অবিন্তার স্বপ্নের বিদ্যালয়ে তাঁকে স্মরণ

অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশন বিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষপূর্তিতে বক্তব্য দিচ্ছেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। ছবি: প্রথম আলো
অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশন বিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষপূর্তিতে বক্তব্য দিচ্ছেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। ছবি: প্রথম আলো

এক বছর আগে শুরু হয়েছিল রাজধানীর ভাটারা এলাকার অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশন বিদ্যালয়টির। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত অংশের মেয়েশিশুরা এই বিদ্যালয়ে পড়ছে। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। সেই বিদ্যালয়েই এক অনুষ্ঠানে আজ শনিবার সকালে স্মরণ করা হলো অবিন্তা কবিরকে।

২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় নিহত হন অবিন্তা কবির। তাঁর স্বপ্ন ছিল এমন একটা ফাউন্ডেশন করা, যেখান থেকে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত অংশকে এগিয়ে নিতে সহায়তা দেওয়া যায়। তাঁর স্মৃতি ধরে রাখতে ২০১৭ সালের ৪ মার্চ প্রতিষ্ঠা করা হয় অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশন। ফাউন্ডেশনের অধীনেই চলছে বিদ্যালয়টি।
বিদ্যালয়টির প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, অবিন্তার জীবন সংক্ষিপ্ত হয়েছে কিছু উন্মাদ হত্যাকারীর ভক্তদের দ্বারা। কিন্তু তাঁর স্বপ্ন বেঁচে থাকবে। বিদ্যালয়টি নিয়ে তিনি বলেন, সুবিধাবঞ্চিতদের এই বিদ্যালয় হচ্ছে তাঁর স্বপ্নের প্রতিফলন। বিদ্যালয়টি ভবিষ্যতে আরও উন্নতি করবে।

অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশন বিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষপূর্তিতে বক্তব্য দিচ্ছেন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ। ছবি: প্রথম আলো
অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশন বিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষপূর্তিতে বক্তব্য দিচ্ছেন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ। ছবি: প্রথম আলো

আরেক বিশেষ অতিথি ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ বলেন, অবিন্তা কবিরের জীবন ছিল খুবই স্বল্পস্থায়ী। এই জীবনে সে অনেক কিছু ভেবেছিল। তাঁর ভাবনা ছিল দরিদ্র জনগণকে নিয়ে, তাদের শিক্ষা নিয়ে। ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য নিয়ে সমাজে যা বিরাজ করে, তা নিয়েও সে চিন্তা করত। এগুলো সে বলেছে, অনেক সময় লিপিবদ্ধ করেছে নোট খাতায়।
অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশনের অধীনে গত বছরের ৫ জুলাই থেকে শুরু হয় অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশন বিদ্যালয়ের পথচলা। শুরুতে শিক্ষার্থী ছিল ৩৬ জন। এক বছরে তা হয়েছে ৬৪ জনে। শিক্ষক আছেন ছয়জন। শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় সবকিছুই বিদ্যালয় থেকে দেওয়া হয়। বর্তমানে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছে।
অনুষ্ঠানে অবিন্তার স্বপ্ন নিয়ে ‘পার্পেল বাটারফ্লাই’ শীর্ষক একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। সে প্রামাণ্যচিত্রটি উপস্থিত ব্যক্তিদের অনেকের চোখ ভিজে আসে। তেমনি একজন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট। অনুষ্ঠানে তিনি অবিন্তার কথা বলতে গিয়ে বলেন, ‘অবিন্তা বেঁচে আছে। সে বেঁচে আছে এই প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মাঝে। তাঁকে আমাদের বিদায় জানানোর কিছু নেই। অবিন্তা আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবে সারা জীবন।’
বিদ্যালয়টির প্রথম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে আরও কথা বলেন অবিন্তার মা রুবা আহমেদ, স্যার ফজলে হাসান আবেদের সহধর্মিণী লেডি সাইয়্যেদা সারওয়াত আবেদ। অনুষ্ঠানে আরও ছিল শিক্ষার্থীদের নানা পরিবেশনা।