি, আর এপ্রিলে ছিল ৬৫৬ কোটি টাকা। কিন্তু হল–মার্ককেই দেওয়া হয় এর প্রায় পাঁচ গুণ বেশি অর্থ। অর্থাৎ অন্য শাখা থেকে এনে প্রধান কার্যালয়কে এই অর্থের জোগান দিতে হয়েছে। এ কাজ ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অনুমোদন ছাড়া কোনোভাবেই হওয়ার সুযোগ নেই।

সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখা থেকে যখন হল–মার্ক টাকা বের করে নিচ্ছিল, তখন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ছিলেন হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, ‘যখন আমি এই ঘটনা জেনেছি, ব্যবস্থা নিয়েছি। পরিচালনা পর্ষদকে জানিয়েছি।’ তাঁর দাবি, যা হয়েছে তাঁর অজ্ঞাতে হয়েছে।

১১ বছর পার হলেও সোনালী ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির মূল মামলায় অভিযুক্ত হল-মার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদসহ অন্যদের বিচারকাজ এখনো শেষ হয়নি। মামলাগুলো ঢাকার আদালতে বিচারাধীন। এদিকে সম্পদের হিসাব দাখিল না করায় দুদকের করা মামলায় হল-মার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলামকে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। 

প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০১২