সন্‌জীদা খাতুন: সাংস্কৃতিক স্বাধিকার অর্জনে সামনে

জাতি হিসেবে আমাদের যে পরিচয় তৈরি হয়েছে, তার পেছনে আছে বহু মানুষের অবদান। স্বাধীনতার পর পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে কিছু মানুষের সৃষ্টিশীল প্রতিভায় রচিত হয়েছে আমাদের সমাজ ও সংস্কৃতির অবয়ব। তাঁদের সৃষ্টি, চিন্তা ও কর্মে সহজ হয়েছে আমাদের জীবন; রূপ পেয়েছে আমাদের স্বপ্ন, ভাষা পেয়েছে আমাদের কল্পনা।

১৯৭১, ২০২০ ও ২০২১ সাল বাদ দিয়ে ৫৪ বছর ধরে ছায়ানট সন্‌জীদা খাতুনের নেতৃত্বে রমনার বটমূলে নববর্ষের বড় অনুষ্ঠান সফলভাবে করে চলেছে
ছবি: প্রথম আলো

ষাটের দশকের পতন-অভ্যুদয়-বন্ধুর পথের দিনগুলো-রাতগুলোর কথা কখনো ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী, লেখক, গবেষক, সংগঠক ও শিক্ষক সন্‌জীদা খাতুন, আমাদের মিনু আপার কথা ভাবতে গেলেই সেই সময়ের অনেক কথা, অনেক স্মৃতি মনে পড়ে যায়।

সন্‌জীদা খাতুন কামরুন্নেসা স্কুল আর ইডেন কলেজ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৪ সালে স্নাতক সম্পন্ন করেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে। এরপর রবীন্দ্রসাহিত্য ও সংগীতের প্রতি অনুরাগ থেকে স্নাতকোত্তর করতে যান শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতীতে। ১৯৫৫ সালে বিশ্বভারতী থেকে প্রথম বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেন ১৯৭৮ সালে। এরপর পেশাগত জীবনে ইডেন কলেজ, কারমাইকেল কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা শেষে অবসরে যান।

সন্‌জীদা খাতুনের গবেষণা, সাহিত্য সমালোচনা, সমাজ-সংস্কৃতি, আত্মজীবনী মিলিয়ে ৪০টির বেশি লেখা বই, তাঁর গাওয়া গান বা সাংস্কৃতিক কর্মযজ্ঞ দেশের গণতান্ত্রিক ও মানবিক ধারাকে প্রভাবিত ও শক্তিশালী করেছে।
সন্‌জীদা খাতুন (৪ এপ্রিল ১৯৩৩)

সন্‌জীদা খাতুন যখন কলেজের শিক্ষার্থী, তখনই আবৃত্তি, অভিনয় আর গানের চর্চা করেছেন। শুরুর দিকে নজরুলসংগীত, আধুনিক বাংলা গান ও পল্লিগীতি শিখেছিলেন সোহরাব হোসেনের কাছে। রবীন্দ্রসংগীত প্রথমে শিখেছেন হুসনে বানু খানমের কাছে; পরে শৈলজারঞ্জন মজুমদার, আবদুল আহাদ, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, নীলিমা সেন প্রমুখের কাছে।

এসব সুকুমারচর্চার পাশাপাশি কিছু কিছু সাংগঠনিক কাজেও সন্‌জীদা খাতুন যুক্ত হয়েছেন। জীবনের প্রায় শুরু থেকে তাঁকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ভূমিকায় দেখা গেছে। সেই শৈশবে শিল্পী কামরুল হাসানের নেতৃত্বে যোগ দিয়েছিলেন ব্রতচারী আন্দোলনে। কাজ করেছেন মুকুল ফৌজেও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের শুরু থেকেই ছিলেন সক্রিয়। একুশে ফেব্রুয়ারি দুপুরে বাসায় ফিরে ছাত্রহত্যার খবর পেয়েছিলেন। পরদিন ২২ ফেব্রুয়ারি সবকিছু বন্ধ। তবু সকালে বাসা থেকে বের হয়ে নানা খোঁজখবর নিলেন। বিকেলে মাকে নিয়ে রওনা দিলেন অভয় দাস লেনের একটি বাসার উদ্দেশে, নারীদের প্রতিবাদ সভায় যোগ দিতে। সেই বৈরী পরিবেশে দূরের পথ হেঁটে হেঁটে গিয়ে দেখেন, সুফিয়া কামাল, বেগম দৌলতুন্নেসা, নূরজাহান মুরশিদসহ অনেকে উপস্থিত। সেই পরিস্থিতিতে কেউ সেদিন সভার সভাপতি হতে না চাইলে মা সাজেদা খাতুনকে সভাপতির আসনে বসিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। সন্‌জীদা খাতুন সেদিন বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘একুশ আমাকে ভাষা দিয়েছে।’

রবীন্দ্রসংগীত ছিল তাঁদের আন্দোলনের মস্ত হাতিয়ার। সন্‌জীদা খাতুনের ভাষায়, ‘রবীন্দ্রনাথের হাতে হাত রেখে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’

দুই

১৯৬২ সালের ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে পাকিস্তানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ঢাকায় যে সাহসী গণতান্ত্রিক ছাত্র আন্দোলন ও সাংস্কৃতিক জাগরণের সূচনা ঘটেছিল, ষাটের দশকজুড়ে সেটাই বহুবিস্তৃত হয়ে দেশে অবিশ্বাস্য এক গণজাগরণ সৃষ্টি করে। সেই শক্তিশালী আন্দোলনের পেছনে ছিল দেশের জাতীয়তাবাদী ও বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সে সময়ের প্রধান ছাত্রসংগঠনগুলোর যৌথ ভূমিকা। ঐতিহাসিক মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার পথে দেশের মানুষকে প্রস্তুত করে তুলতে সে আন্দোলন শেষ পর্যন্ত বিপুলভাবে সহায়তা করেছিল।

এই সবকিছুর মধ্যে বাঙালির আত্মানুসন্ধান ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য অর্জনের অব্যাহত সংগ্রামের গভীর আরেকটি স্রোতোধারাও সে সময় প্রবাহিত ছিল। ১৯৬১ সালে পাকিস্তানি সামরিক শাসকেরা রবীন্দ্রচর্চার বিরুদ্ধে পরোক্ষ নির্দেশ জারি করে। সে নির্দেশ অগ্রাহ্য করে রবীন্দ্র-জন্মশতবর্ষ পালনের মধ্য দিয়ে সূচিত হয় বাঙালি সংস্কৃতির সংগ্রাম। রবীন্দ্র-জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠান হয়েছিল। তবে কেন্দ্রীয়ভাবে বড় একটি অনুষ্ঠান হয়েছিল ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে। দেশের সেরা শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীরা তাতে অংশ নেন। অনুষ্ঠান পালনের পরপর সংগঠক ও শিল্পীরা একসঙ্গে কাজ করার জন্য নতুন একটি সংগঠন তৈরির সিদ্ধান্ত নিলেন। নবগঠিত সেই কমিটির দ্বিতীয় বৈঠকেই সংগঠনের নাম ঠিক হয় ‘ছায়ানট’। শুরু থেকেই এ সংগঠনের সামনে ছিলেন সন্‌জীদা খাতুন। এখনো সামনেই আছেন।

সেই ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের উত্থান-পতনময় ইতিহাসে সব প্রগতিশীল ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে ছিলেন সন্‌জীদা খাতুন। মুক্তিযুদ্ধকালে তাঁর ও ওয়াহিদুল হকদের সক্রিয় উদ্যোগে গড়ে ওঠে ‘রূপান্তরের গান’–এর দল। এ সংগঠনের পক্ষ থেকে তাঁরা মুক্তিযোদ্ধা, শরণার্থীশিবিরসহ ভারতের বিভিন্ন জায়গায় সাধারণ মানুষকে যুক্ত করার জন্য রবীন্দ্রসংগীত গাইতেন। রবীন্দ্রসংগীত ছিল তাঁদের আন্দোলনের মস্ত হাতিয়ার। সন্‌জীদা খাতুনের ভাষায়, ‘রবীন্দ্রনাথের হাতে হাত রেখে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’

এই এগিয়ে যাওয়ার পথে সন্‌জীদা খাতুনের প্রধান বাহন ছায়ানট। অব্যাহত সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অনন্য এই সংগঠন কালক্রমে হয়ে ওঠে বাঙালি সংস্কৃতি ও মানবিকতা চর্চারও একটি কেন্দ্র। এখনো আমাদের সবাইকে সঞ্জীবিত করে চলেছে ছায়ানট। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি, বর্তমান ও ভবিষ্যতের মানবিক বাংলাদেশ গঠনের কাজে পালন করছে পথপ্রদর্শকের ভূমিকা। ষাট দশকের বেশি সময় ধরে সামনে থেকে দৃঢ়ভাবে এর নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন সন্‌জীদা খাতুন।

শুনে চমকে উঠে সন্‌জীদা খাতুন বলেছিলেন, তিনি গান ছাড়তে পারবেন না। আত্মজীবনী সহজ কঠিন দ্বন্দ্বে ছন্দেতে তিনি লিখেছেন, ‘রাজনীতি আমার ক্ষেত্র নয়, সাংস্কৃতিক আন্দোলনই আমার আসল কাজের ক্ষেত্র। বিশেষ করে, বাংলাদেশ বা বাঙালি সাংস্কৃতিক স্বাধিকার সংরক্ষণ আমার উপযুক্ত কাজের ক্ষেত্র।’

তিন

সন্‌জীদা খাতুনের সঙ্গে প্রথম যোগাযোগের স্মৃতি মনে পড়ে না। তবে ষাটের দশকে যে ছায়ানটের প্রায় সব অনুষ্ঠানেই যেতাম, তা স্পষ্ট মনে আছে। র‍্যাঙ্কিন স্ট্রিটের বলধা গার্ডেনে ছায়ানটের প্রথম শারদ উৎসবের অনুষ্ঠানে সকালবেলায় হাজির হয়েছিলাম। প্রথম বসন্ত উৎসব হয়েছিল জগন্নাথ হলের বাঁ দিকের কোনো একজন অধ্যাপকের বাসভবনের সবুজ চত্বরে। শ্রোতার আসরের বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানও উপভোগ করেছি। ইংলিশ প্রিপারেটরি (পরে উদয়ন) স্কুলে ছায়ানট শিক্ষায়তনে নানা কাজে গিয়েছি অনেকবার। ছায়ানটের অনুষ্ঠানগুলোতে সন্‌জীদা খাতুন ছাড়াও গান শুনেছি কলিম শরাফী, বিলকিস নাসিরুদ্দীন, মালেকা আজিম খান, ফাহমিদা খাতুন, জাহেদুর রহীম, আবদুর রহিম চৌধুরী, অজিত রায় ও ওয়াহিদুল হকসহ বহু শিল্পীর। আলতাফ মাহমুদকে বেহালা বাজাতে দেখেছি একটি-দুটি অনুষ্ঠানে। এসবের মধ্য দিয়ে সন্‌জীদা খাতুনের সান্নিধ্য লাভের সুযোগ হয়েছিল। ষাটের দশকে তাঁর আজিমপুরের বাসা ছিল আমাদের জন্য অবারিত দ্বার। কত বৈঠক, কত সভা যে সেখানে হয়েছে!

নানা কাজের সূত্রে সে সময়ের কিছু বামপন্থী নেতা–কর্মীর সঙ্গে সন্‌জীদা খাতুনের যোগাযোগ ছিল। কারও কারও কাছে তাঁর বাসা ছিল স্বল্প সময়ের গোপন আস্তানা। পঞ্চাশের দশক থেকেই আত্মগোপনে থাকা কমিউনিস্ট নেতারা তাঁদের বাসায় থেকেছেন। সে সময় আত্মগোপনে থাকা কমিউনিস্ট পার্টির নারী নেত্রীরাও তাঁর কাছে আসা-যাওয়া করতেন। শান্তিনিকেতনে পড়তে যাওয়ার আগে এক নেত্রী সন্‌জীদা খাতুনকে বলেছিলেন, ‘ওখানে গিয়ে কী করবে? পার্টির সদস্যপদ নাও। এখানেই কাজ করো।’

শুনে চমকে উঠে সন্‌জীদা খাতুন বলেছিলেন, তিনি গান ছাড়তে পারবেন না। আত্মজীবনী সহজ কঠিন দ্বন্দ্বে ছন্দেতে তিনি লিখেছেন, ‘রাজনীতি আমার ক্ষেত্র নয়, সাংস্কৃতিক আন্দোলনই আমার আসল কাজের ক্ষেত্র। বিশেষ করে, বাংলাদেশ বা বাঙালি সাংস্কৃতিক স্বাধিকার সংরক্ষণ আমার উপযুক্ত কাজের ক্ষেত্র।’

নিজের সেই কর্তব্য থেকে তিনি বিচ্যুত হননি। বাঙালির সাংস্কৃতিক স্বাধিকার অর্জনের সংগ্রামে মাঠে অবিচল আছেন জীবনভর। শুধু ছায়ানট নয়, দীর্ঘ যাত্রাপথে জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ, ব্রতচারী সমিতি, নালন্দা বিদ্যালয় বা কণ্ঠশীলনের মতো সংগঠনেরও তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন।

চার

১৯৬৭ সালের ১৫ এপ্রিল, বাংলা সনের প্রথম দিন, পয়লা বৈশাখ। রমনার বটমূলে ছায়ানট আয়োজন করেছিল নববর্ষের প্রথম অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানটি ঘিরে আমাদের ছাত্র ইউনিয়নের নেতা-কর্মীদের মধ্যে বেশ উদ্দীপনা তৈরি হয়েছিল। ৩১/১ হোসেনি দালান রোডের কার্যালয়ে সারা রাত জেগে এবং আশপাশ থেকে ফুল ও গাছের পাতা-ডালসহ কিছু বেলুন নিয়ে আমরা ১০০-১৫০ ছাত্র মিছিল করে ছায়ানটের সে অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলাম। সামনের ব্যানারে লেখা ছিল ‘এসো হে বৈশাখ/ এসো এসো।’ রমনার দর্শক-শ্রোতারা হাততালি দিয়ে আমাদের অভিনন্দিত করেছিলেন।

১৯৬৩ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত ছায়ানট বিদ্যায়তনে নববর্ষের অনুষ্ঠান হয়েছে নিয়মিত। প্রথমবারের সেই অনুষ্ঠানটির মধ্য দিয়ে বিদ্যায়তনটির যাত্রা শুরু হয়। এরপর ১৯৬৭ সাল থেকে শুধু ১৯৭১ (মুক্তিযুদ্ধ), ২০২০ ও ২০২১ (করোনা মহামারি) বাদ দিয়ে ৫৪ বছর ধরে ছায়ানট সন্‌জীদা খাতুনের নেতৃত্বে রমনার বটমূলে নববর্ষের বড় অনুষ্ঠান সফলভাবে করে চলেছে। আমাদের জাতীয় ইতিহাসে বিজয়ের এ এক অব্যাহত অনুপ্রেরণা।

শুধু ছায়ানট নয়, দীর্ঘ যাত্রাপথে জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ, ব্রতচারী সমিতি, নালন্দা বিদ্যালয় বা কণ্ঠশীলনের মতো সংগঠনেরও তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন।

২০০১ সালে রমনার বটমূলে নববর্ষের অনুষ্ঠানে ভয়াবহ বোমা হামলার কথা আমাদের মনে আছে। জঙ্গিরা চেয়েছিল বাংলা নববর্ষবরণ অনুষ্ঠানকে বন্ধ করে দিতে। কিন্তু ছায়ানট বা সন্‌জীদা খাতুন সরে তো আসেনইনি, বরং আরও ভালোবেসে ও সাহস নিয়ে আজ অবধি অনুষ্ঠান করে চলেছেন। পঞ্চাশ বছরের বেশি সময় ধরে যে গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা দেখে আসছি, সেখানে স্বপ্নসারথির ভূমিকা পালন করে আসছেন মহান মুক্তিযুদ্ধকালে ‘মুক্তিসংগ্রামী শিল্পী সংস্থা’র সভাপতি সন্‌জীদা খাতুন।

আজ আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি, কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ না নিয়ে সন্‌জীদা খাতুন সেদিন যথাযথ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আবার এ কথাও সত্য যে ষাটের দশকজুড়ে ছায়ানট বা অন্যান্য সাংস্কৃতিক কাজে সে সময় বামপন্থী ছাত্র, বুদ্ধিজীবী বা রাজনৈতিক কর্মীদের তিনি তাঁর পাশে পেয়েছেন। তিনিও তাঁদের দিকে ভালোবাসার বাহু প্রসারিত করেছেন। অবিচল নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সঙ্গে অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন সামনে রেখেই তিনি সামনে এগিয়েছেন। ছায়ানটসহ তাঁর জীবনের সব কার্যক্রমে এর প্রতিফলন দেখা যায়।

সন্‌জীদা খাতুনের গবেষণা, সাহিত্য সমালোচনা, সমাজ-সংস্কৃতি, আত্মজীবনী মিলিয়ে ৪০টির বেশি লেখা বই, তাঁর গাওয়া গান বা সাংস্কৃতিক কর্মযজ্ঞ দেশের গণতান্ত্রিক ও মানবিক ধারাকে প্রভাবিত ও শক্তিশালী করেছে। সে জন্য আমরা, আমাদের প্রজন্ম এবং আমাদের পরের প্রজন্ম তাঁর কাছে গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। ভবিষ্যতের বাংলাদেশও কৃতজ্ঞ থাকবে সন্‌জীদা খাতুনের কাছে।

মতিউর রহমান: ষাটের দশকের ছাত্র ও সংস্কৃতিকর্মী; সম্পাদক, প্রথম আলো