অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণ ও নিরাপদ এমআর সেবা বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট

গত ২২ জুন ২০১৪, প্রথম আলোর আয়োজনে ‘অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণ ও নিরাপদ এমআর সেবা, বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত হলো।
আলোচনা
আব্দুল কাইয়ুম: কেউ অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণ চায় না। তার পরও অনেক ক্ষেত্রে ইচ্ছার বিরুদ্ধে অথবা অসাবধানতাবশত নারীরা গর্ভধারণ করে। অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণের পর চিকিৎসকের পরামর্শে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ও গর্ভনিরোধক প্রজননস্বাস্থ্য-পণ্যের সঠিক সরবরাহ ও ব্যবহারবিধি সম্পর্কে সবাইকে আরও সচেতন করতে হবে। তাহলে অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব।
নিরাপদ এমআর সেবা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। এসব বিষয়ে নীতিনির্ধারণী মহল যাতে সুস্পষ্ট ধারণা পায়, তার জন্য গণমাধ্যমকে এ ক্ষেত্রে কাজ করতে হবে। এখন আলোচনার সূচনা করবেন মোহাম্মদ শরীফ।

মোহাম্মদ শরীফ: আজকের আলোচনার বিষয়টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। দুঃখজনক হলেও সত্য, সমাজে এ বিষেয় আলোচনা হয় না। সেদিক থেকে আজকের পদক্ষেপ একটি প্রয়োজনীয় ও সাহসী পদক্ষেপ। দেশে মাতৃমৃত্যুর হার কমে এসেছে। কিন্তু মায়েদের অসুস্থতা বাড়ছে। আমরা ১ শতাংশও মাতৃমৃত্যু রাখতে চাই না। এমআর (মাসিক নিয়মিতকরণ) সেবার সুযোগ–সুবিধা বৃদ্ধি করা খুবই জরুরি। নারীদের অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণ নিবারণের জন্য এ সেবার প্রয়োজন হয়। শহরের বস্তি, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল, পাহাড়ি ও উপকূলীয় এলাকা—এসব জায়গায় এমআর সেবার খুবই সমস্যা। এ জায়গাগুলোয় মানসম্মত এমআর সেবার ব্যবস্থা করতে হবে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ১৯৭৯ সাল
থেকে এমআর সেবা দিয়ে আসছে। এখনকার বাস্তবতায় এমআর সেবাকে সম্প্রসারণ করতে হবে। এমআর বিষয়টি নিয়ে আমরা জাতীয়ভাবে কৌশলগত সভা করেছি। পিপিডি (পার্টনারস ইন পপুলেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) ও অন্যদের সহযোগিতায় এমআর সেবা সম্প্রসারণ করছি। এখন মানসম্মত এমআর সেবা দেওয়ার বিষয়টি ভাবতে হবে।

জো থমাস: অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণ বন্ধ এবং নিরাপদ এমআর সেবা নিশ্চিতকরণই আজকের আলোচনার প্রধান উদ্দেশ্য। এখানে গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। যেমন, গণমাধ্যম এসব ক্ষেত্রে গবেষণালব্ধ ফলাফলকে প্রচার করে জনসচেতনতা তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারে; নীতিনির্ধারণী মহলে সংবেদনশীলতা বৃিদ্ধর জন্য ভূমিকা রাখতে পারে। অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণ রোধ ও নিরাপদ এমআর সেবার ক্ষেত্রে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। পিপিডি তার পরিচালিত চলমান কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গণমাধ্যম ও সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণ, নিরাপদ এমআর সেবা, জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি, গর্ভনিরোধক প্রজননস্বাস্থ্য-পণ্য ইত্যাদি বিষয়ের ওপর ধারণা প্রদান এবং মেডিকেল পেশাজীবীদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির মাধ্যমে এ–সম্পর্কিত বিষয়ের ওপর প্রবন্ধ ও সংবাদ প্রকাশে উৎসাহিত করতে চায়।
পিপিডি আরও পাঁচটি আন্তর্জাতিক সংস্থাকে (পপুলেশন কাউন্সিল, লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন, মেরিস্টোপস ইন্টারন্যশনাল, আইসিডিডিআরবি ও এপিএইচআরসি) সঙ্গে নিয়ে ইউকে এইডের আর্থিক সহযোগিতায় স্টেপআপ নামের একটি প্রকল্প পরিচালনা করে আসছে। এই প্রকল্পের অধীনে পরিচালিত গবেষণায় উঠে এসেছে যে মা ও নবজাতকের স্বাস্থে্যর জটিলতা এবং ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভপাতের মতো জটিলতার পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট ব্যয় এড়ানোর জন্য প্রজননক্ষম নারীদের অধিকতর মানসম্মত পরিবার পরিকল্পনা সেবায় বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরি।
বিশেষায়িত জনগোষ্ঠীর মধ্যে, বিশেষ করে নগরকেন্দ্রিক বস্তি ও দারিদ্র্যপ্রবণ গ্রামাঞ্চলে পরিবার পরিকল্পনা ও এমআরের মতো অত্যাবশ্যকীয় সেবাসম্পর্কিত সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। প্রজননস্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা প্রদানে ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে আইসিটি ও মোবাইল স্বাস্থ্য সেবার ব্যবহার বাড়ানো এখন সময়ের দাবি। সুবিধাবঞ্চিত যেসব এলাকায় সেবা সরবরাহ অপ্রতুল, সেখানে সেবার আওতা বাড়াতে পিপিডির সম্ভাবনা ভেবে দেখার অবকাশ রয়েছে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, গত ৪ জুন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের নেতৃত্বে এবং পিপিডির সমন্বয়ে ১২ সদস্যের একটি কার্যকরী কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটি গবেষণাপত্রের আলোকে যাচাই–বাছাই করে সরকারের কাছে পরিবার পরিকল্পনা সেবা ও এমআর সেবাসম্পর্কিত সুনির্দিষ্ট নীতিনির্ধারণী সুপারিশমালা পেশ করবে। পিপিডি ২৬টি উন্নয়নশীল দেশের একটি প্রতিষ্ঠান। সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সদস্যরাষ্ট্রগুলোর জনসংখ্যা, প্রজননস্বাস্থ্য এবং এ-সম্পর্কিত টেকসই উন্নয়নের জন্য পিপিডি জন্মলগ্ন থেকে কাজ করে যাচ্ছে।
পিপিডির ম্যান্ডেট হচ্ছে জনসংখ্যা, প্রজননস্বাস্থ্য এবং এ-সম্পর্কিত টেকসই উন্নয়নের প্রাপ্তিকে একীভূত করে সদস্যরাষ্ট্রগুলোর ব্যাপক জনগোষ্ঠীর উন্নতি সাধন। পিপিডি বিশ্বাস করে, নীতিনির্ধারণী মহলকে প্রভাবিত করতে পারে, এমন গবেষণা কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে অধিকাংশ মানুষের দোরগোড়ায় পরিবার পরিকল্পনা ও এমআরের মতো অত্যাবশ্যকীয় সেবা পৌঁছে দেওয়া যায়। এবং এসব সেবা খাতে সব প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকারভিত্তিক প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের রূপকল্প ২০২১-এর অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়ন সম্ভব। পিপিডি এ লক্ষ্যে সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করে যাচ্ছে।

ওবায়দুর রব: দেশের মোট গর্ভধারণের এক-তৃতীয়াংশ গর্ভধারণ অনিচ্ছাকৃত ও অপরিকল্পিত। বছরে মোট গর্ভধারণের সংখ্যা ৪০ থেকে ৪২ লাখ। এর এক-তৃতীয়াংশ, অর্থাৎ প্রায় ১৩ থেকে ১৪ লাখ গর্ভধারণ অনিচ্ছাকৃত। ধারণা করছি, ২৫ থকে ৩০ বছর পর আমাদের দেশে জন্ম ও মৃত্যুহার সমান হবে। অর্থাৎ, ২০ লাখ শিশু জন্ম নিলে ২০ লাখ মানুষ মারা যাবে। এখন মোটামুটি দেশে ৩০ লাখ শিশু জন্ম নিচ্ছে, ১০ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে। বছরে ২০ লাখ শিশু যোগ হচ্ছে। অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণের ক্ষেত্রে এমআরের প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে মেডিকেল এমআরের কথা ভাবা হচ্ছে। মেডিকেল এমঅর ৯৫ শতাংশ নিরাপদ।
আমাদের সরকার এটা নিয়ে ভাবছে। সরকার তার সরবরাহব্যবস্থার মধ্যে মেডিকেল এমআরের ওষুধ সরবরাহ করতে পারে। ১২ থেকে ১৩ শতাংশ নারী গর্ভধারণ করছেন সময়মতো হাতের কাছে পরিবার পরিকল্পনার উপকরণ না পাওয়ার জন্য। কিছুটা আগ্রহ, ইচ্ছা ও চেষ্টা থাকলে এই ১২ থেকে ১৩ শতাংশ গর্ভধারণ বন্ধ করা সম্ভব। এখন দেশের মানুষের দুটি সন্তান নেওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। হয়তো কয়েক দশক এ ধারণা চলতে থাকবে। এ অবস্থায় অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণের সংখ্যা বাড়তে থাকবে। এ ক্ষেত্রে পরিবার পরিকল্পনার পণ্যসামগ্রী বাড়াতে হবে এবং ভালো সেবা দিতে হবে। তাই দেশব্যাপী মানসম্মত এমআর সেবা সম্প্রসারণ করা খুবই জরুরি।

ফৌজিয়া আক্তার হুদা: স্টেপআপের সহযোগিতায় আমরা একটা জরিপ করেছি। জরিপটি ছিল শহরের বস্তিগুলোয়। এখানে বিবাহিত কিশোর-কিশোরীদের অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণের সংখ্য ৫৩ শতাংশ। গর্ভধারণের জাতীয় গড়ের তুলনায় এটা অনেক বেশি। পরিবার পরিকল্পনার উপকরণ অনেক ক্ষেত্রে হাতের কাছে পাওয়া যায় না। এ জন্য ১৫ শতাংশ কিশোর-কিশোরী অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণ করে। শহরের বস্তিগুলোয় এমআর সেবা ও সেই সঙ্গে প্রয়োজনীয় পরিবার পরিকল্পনার সামগ্রী সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। এমআরের সুযোগ–সুবিধা এবং সেবাদানকারীর সংখ্যাও বাড়ানো দরকার। আমরা কিছু জায়গায় এমআরের কাজ করছি। এসব কাজের মান বাড়ানো, কাজ হচ্ছে কি না তা দেখা এবং কাজের তদারকি বাড়াতে হবে।
অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে হয়। তারা অনেকে জানে না, কীভাবে পরিবার পরিকল্পনাসামগ্রী ব্যবহার করতে হয়। ব্যবহারের ধারাবাহিকতা থাকে না। তা ছাড়া পরিবারগুলোর কাছে বিবাহিত বধূটিকে প্রমাণ দিতে হয়, তার সন্তান ধারণের যোগ্যতা আছে কি না। এ জন্য পরিবারগুলোকে এসব ব্যাপারে ব্যাপক বোঝানো দরকার। অল্প বয়সে বিয়ে, অল্প বয়সে গর্ভধারণ—সব মিলিয়ে ভীষণ সমস্যার মধ্যে থাকে তারা। এমনও দেখেছি, ১৬ বছর বয়সে তিন বাচ্চার মা। উপযুক্ত পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতির মাধ্যমে প্রথম গর্ভধারণ বিলম্বিত করতে হবে। জটিল এমআরের ক্ষেত্রে সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছে কি না, সেটিও দেখতে হবে। এমআর–পরবর্তী জটিলতার ক্ষেত্রে সঠিক স্বাস্থ্য সেবার প্রয়োজন হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ সেবার ক্ষেত্রে মনোেযাগী হতে হবে। আইপাসের সহযোগিতায় নার্সদের মাধ্যমে এমআর করানোর উদ্যোগ নিয়েছি। কিছু রোগী এমন সময় আসে যে তােদর আর এমআর করানোর সময় থাকে না। তখন তারা অদক্ষ সেবাদানকারীর মাধ্যমে এমআর করায় এবং স্বাস্থ্য–ঝুঁকিতে পড়ে যায়। স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট সাবাইকে এ বিষয়ে ভাবতে হবে।

লতিফা সামসুদ্দিন: নারীর অধিকার বলতে গিয়ে আমরা প্রথমে বলি সে তার গর্ভ রাখবে কি না। সে কতবার গর্ভধারণ করতে চায়। গর্ভ রাখতে না চাইলে তার পদ্ধতি কী আছে। সে কীভাবে সুন্দর ও সুস্থ জীবন যাপন করবে। এসবই একজন নারীর অধিকার। মাসিক নিয়মিতকরণ নারীর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মাসিক অনিয়মিত বলতে মাসিক বন্ধ হতে পারে। মাসে দুবার মাসিক হতে পারে। দু-তিন মাসে একবার মাসিক হতে পারে। আমাদের দেশে দুভাবে এমআর হয়। একটি সার্জিক্যাল এবং অন্যটি মেডিকেল এমআর। সার্জিক্যাল এমআর ভালো। এটা দেশে অনেক দিন থেকে চলছে। কিন্তু এর কিছু সমস্যা রয়েছে। যেমন: যেখানে-সেখানে সার্জিক্যাল এমআর করা যায় না। এর জন্য ভালো জায়গা, ভালো পরিবেশসহ অারও কিছু বিষয় নিশ্চিত করতে হয়। তাই তৃণমূল পর্যায়ে সার্জিক্যাল এমঅার সম্ভব হয় না। কারণ, রোগীকে হাসপাতালে আসতে হয়। হাসপাতালে সার্জিক্যাল এমআরের সুযোগ–সুবিধা থাকতে হয় ইত্যাদি।
গ্রামাঞ্চলে সার্জিক্যাল এমআরের সুযোগ–সুবিধা নেই। দেশে সার্জিক্যাল এমআরের সুযোগ–সুবিধা সীমিত। এসব চিন্তা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মেডিকেল এমআর, অর্থাৎ ওষুধের মাধ্যমে এমআরের ব্যবস্থা করেছে। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও নেপাল এখন মেডিকেল এমআর করছে। কথা হলো, যেভাবেই এমআর করানো হোক না কেন, পরবর্তী সময়ে আবার যেন তার কোনো প্রকার অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণ না হয়, এর জন্য একটা জন্মনিয়ন্ত্রণব্যবস্থা তাকে দিতে হবে, যাতে তিন চার বছরের একটি বিরতি পায়। এর মধ্যে সে শরীরকে সুস্থ এবং নিজেকে গুছিয়ে নিতে পারবে।

মোমেনা খাতুন: ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশে এমআর শুরু হয়। এমআর মানে কোনো পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি নয়। প্রজনন স্বাস্থে্যর আটটি উপাদান আছে। এমআর এর মধ্যে একটি উপদান। মাতৃস্বাস্থ্য সেবার মধ্যে এমআরের বিষয়টি রয়েছে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর থেকে এমআর সেবা দেওয়া হয়। দেশের মোট এমআর সেবার তিন ভাগের দুই ভাগ সরকারিভাবে দেওয়া হয়। সরকারকেই এ কাজ সঠিকভাবে পরিচালনা করতে হবে। ২০১০ সালের এক জরিপে দেখা যায়, ৬৩ শতাংশ এমআর হয় সরকারিভাবে। ২৮ শতাংশ সেবা দেয় এনজিও খাত। ৯ শতাংশ এমআর হয় ব্যক্তি খাতে। এমআর সেবার বাধাগুলো দূর করতে হবে। এমআরের ব্যাপ্তি আরও বাড়াতে হবে। সুযোগ–সুবিধা বাড়ানো দরকার। দক্ষ এমআর সেবাকর্মী বাড়াতে হবে।
নারীদের আরও সচেতন হওয়া একান্ত প্রয়োজন। তারা জানে না কোথায় এমআর সেবা পাওয়া যাবে। কীভাবে পাওয়া যাবে। সরকারি হাসপাতালে বিনা পয়সায় এমআর সেবা পাওয়ার কথা। কিন্তু কেউ কেউ রোগীদের কাছ থেকে পয়সা নেন বা প্রাইভেট কোনো হাসপাতালে যেতে বলেন। এটা আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। এমআর-পরবর্তী সেবার জন্য সঠিক নির্দেশনা থাকতে হবে, যাতে প্রত্যেকের প্রয়োজন অনুসারে উপযুক্ত সেবা দেওয়া যায়। এমআর কার্যক্রম নিয়ে দাতা সংস্থার মধ্যে কেউ ইতিবাচক, কেউ নেতিবাচক। এমআর সেবা মাতৃস্বাস্থ্য সেবার একটি অংশ। সবাইকে এখানে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

জহিরুল ইসলাম: সুইডিশ দূতাবাস এমআর কার্যক্রমের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। আলোচনায় এসেছে, অনেক দাতা সংস্থা এমআর কর্মসূচিতে তহবিল দিতে চায় না। যেমন: আইসিডিডিআরবির একটি প্রোগ্রামে এমআর কার্যক্রমের জন্য একটি দাতা সংস্থা তাদের তহবিল প্রত্যাহার করে। আমরা সমপরিমাণ তহবিল নিয়ে আইসিডিডিআরবির এমআর কার্যক্রমে অংশ নিই। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি এমআর কার্যক্রম সুইডিস তহবিলে পরিচালিত হয়। শহরের স্বাস্থ্যসেবা প্রকল্পে প্রায় ২০ মিলিয়ন ডলার সুইডিস সরকার দেয়। স্বাস্থ্য খাতের অপারেশন প্ল্যান, নিরাপদ এমআর, এমআর-পরবর্তী সেবাসহ অন্যান্য কার্যক্রমে সুইডিস সরকার ৬৪ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেয়। গত পাঁচ বছরে সুইডিস সরকার এ দেশের স্বাস্থ্য খাতে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে।
মাসিক নিয়মিতকরণ এবং এর পরবর্তী কার্যক্রম এ দেশে সম্প্রসারিত হয়েছে। ফলে, মাতৃমৃত্যু কমেছে। স্বাস্থ্য খাতসংশ্লিষ্ট সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এটা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু সবার কাছে সমান স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে পারিনি। যেমন: গরিব, দুর্গম অঞ্চল, শহরের বস্তি—এসব মানুষের কাছে ঠিকমতো প্রজননস্বাস্থ্য সেবা পৌঁছানো যায়নি। কিন্তু আমাদের সংবিধানে সবার কাছে সমান সেবা পৌঁছানোর অঙ্গীকার আছে। বাংলাদেশ মুসলিম দেশের মধ্যে এমআর কার্যক্রমে অনেক বেশি এগিয়ে আছে। আমরা জানি, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে এ দেশের মা-বোনেরা নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। তাই ১৯৭৪ সালে এমআর কার্যক্রম বিশেষ কর্মসূচির মধ্যে নেওয়া হয়। ১৯৭৬ সালে এ কার্যক্রম জনসংখ্যানীতিতে আসে। ১৯৭৮ সালে এমআর প্রশিক্ষণ এবং সেবা শুরু হয়। ১৯৭৯ সালে পরিবার পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত হয়। সেই ধারাবাহিকতায় আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আগে কেবল এফডব্লিউভি ও চিকিৎসকেরা এ সেবা দিত। এখন নার্সরা এ সেবা দিতে পারবে। অন্যান্য সুযোগ–সুবিধা বাড়ছে। তবে মানসম্মত সেবার দিকে অবশ্যই নজর দিতে হবে। এমআর সেবাটি নারীর অধিকার, নারীর ক্ষমতায়নের সঙ্গে যুক্ত।

এস এম শহীদুল্লাহ: মাত্র তিন বছর আগেও এ বিষয়ে খুব একটা কথা বলা যেত না। আজকের এ সাহসী উদ্যোগের জন্য প্রথম আলো ও পিপিডিকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এমআরের ক্ষেত্রে যথেষ্ট উদ্যোগ নিয়েছে। তারা এ সেবার ক্ষেত্রে সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে। একসময় নির্দিষ্ট কিছু সেবাদানকারী এ সেবা দিতে পারত। এখন মন্ত্রণালয় থেকে আদেশ হয়েছে, প্রশিক্ষণ পেলে যেকোনো নার্স এমআর-সংশ্লিষ্ট সেবা দিতে পারবে। সেবার মানের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই।
মানসম্মত সেবার জন্য লজিস্টিক সাপোর্ট দিতে হবে। লজিস্টিক না দিলে প্রশিক্ষণ দিয়ে কোনো লাভ নেই। অনেক প্রশিক্ষণ দিয়েছি। প্রশিক্ষণের পর লজিস্টিক দিতে পারিনি। যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছে, তারা কাজ শুরু করতে পারেনি। কিছুদিন পর ভুলে গেছে। আমাদের জন্য সুখবর হলো, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর অনেকটাই এগিয়ে আসছে। তারা লজিস্টিকসহ সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে এবং সারা দেশে এ কার্যক্রমের প্রসার ঘটছে। আমরা সামনে এগোচ্ছি। পরিবার পরিকল্পনায় সামিগ্রক অপূর্ণ চাহিদা (আনমেট নিড) ১২ শতাংশ। এ ব্যাপারে আমাদের সবার উদ্যোগী হওয়া দরকার। বস্তি ও দুর্গম অঞ্চলের মতো কিশোর-কিশোরীদের কাছেও পরিবার পরিকল্পনার সামগ্রী পৌঁছানো যাচ্ছে না। ঐতিহাসিকভাবে পরিবার পরিকল্পনার সঙ্গে শর্ত রয়েছে যে এ সেবা পেতে হলে বিবাহিত হতে হবে। তবে অন্যেদর জন্যও পরিবার পরিকল্পনার সামগ্রীর বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে। আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতার দিকটিও বিবেচনায় নিতে হবে। এনজিওগুলো যতই কাজ করুক, আমি বিশ্বাস করি, সরকারের কোনো বিকল্প নেই। তহবিল শেষ হলে এনজিও চলে যাবে। যেকোনো কাজকে টেকসই করতে হলে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

মো. মাঈনুদ্দীন আহমেদ: অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা নিতে হবে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরকে। অধিদপ্তর এ জন্য কাজও করছে। অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে অগ্রগতি হচ্ছে। কেবল পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহার করে ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ মাতৃমৃত্যুর হার কমাতে পারি। দীর্ঘ ও স্বল্পমেয়াদি উভয় পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি কাজে লাগাতে হবে। আমরা মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছি। দীর্ঘমেয়াদি গর্ভনিরোধক পদ্ধতির কার্যক্রম আরও সম্প্রসারণ করতে হবে, এটি মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় করে তুলতে হবে। মাঠপর্যায়ের কর্মীদের সঙ্গে এটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। স্বল্পমেয়াদি পদ্ধতি থেকে কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি পদ্ধতিতে যাবে, সে ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। দেশের দুর্গম এলাকায় পরিবার পরিকল্পনার সেবা পৌঁছাতে সমস্যা হয়। এসব জায়গায় স্বেচ্ছাসেবকের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারা এসব এলাকায় সেবা দিচ্ছে। ফলে, পরিবার পরিকল্পনার সেবার আওতা বাড়ছে। শহরের বস্তিগুলোয় কাজের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি চুক্তি হয়েছে। শহর ও শহরের বস্তিতে যারা ইতিমধ্যে কাজ করছে, তাদের সঙ্গে আমরা বসব। কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি গর্ভনিরোধক সেবাকে শহর ও বস্তিতে বিস্তৃত করতে পারি, সে বিষয়ে কাজ করব। সরকার ও অনেকগুলো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এ ক্ষেেত্র কাজ করছে। অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণ কমানো ও নিরাপদ এমআর সেবার মান ক্রমে উন্নত হতে থাকবে। একটি সমস্যা প্রায়ই দেখা যায় যে অধিকংশ মা-ই সন্তান জন্মদানের পর সন্তান নিতে চায় না। কিন্তু তারা কোনো পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতিও ব্যবহার করে না। এ ক্ষেত্রেও আমরা কাজ করছি। সবকিছু মিলিয়ে আমরা সামনের দিকে এগোচ্ছি।

মো. আলমগীর আহমেদ: এমআর বিষয়ে আজকের গোলটেবিল বৈঠক প্রমাণ করে এমআর কতখানি সফল। আমরা মাতৃস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করি। কখানো চাই না একজন মা সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যাক, অথবা গর্ভধারণ অবস্থায় মারা যাক। ইচ্ছাকৃত-অনিচ্ছাকৃত দুভাবেই গর্ভধারণ হতে পারে। কিন্তু অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণ প্রতিরোধে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এমআর সেবার জন্য সঠিক সময় একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়। সঠিক সময়ে হাসপাতালে না এলে এমআর সেবা জটিল আকার ধারণ করে। এ ব্যাপারে নারীদের সচেতন করতে হবে। আমরা এমআর, এমআর-পরবর্তী সেবা ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা একসঙ্গে দেওয়ার ব্যবস্থা করি। এতে সেবা গ্রহণকারীরা বেশি সুবিধা পাচ্ছে। সেবাগুলো বিভিন্ন জায়াগায় থাকলে অনেক সময় সেবা গ্রহণ বাধাগ্রস্ত হয়। কিছুদিন আগেও আমাদের স্টাফ, নার্সরা এমআর করাতে পারত না। আইপাসের উদ্যোগে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এখন নার্সরা এমআর করতে পারে। এখন সেবা গ্রহণকারীর সংখ্যা নয়, বরং কে কত মানসম্পন্ন সেবা দিতে পারবে, সেটি ভাবছে। তাই সামনের দিকে সেবার মান আরও বাড়বে বলে অাশা করি।

লরনা থামবেজে: মাতৃমৃত্যু হ্রাসের জন্য লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। এমআর সেবা নিশ্চিত করার জন্যও একইভাবে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করতে হবে। কিশোর–কিশোরীদের অধিকারের বিষয়টিতে গুরুত্ব দিতে হবে। পিপিডি কিশোর-কিশোরীদের অধিকার ও প্রয়োজন নিয়ে কাজ করছে। তাদের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। প্রত্যেক নারী ও দম্পতির সঙ্গে আলাদাভাবে আলোচনা করতে হবে।
তাদের এসব বিষয়ে সচেতন করতে হবে। বিবাহিত নারীদের যাতে অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণ না হয়, সে বিষয়টিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে এবং তাদের সচেতন করতে হবে। হাতের কাছে পর্যাপ্ত জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রী সহজে প্রাপ্তির ব্যবস্থা করতে হবে। একজন নারী নিজে সিদ্ধান্ত নেবে, সে কখন সন্তান ধারণ করবে। এই স্বাধীনতা তাকে দিতে হবে। পারিবারিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ থাকতে হবে। যখন পর্যাপ্ত জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রী থাকবে এবং মাসিক নিয়মিতকরণের ব্যবস্থা থাকবে, তখন দম্পতিরা কোনো প্রকার শঙ্কা ছাড়াই তাদের জৈবিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবে এবং অনিচ্ছকৃত গর্ভধারণ হ্রাস পাবে। নারীরা কেবল স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারলেই এসব সমস্যা থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। গণমাধ্যম ব্যাপক প্রাচার–প্রচারণার মাধ্যমে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ও সাধারণ মানুষদের সচেতন করতে পারে। বাংলাদেশে মাসিক নিয়মিতকরণের জন্য সরকারি নীতি আছে। পিপিডি সরকারকে সহযোগিতা করছে। এ দেশের সংস্কৃতিতে মাসিক নিয়মিতকরণের বিষেয় খুব একটা আলোচনা হয় না। কিন্তু আলোচনা হলে বিষয়টি সবার জন্য সহজ হতো। মাঠকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে এ বিষয়ে আলোচনা করার সময় সবাই সহজভাবে নিত। এখন নীতিনির্ধারক, গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজ—সবাইকে এ ক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

নূর হোসেন তালুকদার: প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে তিন ঘণ্টাব্যাপী একটি সভা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, পরিবার পরিকল্পনা মানে শুধু জন্মনিয়ন্ত্রণ নয়; বিষয়টি এখন কেবল জন্মনিয়ন্ত্রণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এখন মাতৃমৃত্যু, এমআর সেবা ও কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রেও পরিবার পরিকল্পনা কাজ করছে। পরিবার হচ্ছে রাষ্ট্রের প্রথম সংগঠন। এখানে কেবল পরিবার পরিকল্পনা থাকলে হবে না, পরিবারে শিক্ষাসহ অন্য সব বিষয় থাকতে হবে। পরিবারগুলোকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করা প্রথম কাজ। কারণ, পরিবারগুলো শিক্ষিত হলে তারা নিজ দায়িত্বে পরিবার পরিকল্পনাসহ স্বাস্থ্যবিষয়ক যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আজকে কেন মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব? শিক্ষার অভাবের জন্যই সচেতনতার অভাব।
আমাদের কর্মীবাহিনী গ্রামপর্যায়ে আছে। তারা অনেকে কাজ করে। অনেকে করে না। এখানে তদারকির অভাব রয়েছে। কর্মীদের মোটিভেশন প্রয়োজন। তারা সরকারের বেতন নিচ্ছে, অথচ কাজ করছে না, এমন অভিযোগ রয়েছে। রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের মানুষের প্রতি তাদের দায়িত্ব রয়েছে। এ বিষয়ে তাদের সচেতন করতে হবে। তারা নিজের বাড়িতে থেকে কাজ করে। এ সুবিধা থাকা সত্ত্বেও যদি কাজ না করে, তাহলে তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করতে হবে। ইতিমধ্যে অনেককে বাদ দেওয়া হয়েছে। মাঠপর্যায়ের কর্মীদের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা—এ দুই অধিদপ্তরের কাজ করতে হয়। এতে তাদের কাজে ফাঁকি দেওয়াটা আরও সহজ হয়েছে। কারণ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে কর্মীদের খুঁজতে গেলে তারা বলে, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কাজে ছিলাম। আবার পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর থেকে খঁুজতে গেলে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাজে ছিলাম। এটা একটা সমস্যা তৈরি করছে।
আমি মনে করি, থানার পর থেকে গ্রাম পর্যন্ত যে ধাপগুলো আছে, এগুলো পরিবার পরিকল্পনার আওতায় আনা একান্ত প্রয়োজন। তা না হলে কর্মীরা কাজে ফাঁকি দিতে থাকবে। পরিবারের মধ্যে নৈতিক শিক্ষা খুব জরুরি। আমরা অনেক ক্ষেত্রে এগিয়েছি। কিন্তু নৈতিকতা, মূল্যবোধ ইত্যাদি বিষয় থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। এখন আমরা পরিবার পরিকল্পনা কাজের মধ্যে শিক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছি। শিক্ষা থাকলে এমআর, এমআর-পরবর্তী সেবাসহ নিজের জীবন সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকবে। আসুন সবাই মিলে নৈতিকতা ও মূল্যবোধসম্পন্ন পরিবার গড়ে তুলি।
আব্দুল কাইয়ুম: অনেক উন্নয়নশীল দেশ অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণ রোধ ও নিরাপদ এমআর সেবার বিষয়ে কাজ করছে। বাংলাদেশেও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণ যেন না হয়, সে জন্য নারী-পুরুষ উভয়কেই সচেতন হতে হবে। অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণ রোধের ক্ষেত্রে নিরাপদ এমআর সেবার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এসব বিষয়ে এতক্ষণ একটি ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। অনেকগুলো সুপারিশ ও পরামর্শ এসেছে। আশা করি, কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
যাঁরা অংশ নিলেন
নূর হোসেন তালুকদার : মহাপরিচালক, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর
মোহাম্মদ শরীফ : পরিচালক (মা ও শিশু), লাইন ডিরেক্টর (এমসিআরএএইচ), পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর
লতিফা সামসুদ্দিন : সভাপতি, অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনেকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ
জো থমাস : নির্বাহী পরিচালক, পার্টনারস ইন পপুলেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট
ওবায়দুর রব : কান্ট্রি ডিরেক্টর, পপুলেশন কাউন্সিল
ফৌজিয়া আক্তার হুদা : ডেপুটি প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর, আইসিডিডিআরবি
মো. মাঈনুদ্দীন আহমেদ: লাইন ডিরেক্টর, সিসিএসডিপি, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর
এস এম শহীদুল্লাহ : কান্ট্রি ম্যানেজার, আইপাস, বাংলাদেশ
মোমেনা খাতুন : প্রজননস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ
জহিরুল ইসলাম : প্রোগ্রাম অফিসার, সিডা
লরনা থামবেজে : ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর, পার্টনারস ইন পপুলেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট
মো. আলমগীর আহমেদ: উপপরিচালক, পিএইচএন ও পিএম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
সঞ্চালক
আব্দুল কাইয়ুম : সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো
সহযোগিতায় পার্টনারস ইন পপুলেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (পিপিডি)