অযথাই রাবার ড্যাম!
নাটোরের গুরুদাসপুরে আত্রাই নদীতে স্থাপন করা রাবার ড্যামটি চলনবিলের কৃষিকে সমৃদ্ধ করতে পারছে না। এখনো আগের মতোই ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভর করে সেচের চাহিদা মেটাতে হচ্ছে। আর এ সেচসংকট মোকাবিলায় বাড়তি জ্বালানি খরচ গুনতে হচ্ছে কৃষকদের।
কৃষকেরা জানান, রাবার ড্যামটি চালু হওয়ার এক দশকেও পানিপ্রবাহের নালাগুলো সংস্কার হয়নি। এ কারণে রাবার ড্যামটি প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না। অথচ চলনবিলে বোরোখেতে সহজলভ্য সেচসুবিধা নিশ্চিত করে ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি, পানি সংরক্ষণ করে আমনসহ রবিশস্য আবাদ করা, মাছ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্যই আত্রাই নদীতে ড্যামটি স্থাপন করা হয়।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), গুরুদাসপুর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০২ সালে উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের যোগেন্দ্রনগরে রাবার ড্যাম স্থাপনের উদ্যোগ নেয় কৃষি মন্ত্রণালয়। ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ড্যামটি চালু হয়। প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ধরা হয় প্রায় চার কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু ড্যামের জন্য তিন কোটি টাকা এবং রাস্তা ও সেতু নির্মাণের জন্য এক কোটি টাকা খরচ হয়। আত্রাই নদীতে নির্মিত ড্যামটি দৈর্ঘ্যে ৪৫ মিটার ও প্রস্থে ৭ দশমিক ৫ মিটার।
এক ফসলের ওপর নির্ভরশীল চলনবিলের গুরুদাসপুর, সিংড়া, তাড়াশ, চাটমোহর (কিছু অংশ) উপজেলার ১৫ হাজার হেক্টর বোরো ধানের জমি সহজ সেচের আওতায় আনাই ছিল ড্যাম স্থাপনের মূল লক্ষ্য। পাশাপাশি চলনবিলের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত নদী-নালাগুলো সংস্কার করে পানি জমিয়ে রেখে কম খরচে বোরোসহ, আমন, ভুট্টা, গমের আবাদ করা। একই সঙ্গে জমিয়ে রাখা পানিতে দেশীয় মাছের উৎপাদন বাড়ানোও ড্যাম স্থাপনের অন্যতম লক্ষ্য ছিল।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাবার ড্যাম-সংলগ্ন মরা আত্রাই নদীর উৎসমুখ পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। এ কারণে ড্যামে আটকানো পানি চলনবিলে ঢুকতে পারছে না। তা ছাড়া চলনবিলের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত আত্রাই, নন্দকুজা, গুমানী, ভদ্রাবতী, বেশানী নদীসহ প্রায় ১৭টি নালা দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। খালগুলোতে পানি নেই। ভরা মৌসুমে চলনবিলে সেচসংকট দেখা দিয়েছে।
খুবজীপুর গ্রামের কৃষক আবদুল কুদ্দুস বলেন, চলনবিলের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত নদীসহ খালগুলো সংস্কার না করায় রাবার ড্যামে আটকানো পানিতে কৃষক সেচ দিতে পারছেন না। চলনবিলের মাত্র ১০ ভাগ কৃষক কোনোরকমে ড্যামের সুবিধা পাচ্ছেন। অন্যরা গভীর-অগভীর নলকূপের পানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে আবাদ করছেন। এতে জ্বালানি খরচ বাড়ছে।
রাবার ড্যাম সেচ ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাজদার হোসেন বলেন, চলনবিলের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী ও নালাগুলো সংস্কার না হলে রাবার ড্যামের সুবিধা কৃষকেরা ভোগ করতে পারবেন না।
তা ছাড়া শুকনো মৌসুমের শুরুতে রাবার ড্যামের পানি ধরে রাখার জন্য চলনবিলের পিপলা ও কুন্দইল নামক স্থানে বাঁধ দেওয়া প্রয়োজন। বিষয়টি তাঁরা নাটোরের জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানিয়েছেন।
নাটোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ সমন্বিত কৃষি উন্নয়ন বিভাগ (পানাসী) গুরুদাসপুর কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী দ্বীন মোহামঞ্চদ বলেন, পিপলা ও কুন্দইল পয়েন্টে দুটি ছোট আকারের রাবার ড্যাম স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।