অবশেষে চার লেন হচ্ছে, ব্যয় বাড়ছে ১৩৮ কোটি টাকা

চট্টগ্রামের বায়েিজদ বোস্তামী সড়ক থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত নির্মাণাধীন দুই লেনের সংযোগ সড়ক অবশেষে চার লেন হতে যাচ্ছে। এতে ১৭২ কোটি টাকার এ প্রকল্পের বর্তমান ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ৩১০ কোটি টাকায়। সংযোগ সড়কের এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে নগরের যানজট অনেকটাই কমে আসবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ ও প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।
বাংলাদেশ প্ল্যানার্স ইনস্টিটিউটের চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি আলী আশরাফ প্রথম আলোকে বলেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে উত্তর চট্টগ্রাম, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির বাসিন্দাদের ঢাকায় যেতে নগরে প্রবেশ করতে হবে না। একইভাবে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে আসা যানবাহন নগরে প্রবেশ না করেই ওই অঞ্চলে চলে যেতে পারবে। ফলে নগরে যানজট কমে যাবে।
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এই সড়ককে চট্টগ্রামের প্রথম বাইপাস সড়ক হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। দুই লেনের প্রকল্প চার লেনে উন্নীত করার প্রস্তাব দিয়ে ২ অক্টোবর সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (আরডিপিপি) গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এর আগে ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর একনেকের সভায় ‘বায়েিজদ বোস্তামী থেকে ঢাকা ট্রাংক রোড পর্যন্ত সংযোগ সড়কের সম্প্রসারণ, উন্নয়নসহ এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের বহিঃসীমানা বরাবর নতুন লুপ রোড নির্মাণ’ নামের দুই লেনের প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।
সিডিএর প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, নগরের বায়েিজদ বোস্তামী সড়ক থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দুই লেনের সড়ক নির্মাণ করার জন্য ২০১৫ সালের জুনে স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এরপর নির্মাণকাজ শুরু হয় ওই বছরের সেপ্টেম্বরে। তখন এর নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছিল ১৭২ কোটি ৪৯ লাখ ৩২ হাজার টাকা। এদিকে প্রকল্পের নির্মাণকাজ চলাকালে গত আগস্টে অনুষ্ঠিত গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটির সভায় রাস্তাটি দুই লেনের পরিবর্তে চার লেনে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত হয়।
সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক রাজীব দাশ প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রাম নগরের আউটার রিং রোডের একটি অংশ হচ্ছে এই বাইপাস সড়ক। প্রথমে চার লেনের প্রস্তাবনা দিয়েই উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু পরে একনেকে দুই লেনের জন্য প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে এখন মন্ত্রণালয়ের প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংশোধিত ডিপিপি পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই এর অনুমোদন পাওয়া যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
প্রকৌশলী রাজীব দাশ বলেন, সড়কটি দুই লেন হলে কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া যেত না। এ ছাড়া পরবর্তী সময়ে চার লেন করতে গেলে তখন অনেক জটিলতা সৃষ্টি হতো। এখন নির্মাণাধীন অবস্থায় চার লেনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে জনগণ অনেক বেশি সুফল পাবেন।
সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে কোনো বাইপাস সড়ক নেই। এ কারণে নগরের যানজট তীব্র হচ্ছিল। ফৌজদারহাট-বায়েজীদ বোস্তামী বাইপাস সড়কটি নির্মিত হলে নগরে যানজট অর্ধেক কমে যাবে। কাপ্তাই, রাঙামাটি, চট্টগ্রামের হাটহাজারী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া থেকে আসা ঢাকাগামী গাড়িগুলো চট্টগ্রাম নগরে প্রবেশ না করেই এই সড়ক ব্যবহার করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলে যেতে পারবে। এতে করে নগরের যান চলাচল সহজতর হবে এবং প্রচুর পরিমাণে জ্বালানি ও কর্মঘণ্টার সাশ্রয় হবে।
সিডিএর প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, বর্তমানে নগরের বায়েজীদ বোস্তামী সড়কের বাংলাবাজার এলাকা থেকে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের নির্মাণাধীন মূল ক্যাম্পাস পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের অংশে পিচঢালাই দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এই অংশে সড়কের দুই পাশে সাড়ে ১২ ফুট করে নালা নির্মাণের কাজও শেষ হয়েছে। এ ছাড়া ইতিমধ্যে প্রকল্প এলাকায় পাঁচটি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের অধীনে পাঁচটি সেতু নির্মাণ করা হবে। এখন একটির নির্মাণকাজ চলছে।
প্রকৌশলী রাজীব দাশ জানান, চার লেনের প্রকল্পের জন্য আগেই জমি অধিগ্রহণ করে রাখা হয়েছিল। এখন এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের ক্যাম্পাসের পাশে লুপ রোড নির্মাণ করার জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হবে। এই কাজ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে।