'শান্তশিষ্ট' খুদে লেখক

নতুন কী গল্প লিখছে অলীন?  ছবি: জাহিদুল করিম
নতুন কী গল্প লিখছে অলীন? ছবি: জাহিদুল করিম

শিরোনাম দেখে আঁতকে উঠতে পারেন অলীন বাসারের বাবা-মা-বন্ধুরা। ‘শান্তশিষ্ট? বলে কী!’ তাঁদের দাবি, মানুষটা ছোট্ট হলে কী হবে, অলীন দুষ্টুমিতে ওস্তাদ!
আমাদের কী দোষ বলো? আমাদের সঙ্গে দেখা করতে এসে অলীন দুষ্টুমি করেনি একটুও। কথাবার্তা, হাঁটাচলায় একদম ‘মুরব্বি’ ভাব! যেন গুরুগম্ভীর এক লেখক! তা এমন ভাব থাকবে না-ই বা কেন? এ বছর বইমেলায় সাঁকোবাড়ি প্রকাশন থেকে সাত বছর বয়সী অলীন বাসারের একটা বই বেরিয়েছে। নাম অন্ধকারে ভূতের ছায়া। খুদে লেখকের ‘ইন্টারভিউ’ নিতেই তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল প্রথম আলো কার্যালয়ে।
কথা বলতে গিয়ে আমরা অবশ্য খানিকটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেছি! শুধু লেখক তো নয়, অলীন একাধারে গায়ক, আঁকিয়ে, সাংবাদিক এমনকি রীতিমতো একটি পত্রিকার সম্পাদকও! কোন পত্রিকা? অলীনের পত্রিকার নাম শান্তশিষ্ট। সাদা কাগজে লিখে সে নিজেই নিয়মিত পত্রিকা তৈরি করে। আলোকচিত্রীদের এখনো নিয়োগ দেওয়া হয়নি, তাই পত্রিকার ছবিগুলো কষ্ট করে অলীনকেই এঁকে নিতে হয়! তাই বলে এই পত্রিকাকে হেলাফেলা কোরো না যেন! ‘একটি গ্রামে বুনো হাতি’, ‘মমতা ব্যানার্জি এখন ঢাকায়’—এমন সিরিয়াস সব খবরও বিস্তারিত ছাপা হয় অলীন বাসার সম্পাদিত-লিখিত-অলংকৃত পত্রিকায়! শান্তশিষ্ট পত্রিকার ২০১৪ সালের ১২ ডিসেম্বর সংখ্যায় চোখ বুলানোর সুযোগ হলো। পত্রিকার নামের ওপরে লেখা আছে স্লোগান—সবার পছন্দের পত্রিকা। নিচে লেখা, ‘শনিবারের ধামাকা খবর’! দেখলাম জিহাদের নিখোঁজ হওয়ার খবরটাও শান্তশিষ্ট পত্রিকায় গুরুত্ব দিয়ে ‘ছাপা’ (পড়ো ‘লেখা’) হয়েছে।
একদম পিচ্চিকাল থেকেই রাতে গল্প না শোনালে ঘুমাতে চাইত না অলীন। বাবা রফিকুল বাশার আর মা নাজনিন আক্তারের কাছে তার আজব আবদার, ‘এমন গল্প বলো যা তুমি কখনো শোনোনি, কখনো পড়োনি। কিন্তু নিজে বানিয়ে বানিয়ে বলবে না!’

.
.

তোমাদের বেলায় কী হয় বলো? মাঝে মাঝে রাতের বেলা আব্বু-আম্মু হয়তো স্কুলের পড়াগুলো তোমাদের বুঝিয়ে দেন—তাই তো? অলীনের ক্ষেত্রে উল্টো! প্রায় প্রতি রাতেই স্কুলে কী শেখাল, অলীন সেসব বাবাকে পড়ায়! ইদানীং নাকি বাবা কিছুটা ফাঁকিবাজ হয়ে গেছেন! অফিসের কাজের ছুতোয় একদম পড়তে বসতে চান না!
সুকুমার রায় আর ঈশপ অলীনের প্রিয়। তাঁদের গল্প শুনে-পড়েই তার লেখালেখির আগ্রহ হয়েছে। বেশ কয়েকটা গল্প যখন লেখা হয়ে গেছে, বাবাই বই প্রকাশ করার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। বইটিতে পরী পরী মারামারি, বকের পেটে বাঘের বাচ্চা, মুরগি ও গাছ...এমন মজার সব গল্প আছে।
‘গুরুগম্ভীর খুদে লেখক’ আমাদের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিল দু-এক শব্দে। ‘বড় হয়ে কী হবে?’ এমন প্রশ্নেও তার ছোট্ট উত্তর, ‘দেখি...’।
সেকি! আমরা তো ভেবেছিলাম অলীন লেখক হবে। এখন তো মনে হচ্ছে সে হবে ‘দেখক’। লিখলে যদি লেখক হয়, দেখলে তো ‘দেখক’ই হওয়ার কথা! শুনে মতিঝিল মডেল স্কুলে ক্লাস ওয়ান পড়ুয়া ছেলেটি মিটিমিটি হাসে।
অলীন বাসারের বাবা রফিকুল বাসার এক ফাঁকে আমাদের একটা গোপন তথ্য দিলেন। অলীন নাকি একটা ছোটখাটো সিনেমার স্ক্রিপ্টও লিখে ফেলেছে। সিনেমার নাম ধাক্কা থেকে প্রেম! এই তথ্য ফাঁস করে দিতেই খুদে লেখক লজ্জায় লাল! রেগেমেগে সে বলে, ‘বাবা, আজকে বাসায় চলো। তোমার খবর আছে!

অলংকরণ: মাসুক হেলাল
অলংকরণ: মাসুক হেলাল

ইচ্ছাপূরণ প্রজাপতি
একদিন এক কানাবগি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। এমন সময় এক ইচ্ছাপূরণ প্রজাপতি বুঝতে পারে যে কানাবগির মন খারাপ। ইচ্ছাপূরণ প্রজাপতি কানাবগির কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করল, ‘তোমার কী হয়েছে? আমাকে বলো। আমি একটি সাধারণ প্রজাপতি নই। আমি একটি ইচ্ছাপূরণ প্রজাপতি।’
কানাবগি বলল, ‘তাই নাকি! হাহাহা। হাহাহা। ইয়ার্কি কোরো না।’
এবার ইচ্ছাপূরণ প্রজাপতি একটু রেগেই বলে, ‘শোনো কানাবগি তখন থেকে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে আসছি তাই তুমি আমার মজা কুড়াচ্ছ। অনেকক্ষণ ধরে কিচ্ছু বললাম না, আমি তোমার ভবিষ্যতের কথা বলছি। সত্যি, তোমার বিপদ আসছে।’
এবার কানাবগি বিশ্বাস করে নিল। বলল, ‘ইচ্ছাপূরণ প্রজাপতি তুমি তো জানো আমার ভবিষ্যতের কথা। তাহলে সত্যি করে বলো তো ভবিষ্যতে আমার ক্ষেত্রে কী ঘটনা ঘটবে এবং কী হবে তা কি জানো?’
ইচ্ছাপূরণ প্রজাপতি বলল, ‘আমি ঠিক জানি না তোমার কী বিপদ হবে। তবে তোমার ভাগ্যে যা লেখা আছে তা তুমি জানো না।’
কানাবগি বলল, ‘মিথ্যাবাদী প্রজাপতি একটা।’ এরপর কানাবগি চলে গেল। 

হঠাৎ সে একটা নদী দেখতে পেল। সেই নদীতে ছিল পাঁচ হাজারটা পুঁটি মাছ। তক্ষুনি কানাবগির জিবে জল চলে এল। কিছুক্ষণ পরই সে দেখতে পেল একটা সবুজ ডাল। তবে একটু মোটা তাজা। আর ডালটা এদিকে আসছে। ওটা ধরে তো ভাসা যাবে যাবে!
কিছুক্ষণ পর সে বুঝতে পারল, সেটা একটা কুমির। তখন সে ইচ্ছাপূরণ প্রজাপতির কথা ভাবতে লাগলো। বুঝতে পেরে আর সেই নদীতে নামেনি। সে যাত্রা তার জীবন বাঁচলো।

দিন জামা পাল্টায়
একটা দিন কত না জামা পাল্টায়। বলি সব জামার নাম। ভোর একটা জামা। সকাল একটা জামা। দুপুর একটা জামা। বিকেল একটা জামা। সন্ধ্যা একটা জামা। রাত একটা জামা।

সৌরভ
তার নাম সৌরভ
করে শুধু গৌরব
অনেক অনেক ব্যাঙ
পেতনিটার ঠ্যাঙ


বড় বাঘ
কত বড় বাঘ
করে শুধু রাগ
খায় শুধু বানর
শীতে পরে চাদর।

ভোর
হয়েছে অনেক ভোর
খোলো খোলো দোর
কতগুলো চোর
হয় না তো বোর।