অক্সফোর্ডের টিকার দ্বিতীয় ডোজের সমস্যা কাটছে

আজ আসছে অক্সফোর্ডের টিকা। এই টিকার দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় থাকা ১৫ লাখের বেশি মানুষের অনিশ্চয়তা দূর হচ্ছে।

ফাইল ছবি : রয়টার্স

দেশে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার দ্বিতীয় ডোজ পাওয়ার যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল, তা কাটতে যাচ্ছে। জাপান থেকে এই টিকার ২ লাখ ৪৫ হাজার ডোজ আসছে আজ শনিবার। আগামী সপ্তাহে আসতে পারে আরও ২৬ লাখ টিকা।

এ দিকে নিয়মিত টিকা আসার পরিপ্রেক্ষিতে টিকার জন্য বয়সসীমা কমিয়ে ১৮ বছর করার চিন্তা করছে সরকার।

দ্বিতীয় ডোজ নিশ্চিত করেই টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তা করেনি। তারা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ১ কোটি ৩ লাখ টিকা পেয়েছিল ভারত থেকে। এই টিকা সর্বোচ্চ ৫১ লাখ ৫০ হাজার মানুষকে দেওয়া সম্ভব। কিন্তু তারা প্রথম ডোজই দিয়ে দেয় ৫৮ লাখের বেশি মানুষকে। এতে টান পড়ে দ্বিতীয় ডোজে। প্রথম ডোজ পাওয়া ১৫ লাখের বেশি মানুষ দ্বিতীয় ডোজের অনিশ্চয়তায় ছিলেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক মোহাম্মদ রোবেদ আমিন গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগামীকাল শনিবার (আজ) কোভ্যাক্সের মাধ্যমে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ২ লাখ ৪৫ হাজার ২০০ টিকা আসছে। আগামী সপ্তাহে আসছে আরও ২৬ লাখের বেশি টিকা। এই টিকা আসার ফলে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে সব ধরনের অনিশ্চয়তা দূর হবে।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা জাপান থেকে আজ বেলা সোয়া তিনটায় ক্যাথে প্যাসিফিক এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে ঢাকায় আসার কথা রয়েছে।

সরকারের টিকা সংগ্রহ ও টিকা কেনার নানামুখী উদ্যোগের ফলে দেশে নিয়মিতভাবে টিকা আসছে। গত সোমবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, আগামী মাসের শেষ নাগাদ ১ কোটি ২৯ লাখ টিকা আসবে। এর মধ্যে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ২৯ লাখ, সিনোফার্মের ৪০ লাখ এবং বাকি ৬০ লাখ জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সায়েদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, নিজেদের সফলতা প্রমাণ করার জন্য সরকার টিকার সংখ্যার ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। কিন্তু সেই টিকা যুক্তিসংগতভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।

বয়সসীমা কমছে

সরকার টিকা গ্রহণকারীদের বয়সসীমা ১৮ বছরে নামিয়ে আনার চিন্তা করছে। গতকাল রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, বয়সসীমা কমিয়ে ১৮ বছর করা যায় কি না, সে বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। এটা কীভাবে করা হবে, সে ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করা হবে।

মূলত দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনা আছে সরকারের। এ জন্য বয়সসীমা কমিয়ে ১৮ বছর করার কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

একজন জনস্বাস্থ্যবিদ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, রাজধানী ঢাকার ১ কোটি ৩৫ লাখ মানুষকে টিকা দিতে চায় সরকার। সরকারি স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিওর স্বাস্থ্যকর্মীদের এই কাজে কীভাবে সম্পৃক্ত করা যায়, তা নিয়ে কাজ করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

তবে এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির একজন কর্মকর্তা বলেছেন, রাজধানীর জনসংখ্যা ১ কোটি ৭০ লাখ। এর ৮০ শতাংশকে টিকার আওতায় আনলে ১ কোটি ৩৬ লাখ মানুষ টিকা পাবেন।

এই টিকা যথেষ্ট নয়

জাতিসংঘের বিশ্ব জনসংখ্যা প্রক্ষেপণ (২০২০ সাল) অনুযায়ী, দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৪৭ লাখ। ফেব্রুয়ারিতে দেশে গণটিকাদান শুরুর দিকে টিকার বয়সসীমা ৫৫ থেকে কমিয়ে ৪০ বছর করা হয়েছিল। এরপর তা ৩৫ বছর করা হয়। গত সপ্তাহে ৩০ বছর বা তার বেশি বয়সীদের জন্য টিকার জন্য নিবন্ধন উন্মুক্ত করা হয়। এখন তা ১৮ বছর করার চিন্তা চলছে। বয়স কমিয়ে ৮০ শতাংশকে টিকার আওতায় আনতে ১৩ কোটি ১৭ লাখ ৬০ হাজার মানুষকে টিকা দিতে হবে। এদের দুই ডোজ করে দিতে মোট ২৬ কোটি ৩৫ লাখ ২০ হাজার টিকার প্রয়োজন হবে।

দেশে এ পর্যন্ত টিকা এসেছে ২ কোটি ১০ লাখ। আগামী মাসের শেষ নাগাদ আরও ১ কোটি ২৯ লাখ টিকা এলে সব মিলে টিকার মজুত দাঁড়াবে ৩ কোটি ৩৯ লাখে। এই টিকা ১ কোটি ৬৯ লাখ ৫০ হাজার মানুষকে দুই ডোজ করে দেওয়া সম্ভব হবে। এতে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী প্রায় ১৩ শতাংশ মানুষ টিকার আওতায় আসবে। বাকি প্রায় ৬৭ শতাংশ মানুষের টিকার ব্যাপারে এখনো অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।

গতকাল বিকেল পর্যন্ত টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন ১ কোটি ১৫ লাখ ৬৫ হাজার ৮৭ জন। বয়সসীমা কমানোর সঙ্গে সঙ্গে নিবন্ধনও বাড়বে বলে আশা করা যায়। এতে অপেক্ষাকৃত তরুণেরাই বেশি নিবন্ধন করবেন এবং টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকবেন।

চিকিৎসাবিজ্ঞানী অধ্যাপক লিয়াকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, প্রয়োজনের চেয়ে টিকার পরিমাণ কম। তাই যাঁদের প্রয়োজন বেশি, তাঁদের আগে টিকা নিশ্চিত করা দরকার। বয়স বেশি এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দিতে হতো। তা হলে করোনায় মৃত্যু কম হতো।