ভাস্কর সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদের অমর ভাস্কর্য ‘অপরাজেয় বাংলা’ বাংলাদেশের গণমানুষের প্রতিনিধিত্ব করে। এটি বাঙালির দ্রোহের প্রতীক। প্রতি মুহূর্তে এটি গণসংগ্রামের ইতিহাস সৃষ্টিতে অনুপ্রেরণা জোগায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) ক্যাফেটেরিয়ায় গতকাল শুক্রবার সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদের স্মরণসভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ এই স্মরণসভার আয়োজন করে। সভায় সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদের জীবনের বিভিন্ন দিকের পাশাপাশি তাঁর নির্মিত ভাস্কর্যগুলোর নির্মাণ সময়ের অনেক অজানা কথা উঠে আসে।
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। ১৯৭২ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহসভাপতি হওয়ার পরই কলাভবনের সামনে ‘অপরাজেয় বাংলা’ ভাস্কর্য নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘অপরাজেয় বাংলা তৈরি করার সময় আমরা ভেবেছিলাম এটি মুক্তিযুদ্ধের সাফল্য ও ঐতিহ্যকে প্রতিধ্বনিত করবে, হয়েছেও তাই।’ তিনি একে শুধু শিল্পের নন্দনতত্ত্ব দিয়ে বিবেচনা না করে এর ইতিহাসের প্রতি নজর দেওয়ার আহ্বান জানান।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পর আমরা কলাভবনের সামনে ছোট একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করেছিলাম। পরে একদিন রাতের আঁধারে এক ছাত্রনেতার মদদে সেই ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলা হয়। আমরা তখন সিদ্ধান্ত নিই, কলাভবনের সামনে এমন একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করা হবে, যা সব অত্যাচার, দুর্যোগ সয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে।’
সভায় ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান বলেন, এর গঠনশৈলী একেবারেই ভিন্ন রকমের। আবদুল্লাহ খালিদ যে পদ্ধতি অনুসরণ করে কাজটি করেছেন, সেভাবে এ দেশে কেউ কখনো করেননি। অপরাজেয় বাংলা মুক্তিযুদ্ধের এক প্রতীক।
স্থপতি রবিউল হুসাইন বলেন, সমসাময়িক ভাস্কররা যখন পশ্চিমা ধাঁচে ঝুঁকছেন, তখন প্রাচ্যের ধারাতেই চোখ রেখেছিলেন আবদুল্লাহ খালিদ। তিনি উত্তর আধুনিক শিল্পের প্রতিনিধিত্ব করে গেছেন।
সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদের ভাই সৈয়দ আহমেদ মর্তুজা বলেন, ছেলেবেলায় তিনি ভীষণ দুরন্ত ছিলেন। স্কুল-কলেজের দেয়ালে ছবি এঁকে বেড়াতেন।
স্মরণসভায় উপস্থিত ছিলেন সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদের স্ত্রী কুলসুম খালিদ। চারুশিল্পী সংসদের সহসভাপতি আবদুল মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, ভাস্কর মজিবুর রহমান, শিল্পকলা একাডেমির চারুকলা বিভাগের পরিচালক মুনিরুজ্জামান, সাংবাদিক সালেহ চৌধুরী বক্তব্য দেন।