অক্সফোর্ডের টিকার অর্থ পরিশোধ এই সপ্তাহে

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনার টিকা উৎপাদন করছে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট
প্রতীকী ছবি: এএফপি

ভারত থেকে টিকা আনা এবং দেশে টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার জন্য এ সপ্তাহে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটকে অর্থ পরিশোধ করবে বাংলাদেশ। তবে এই টিকার ব্যাপারে আরও তথ্য সংগ্রহ করছেন স্বাস্থ্য বিভাগের সরকারি কর্মকর্তারা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তিনজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা যুক্তরাজ্য ও ভারতে অনুমোদন পেয়েছে। অক্সফোর্ডের টিকা পেতে সরকার ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের সঙ্গে চুক্তি করেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লক্ষ্য, টিকা দেশে পৌঁছানোর পর তা যেন দ্রুত মানুষকে দেওয়া সম্ভব হয়। তবে সেই প্রস্তুতির অনেক কিছুই বাকি রয়েছে।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মোকাবিলা করতে স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য নির্দেশিকা তৈরি প্রায় চূড়ান্ত। এটা তৈরির কারণ হলো, সমস্যা দেখা দিলেই যেন ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়।
অধ্যাপক শাহ মুনির হোসেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শক

বাংলাদেশ ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে ৩ কোটি টিকা আনবে। এই টিকা সরবরাহ করবে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। সিরাম ইনস্টিটিউট ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের কাছে একই দামে টিকা বিক্রি করবে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে সরকার, সিরাম ইনস্টিটিউট ও বেক্সিমকোর মধ্যে চুক্তি সই অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, প্রতিটি টিকার দাম পড়বে ৫ ডলার বা ৪২৫ টাকা।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, এই সপ্তাহের মধ্যে সিরাম ইনস্টিটিউটকে দেড় কোটি টিকার মূল্য পরিশোধ করা হবে।

দেশে যেকোনো টিকা ব্যবহার শুরুর আগে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। করোনার টিকা অনুমোদনের ব্যাপারে চিরাচরিত পথে যাবে না সরকার। এ ব্যাপারে অধ্যাপক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, জরুরি অনুমোদন দেওয়ার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশনা আছে। অনুমোদনের জন্য সময় নষ্ট করা হবে না।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর করোনার টিকার অনুমোদন না দেওয়া পর্যন্ত সিরাম ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে টিকা রপ্তানি করবে না।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা যুক্তরাজ্য বা ভারতে বিপুলসংখ্যক মানুষের মধ্যে দেওয়া শুরু হয়নি। এই টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী, তা এখনো জানা যায়নি। তবে এই টিকা দেওয়ার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে তা নিরসনের জন্য নির্দেশিকা তৈরি করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

ভারত থেকে টিকা আনার পাশাপাশি টিকা বিতরণ ও টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কোভিড-১৯ টিকা বিতরণ ও প্রস্তুতি কমিটির প্রধান এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা প্রথম আলোকে বলেন, মাঠপর্যায়ের কর্মীদের জন্য প্রশিক্ষণ নির্দেশিকা প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে। একইভাবে যোগাযোগসামগ্রী তৈরির কাজও চলছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে এসব চূড়ান্ত হবে।
ভারত থেকে টিকা আনার পর তা সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা স্বাস্থ্য বিভাগের নেই। এ জন্য সরকারের অন্য বিভাগের বিশেষ করে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের সংরক্ষণাগার ব্যবহারের পরিকল্পনা আছে। এ ছাড়া সুই-সিরিঞ্জ ও অন্যান্য সামগ্রী কেনার কাজও চলছে। কয়েকটি জেলার জন্য নতুন রেফ্রিজারেটর কেনারও কথা আছে। এসব কেনাকাটার কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

স্বাস্থ্য বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, টিকা গ্রহীতাদের তালিকা তৈরি করাই বড় চ্যালেঞ্জ। সরকার ইতিমধ্যে অগ্রাধিকার পাওয়া ব্যক্তিদের শ্রেণি ভাগ করেছে। এর মধ্যে আছে স্বাস্থ্যকর্মী, বীর মুক্তিযোদ্ধা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি, সিটি করপোরেশনের কর্মী, দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভোগা ব্যক্তি। এসব শ্রেণিভিত্তিক তালিকা তৈরিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে সহায়তা করছে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ।

এই তালিকা তৈরির ব্যাপারে মীরজাদী সেব্রিনা প্রথম আলোকে বলেন, পেশাভিত্তিক মানুষের তালিকা তৈরির একটি পদ্ধতি আইসিটি বিভাগ প্রায় চূড়ান্ত করেছে। তবে সাধারণ মানুষের তালিকা তৈরির পদ্ধতি চূড়ান্ত করতে আরও কিছু সময় লাগবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ব্যাপারে বিস্তারিত খোঁজখবর নিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এই টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী হতে পারে, তা জানার জন্য টিকা তৈরির বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্ত জোগাড় করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জনস্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শক কমিটি এখন তা পর্যালোচনা করছে।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা যুক্তরাজ্য বা ভারতে বিপুলসংখ্যক মানুষের মধ্যে দেওয়া শুরু হয়নি। এই টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী, তা এখনো জানা যায়নি। তবে এই টিকা দেওয়ার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে তা নিরসনের জন্য নির্দেশিকা তৈরি করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শক অধ্যাপক শাহ মুনির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মোকাবিলা করতে স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য নির্দেশিকা তৈরি প্রায় চূড়ান্ত। এটা তৈরির কারণ হলো, সমস্যা দেখা দিলেই যেন ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়।