অক্টোবরে চার কোটির বেশি চীনা টিকা আসার সম্ভাবনা

চীন থেকে সরাসরি কেনা ও কোভ্যাক্সের মাধ্যমে কেনা বাবদ এই টিকা আসতে পারে আগামী মাসে।

ফাইল ছবি

দেশে আগামী মাসে বিপুল পরিমাণ করোনার টিকা আসতে পারে। এর মধ্যে চীনের বেইজিং ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল প্রোডাক্টসের কাছ থেকে কেনা সিনোফার্মের দুই কোটি টিকা পাওয়ার নিশ্চয়তা পাওয়া গেছে। পাশাপাশি বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্সের মাধ্যমে কেনা চীনের সিনোফার্ম ও সিনোভ্যাকের টিকাও আসা শুরু করবে।

কোভ্যাক্সের মাধ্যমে কেনা চীনা টিকা আসতে পারে দুই কোটি বা তার বেশি। ফলে অক্টোবরে চার কোটির বেশি টিকা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, কোভ্যাক্সের মাধ্যমে চীনের সিনোফার্ম ও সিনোভ্যাকের টিকা কেনা হচ্ছে। অক্টোবর থেকে এই টিকার চালান বাংলাদেশে পৌঁছানো শুরুর কথা। এ বিষয়ে প্রক্রিয়াগত কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের একটি কূটনৈতিক সূত্র গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে জানিয়েছে, সিনোফার্ম ও সিনোভ্যাক মিলিয়ে কোভ্যাক্সের মাধ্যমে ১০ কোটি ৪৭ লাখ ৩৩ হাজার ডোজ করোনার টিকা কিনছে বাংলাদেশ। চীনের টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশে ওই টিকা পাঠাতে চায় বলে জানিয়েছে।

কোভ্যাক্সের মাধ্যমে চীনের সিনোফার্ম ও সিনোভ্যাকের টিকা কেনা হচ্ছে। অক্টোবর থেকে এই টিকার চালান বাংলাদেশে পৌঁছানো শুরুর কথা। এ বিষয়ে প্রক্রিয়াগত কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
মীরজাদী সেব্রিনা, অতিরিক্ত মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

বিভিন্ন উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের প্রক্রিয়ায় যুক্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত ভবিষ্যতে টিকার সরবরাহ নিশ্চিত হওয়ার পর সরকার প্রতি মাসে দুই কোটি ডোজ টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম গত রোববার টিকাদান পরিকল্পনা নিয়ে আয়োজিত এক ফেসবুক লাইভে প্রতি মাসে দুই কোটি ডোজ টিকা দেওয়ার পরিকল্পনার বিষয়টি জানান।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এক বৈঠকে যোগ দিতে ২৮ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জেনেভা যাচ্ছেন। সুইজারল্যান্ড থেকে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, জেনেভা সফরের সময় তিনি নানা উৎস থেকে বাংলাদেশের টিকা পাওয়ার বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করবেন।

জেনেভায় জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মো. মোস্তাফিজুর রহমান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর জেনেভা সফরের সময় অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি কোভ্যাক্স থেকে টিকা পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে কোভ্যাক্সের মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে যে টিকা কেনার কথা ছিল, তা এখন আগেভাগে কেনা হচ্ছে। বছরের শেষ প্রান্তিক থেকে তা সরবরাহ শুরুর কথা জানিয়েছে কোভ্যাক্স।

সরকার দেশের জনসংখ্যার ৮০ শতাংশকে করোনার টিকার আওতায় আনতে চায়। এ জন্য দুই ডোজ করে ২৬ কোটি টিকা লাগবে। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর জন্য কোভ্যাক্সের বরাদ্দ থেকে বাংলাদেশের ৬ কোটি টিকা বিনা মূল্যে পাওয়ার কথা। কোভ্যাক্সের মাধ্যমে ১০ কোটি টিকা কেনা হচ্ছে। চীন থেকে সরাসরি কেনা হচ্ছে সাড়ে ৭ কোটি ডোজ সিনোফার্মের টিকা। এ ছাড়া ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা বাবদ পাওয়ার কথা ৩ কোটি ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা। এর বাইরে উপহারের টিকা রয়েছে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সাড়ে ২৭ কোটি ডোজ টিকা পাওয়া নিশ্চিত করেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৩০ আগস্ট সংসদে বলেছেন, এ পর্যন্ত (৩০ আগস্ট) ২৪ কোটি ৫৪ লাখ ৫২ হাজার ৭০০ ডোজ টিকা সংগ্রহের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

গত রোববার পর্যন্ত হিসাবে, দেশে এখন পর্যন্ত টিকা এসেছে ৪ কোটি ৯৫ লাখ ৮৫ হাজার ৮০ ডোজ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গতকাল পর্যন্ত ২ কোটি ২৪ লাখ ৯৪ হাজার ৫৬৫ জনকে এক ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। আর দুই ডোজ টিকা পেয়েছেন ১ কোটি ৪৮ লাখ ২০ হাজার ৪৪২ জন। টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন মোট ৪ কোটি ২৫ লাখ ৯৫ হাজার ১৫০ জন। এর মধ্যে ৫ লাখ ৮৬ হাজার ২৭৪ জন পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করেছেন।