অভিযোগ, শঙ্কায় আজ ৬৪ পৌরসভায় ভোট শুরু

সবচেয়ে বেশি অভিযোগ হচ্ছে ‘পোলিং এজেন্টদের ভয় দেখানো’ ও ‘ভোটকেন্দ্রে আসতে নিষেধ করা’ নিয়ে। অভিযোগের তির মূলত ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের দিকে।

পাবনার পৌর নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয় সকাল আটটায়। সকাল থেকেই উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে কেন্দ্রে ভিড় করেন ভোটাররা। ইছামতী উচ্চবিদ্যালয়, রাধানগর, পাবনা, ৩০ জানুয়ারি
ছবি: হাসান মাহমুদ

তৃতীয় ধাপে ৬৪টি পৌরসভায় নির্বাচনে আজ শনিবার সকাল আটটা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারণায় বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ–সংঘাত হয়েছিল দ্বিতীয় ধাপের পৌর নির্বাচনের আগেও। ১৬ জানুয়ারি ওই নির্বাচনের দিনও বিভিন্ন জায়গায় সংঘাত হয়েছে, সিরাজগঞ্জে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হন বিজয়ী কাউন্সিলর প্রার্থী। এরপর গত বুধবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও সহিংসতায় দুজন নিহত হন। এসব ঘটনা শঙ্কা বাড়িয়েছে।

নির্বাচন ঘিরে বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নানা অভিযোগও রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ হচ্ছে ‘পোলিং এজেন্টদের ভয় দেখানো’ ও ‘ভোটকেন্দ্রে আসতে নিষেধ করা’। এসব অভিযোগের তির মূলত ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর দিকে। পুলিশের দিকেও আঙুল উঠেছে কোথাও কোথাও।

‘সম্ভাব্য পোলিং এজেন্টদের ভয়ভীতি দেখানো অব্যাহত থাকার’ অভিযোগ তুলে নির্বাচনের এক দিন আগেই মৌলভীবাজার পৌরসভার বিএনপির মেয়র প্রার্থী অলিউর রহমান নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। গতকাল শুক্রবার মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ ঘোষণা দেন। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের প্রধান সমন্বয়ক জেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ফয়জুল করিম, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফখরুল ইসলাম প্রমুখ।

মেয়র প্রার্থী অলিউর রহমান তাঁর লিখিত বক্তব্যে বলেন, ২৭ জানুয়ারি সরকারদলীয় প্রার্থীর সমর্থকদের তাণ্ডবের বিষয় প্রশাসনকে অবহিত করেছিলেন। এ বিষয়ে প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় তাঁর সমর্থক ও কর্মীরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকা এবং তাঁর সম্ভাব্য পোলিং এজেন্টদের ভয়ভীতি দেখানো অব্যাহত থাকায় ৩০ জানুয়ারির নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে তিনি সরে দাঁড়ানোর এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই প্রহসনের নির্বাচনে অংশ নিয়ে সরকারদলীয় প্রার্থীকে বৈধতা প্রদান করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছেও নেই তাঁর ও তাঁর দলের।

যশোরের মনিরামপুর পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের তালিকা ধরে ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের প্রার্থীর লোকজন ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন বলে অভিযোগ বিএনপির প্রার্থী শহীদ মো. ইকবাল হোসেনের। তিনি বলেন, ‘পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের প্রার্থী কাজী মাহমুদুল হাসান বাইরে থেকে মোটরসাইকেলে করে লোকজন এনেছেন। তারা বিএনপির কর্মী–সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছে। তাদের স্লোগান হলো, “ভোটকেন্দ্রে যাবি না, পিঠের চামড়া থাকবে না”।’

বিএনপি নেতা ইকবাল বলেন, ‘১২টি কেন্দ্রের ৬৯টি বুথের জন্য বিএনপির ১০০ জন পোলিং এজেন্টের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের কর্মীরা তাঁদের বাড়িতে গিয়ে হুমকি দিয়ে আসছেন। এমনকি পুলিশও এ পর্যন্ত পাঁচ–ছয়জন পোলিং এজেন্টের বাড়িতে গেছে। যে কারণে বিএনপির সবাই আতঙ্কে ভুগছেন। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মনিরামপুরের আওয়ামী লীগের প্রার্থী কাজী মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘সারা দেশে নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীরা যে ধরণের মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ করে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছেন, তারই অংশ হিসেবে মনিরামপুর পৌর নির্বাচনেও বিএনপির প্রার্থী অভিযোগ করছেন। এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।’

তারা বিএনপির কর্মী–সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছে। তাদের স্লোগান হলো, “ভোটকেন্দ্রে যাবি না, পিঠের চামড়া থাকবে না”।
শহীদ মো. ইকবাল হোসেন, যশোরের মনিরামপুর পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী

ভোলার দৌলতখান পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী আনোয়ার হোসেন (কাকন) গত বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে তাঁর সমর্থকদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন। উপজেলা বিএনপির কার্যলয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি প্রার্থী বলেন, ‘নৌকার সমর্থকেরা বিএনপির কার্যালয়ে হামলা করেছেন। জনসংযোগে হামলা করেছেন। মাইক ভাঙচুর করেছেন। মাঠ ছেড়ে চলে যেতে বলেছেন।’

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ পৌরসভায় গত মঙ্গলবার থেকে তিন দিনে নৌকার সমর্থকেরা মোটরসাইকেল মহড়া দিচ্ছেন প্রতিটি এলাকায়। রাতে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে।

শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দেখে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসেন বয়োবৃদ্ধরাও। ইছামতী উচ্চবিদ্যালয়, রাধানগর, পাবনা, ৩০ জানুয়ারি
ছবি: হাসান মাহমুদ

নির্বাচন থেকে সরে যেতে বিএনপির মেয়র প্রার্থীকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিএনপির সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রে না যেতে বলা হচ্ছে বলে অভিযোগ বিএনপির মেয়র প্রার্থী তোফাজ্জল হোসেনের। তিনি বলেন, নির্বাচন থেকে সরে যেতে তাঁদেরকে মুঠোফোনসহ বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। সুষ্ঠু ভোট হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন না। প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি বলে জানান। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর লোকজন ছয়-সাতটি ওয়ার্ডে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আসতে নিষেধ করছেন।

লক্ষ্মীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ নাজিম উদ্দীন বলেন, হুমকি-ধমকির বিষয়টি বিএনপির মেয়র প্রার্থী জানিয়েছেন। নাশকতা ও সহিংসতা রোধে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

তবে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের পাটোয়ারী উল্টো অভিযোগ করে বলেন, বিগত বিএনপি সরকারের আমলে এখানে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। কেন্দ্রে তারা পেশিশক্তি প্রয়োগ করেছিল। এবারও তারাই ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রে সন্ত্রাসী হামলা করতে পারে।

নৌকার পক্ষে ফল নেবার কৌশল গ্রহণ করা শেষ। এখন কেবল ভোটের দিন প্রয়োগের পালা।
সালমা আনিকা, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী পৌরসভা নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী পৌরসভা নির্বাচনে সুষ্ঠু ভোট হওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে বিএনপি ও স্বতন্ত্র এক মেয়র প্রার্থী। এরই মধ্যে তাঁরা শঙ্কার কথা জানিয়ে প্রতিকার চেয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেছেন। ধানের শীষের তোফাজ্জল হোসেন খান উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক। এর আগে মেয়র পদে তিনবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে দুবার জয় পান। তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘প্রচারণায় পদে পদে বাধা পেয়েছি। পরিস্থিতি ভালো ঠেকছে না। ক্ষমতাসীনের মনে মন্দ কিছু আছে।’

একই শঙ্কার কথা জানালেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সালমা আনিকা। তাঁর স্বামী তরিকুল মোশতাক কটিয়াদী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক আহ্বায়ক। সালমা বলেন, ‘নৌকার পক্ষে ফল নেবার কৌশল গ্রহণ করা শেষ। এখন কেবল ভোটের দিন প্রয়োগের পালা।’

তবে দুই শক্ত প্রতিপক্ষের অভিযোগকে নিছক নির্বাচনী কৌশলী বক্তব্য হিসেবে দেখছেন নৌকার শওকত উসমান। তিনি বর্তমান মেয়র।