ঢাকা আর্ট সামিট পুরোপুরিই আমাদের নিজস্ব মডেল

নাদিয়া সামদানী। ছবি: সাইফুল ইসলাম
নাদিয়া সামদানী। ছবি: সাইফুল ইসলাম
সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশনের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট এবং এবারের সামিটের পরিচালক নাদিয়া সামদানী। তিনি কথা বলেছেন তাঁর ব্যক্তিগত শিল্প সংগ্রহ ও এবারের সামিটের নানা দিক নিয়ে।

আপনি খুব অল্প বয়সেই শিল্পকর্ম সংগ্রহের কাজ শুরু করেছেন। ঠিক কোন সময়ে এসে মনে করলেন আপনি নিজে একজন সংগ্রাহক হতে চান?
এমনটা কখনো আলাদা করে মনে হয়নি আসলে। আমার জন্ম ইংল্যান্ডের কেন্টে। আমাদের পরিবারের মধ্যেই সব সময় চিত্রকর্ম সংগ্রহ, উপহার দেওয়া—এসব ব্যাপার ছিল। বলতে পারেন আমার সংগ্রাহক হওয়াটা সেদিক থেকে খুব স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল।

আপনার সংগ্রহের প্রথম ছবি কোনটি?
এস এম সুলতানের একটি চিত্রকর্ম। আপনি জানেন তিনি কত বড় মাপের একজন শিল্পী ছিলেন। পাবলো পিকাসোর মতো শিল্পীর সঙ্গে তাঁর কাজের প্রদর্শনী হয়েছে। ওই ছবিটি ছিল জলরঙে আঁকা। সালটা খুব সম্ভবত ১৯৯৮।
সুলতানের ছবি তখন অবশ্য এখনকার মতো খুব বেশি দুর্লভ বা দামি ছিল না। এখন এই ছবি আমার কাছে অমূল্য। এস এম সুলতানের যে দিকটি আমার সবচেয়ে ভালো লাগে সেটি হচ্ছে, উনি কখনো বিক্রি বা প্রদর্শনীর কথা ভেবে কাজ করেননি। তাঁর কাজগুলো দেখলেই বোঝা যায়, তিনি এমনই একজন শিল্পী, যিনি শুধু মনের আনন্দেই এঁকে যেতেন।

ঢাকা আর্ট সামিট আয়োজনের পেছনে আপনার কোন ভাবনাটি কাজ করেছে?
পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় অনেক প্রদর্শনীতে যাওয়া হয় আমার। কিন্তু আমাদের দেশে সেসবের এত আয়োজন কই? আমাদের এখানে জাদুঘরে বা অনেকের ব্যক্তিগত সংগ্রহে হয়তো দুর্লভ সব কাজ আছে। কিন্তু আবার প্রত্যেকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তো আর শিল্পীদের কাজ দেখা সম্ভব না। তাই বাংলাদেশি শিল্পীদের আবিষ্কার ও পৃষ্ঠপোষকতার জন্য আমরা চেয়েছি একটি অনন্য প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে। যেটি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক—দুই দিক থেকেই শিল্পের একটি বড় ও গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন হয়ে উঠবে। শুধু দক্ষিণ এশিয়ার বা দক্ষিণ এশিয়া-সম্পর্কিত শিল্পকর্ম নিয়ে ঢাকা আর্ট সামিটের চেয়ে বড় আয়োজন এখন আর কোথাও নেই। আরও একটা কথা বলতে চাই, ঢাকা আর্ট সামিট পুরোপুরিই আমাদের নিজস্ব মডেলে হচ্ছে। আমরা এটাকে বিয়েনাল, সম্মেলন বা প্রদর্শনী—কোনোটাই বলতে চাই না। বরং এটাকে নানা কিছুর একটা মিশ্রণ বলা যেতে পারে।

এটি তৃতীয় ঢাকা আর্ট সামিট। বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য বিশেষ কী থাকছে এবারে?
প্রদর্শনী দেখতে এবার কোনো টিকিট লাগছে না। প্রদর্শনীর সময় বাড়িয়ে আমরা চার দিন করেছি। এবারই প্রথমবারের মতো থাকছে রিওয়াইন্ড বিভাগ। স্কুলের জন্যও থাকছে দুই দিন। এবার সামিটে আসছে ৫০টি স্কুলের শিক্ষার্থীরাও।

বাংলাদেশের চিত্রশিল্প ঢাকা আর্ট সামিট থেকে কীভাবে উপকৃত হবে বলে মনে করেন?
বাংলাদেশের যে তরুণ চিত্রশিল্পীরা কাজ করছেন, তাঁদের জন্য তো অবশ্যই এক বিশাল প্ল্যাটফর্ম এই ঢাকা আর্ট সামিট। এবারও একজন উদীয়মান বাংলাদেশি শিল্পী পাবেন ‘সামদানী আর্ট অ্যাওয়ার্ড’। পুরস্কার হিসেবে তিনি পাবেন লন্ডনের ডেলফিনা ফাউন্ডেশনে তিন মাসের আবাসিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের সুযোগ। এই সামিটের মাধ্যমে সারা বিশ্বের মানুষ আমাদের শিল্প ও শিল্পীদের কথা জানছে। টেইট মডার্ন থেকে শুরু করে সেন্টার পম্পিডুর মতো সংগ্রহশালার কিউরেটররা আমাদের এখানে কাজ করছেন। সব মিলিয়ে আমাদের জন্য খুব গর্বের ও আশার ব্যাপার।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
ইকবাল হোসাইন চৌধুরী

আরও পড়ুন: