পাঁচ ছেলেমেয়ে, স্বামী-স্ত্রী মিলে সাতজনের সংসার ফারুক হোসেনের। বাসাভাড়া, ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার খরচ। শুধু সংবাদপত্র বিক্রির আয়ে আর কুলিয়ে উঠতে পারছিলেন না। বাধ্য হয়ে নৈশপ্রহরীর কাজ নিয়েছেন তিনি।
মালিবাগ সুপার মার্কেটের সামনে যাত্রীছাউনির তলায় সংবাদপত্র বিক্রি করেন ফারুক হোসেন। গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের ইচুলি গ্রামে। প্রায় ৪০ বছর ধরে ঢাকায় বসবাস। থাকেন মুগদায়। বাসাভাড়া ১০ হাজার টাকা। গ্যাস, বিদ্যুৎ বিল আলাদা। সব মিলিয়ে প্রায় ৪০-৪৫ হাজার টাকা মাসে খরচ।
এতে কোনো সমস্যা ছিল না। খুব ভালো ব্যবসা ছিল তাঁর। স্থায়ী গ্রাহক, খুচরা মিলিয়ে প্রায় চার হাজার কাগজ বিক্রি করতেন রোজ। বেশ সুখে–শান্তিতেই কেটে যাচ্ছিল দিনগুলো।
ছন্দপতন ঘটিয়ে দিল করোনা মহামারি। ২০২০ সালে করোনার পর ধস নামে সংবাদপত্র বিক্রিতে। এখন একটু একটু করে বাড়তে বাড়তে দিনের বিক্রি দেড় হাজারে এসে থেমে আছে। ফলে এক ধাক্কায় আয় কমে গেছে চার ভাগের তিন ভাগ। অথচ সংসারের খরচ কমা তো দূরের কথা, দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি বোঝার ওপর শাকের আঁটির দশা সৃষ্টি করেছে।
ফারুক হোসেনে সঙ্গে কথা হচ্ছিল তাঁর পত্রিকা বিক্রির দোকানের সামনে। তিনি জানান, করোনার আগে শুধু প্রথম আলোরই ৩০০ স্থায়ী গ্রাহক ছিল। এখন এক শর মতো আছে। বড় মেয়ে বদরুন্নেসা কলেজে পড়ে। ছেলেরাও সংসারের হাল ধরার অবস্থায় নেই। করোনার প্রথম পর্যায়ে কাগজ বিক্রি যখন প্রায় বন্ধ হয়ে পড়েছিল তখন অল্প স্বল্প যা সঞ্চয় ছিল তা ভাঙিয়ে বাজার খরচ করেছেন। ফলে হাতও শূন্য।
অনেকের মতো ফারুক হোসেনেরও ধারণা ছিল মহামারির প্রভাব তেমন লম্বা হবে না। সংক্রমণের প্রভাব কমলে অবস্থা আবার স্বাভাবিক হয়ে আসবে। তবে অন্যান্য ক্ষেত্রে পরিবেশ ক্রমশ স্বাভাবিক হয়ে এলেও সংবাদপত্র বিক্রির ক্ষেত্রে তেমনটা হয়নি। গ্রাহক বেড়েছে খুব ধীরে এবং একটা পর্যায় এসে যেন থমকে গেছে। ফারুক জানান, বিকল্প কিছু যে করবেন, তার উপায় নেই। ব্যবসা করার মতো কোনো পুঁজিই তাঁর নেই।
কী করবেন, ভেবে পাচ্ছিলেন না ফারুক হোসেন। একটা পর্যায়ে তিনি নিরুপায় হয়ে মালিবাগ সুপার মার্কেট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে নৈশপ্রহরীর কাজ নিয়েছেন। সকাল থেকে বেলা প্রায় তিনটা পর্যন্ত কাগজ বিক্রি করেন। তারপর বাসায় ফিরে দুপুরের খাবারের পর একটু বিশ্রাম।
তারপর সন্ধ্যায় মার্কেটে এসে সারা রাত জেগে পাহারা দেওয়া। বেতন পাচ্ছেন ৯ হাজার টাকা। এই দিয়ে কোনোরকমে টেনেটুনে সংসার চলছে। আশা নিয়ে আছেন এই দুর্বিসহ পরিস্থিতি একসময় কেটে যাবে। ফিরে আসবেন তাঁর হারানো গ্রাহকেরা।