২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

রেহানার বক্তব্যে সংসদে হইচই, ছয়বার মাইক বন্ধ

সংসদে অশালীন ও অসংসদীয় ভাষা ব্যবহার করে সংসদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করার প্রতিবাদে ওয়াকআউট করেছেন সরকারদলীয় সাংসদ এম আবদুল লতিফ।এ ঘটনাকে সংসদের‘বিরল’ ঘটনা বলে মনে করছেন সংসদ পরিচালনাকারীরা।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী, তাঁর ছেলে ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিএনপিদলীয় সাংসদ রেহানা আক্তার রানুর দেওয়া বক্তব্যকে কেন্দ্র করে সংসদে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। রানুর বক্তব্যের পর সরকারদলীয় সাংসদ ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পী বক্তব্য দিলে ১০ মিনিটের জন্য বিরোধী দল সংসদ থেকে ওয়াকআউট করে।

বাজেটের ওপর বক্তব্য দিতে গিয়ে আবদুল লতিফ বলেন, কয়েকজন সাংসদের বক্তব্যের কারণে সংসদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এর প্রতিবাদে তিনি কোনো বক্তব্য না দেওয়ার কথা জানিয়ে স্পিকারকে বলেন, তিনি ওয়াকআউট করছেন। তিনি অধিবেশন থেকে বেরিয়ে না গিয়ে নির্ধারিত আসন ছেড়ে অন্য আসনে গিয়ে বসেন। ওই সাংসদ বক্তব্য দেওয়ার সময় বিএনপির সাংসদরা হাততালি দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা হাততালি দিচ্ছেন কেন? কয়েকজন সাংসদের কারণে মহান সংসদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হচ্ছে।’

রানুর বক্তব্য ও সংসদে উত্তেজনা

রানুর ১৭ মিনিটের বক্তব্যে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী মোট ছয়বার মাইক বন্ধ করে দেন। তিনি রানুর বক্তব্যকে সম্পূর্ণ বিধিবহির্ভূত বলে উল্লেখ করেন।

রানুর বক্তব্যের সময় বিরোধীদলীয় সাংসদদের অনেকেই টেবিল চাপড়ে স্বাগত জানান। রানু প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর বক্তব্য দিতে দাঁড়ান। তবে তাঁর বক্তব্যে বাজেট বিষয়ে তেমন কিছুই ছিল না। সরকারদলীয় সাংসদেরা কখনো দাঁড়িয়ে আবার কখনো টেবিল চাপড়ে প্রতিবাদ জানান। কয়েকজন সাংসদ মাইক বন্ধ করে দেওয়ার দাবি জানান। এ সময় প্রধানমন্ত্রী অধিবেশনকক্ষে ছিলেন। তিনি তাঁর চেয়ারে চুপচাপ বসেছিলেন।

স্পিকার রানুকে বাজেটের ওপর বক্তব্য দিতে বারবার অনুরোধ করেন। তিনি মাইক বন্ধ করলে বিএনপির সাংসদ সৈয়দা আশিফা আশরাফী ও শাম্মী আক্তার স্পিকারের দিকে আঙুল উঁচিয়ে ‘মাইক দে মাইক দে’ বলে চিত্কার করতে থাকেন। অন্য সাংসদেরাও মাইক দিতে বলেন। রানুর বক্তব্য শেষ হওয়ার পর স্পিকার মাগরিবের নামাজের বিরতি দেন। কিন্তু তখনও দুই দলের সাংসদেরা অধিবেশনকক্ষে দাঁড়িয়ে থাকেন। অধিবেশন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় বিরোধী দলের সাংসদ শহীদ উদ্দিন চৌধুরী ও মাহবুব উদ্দিনের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন সরকারদলীয় সাংসদ জয়নাল আবেদিন ও আসলামুল হক। তবে জাতীয় পার্টির সাংসদ ফজলে রাব্বির হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। সরকারদলীয় সাংসদ তারানা হালিম সামনের সারিতে বসা বিএনপির দুই সাংসদ মওদুদ আহমদ ও এম কে আনোয়ারকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনাদের মধ্যে কি কেউ নেই যে এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত রাখতে পারেন।’ এ সময় ওই দুই নেতা চুপচাপ বসেছিলেন। বিরোধী দল অধিবেশন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরও সাত-আট মিনিট সরকারদলীয় সাংসদেরা অধিবেশনকক্ষে ছিলেন। রানুর বক্তব্যের পর তাঁরা হতবিহ্বল ও উত্তেজিত হয়ে হন।

কী বলেছিলেন রানু

‘রক্তপিপাসু এই সরকারের পতন চাই’ বলে রেহানা আক্তার রানু তাঁর বক্তব্য শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘১৯৯৬ সালের ২৩ জুন শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার জন্য কাতান শাড়ি পরে সেজেগুজে বসেছিলেন। তিনি অপেক্ষা করছিলেন, বলছিলেন, আয় সন্ত্রাসী, আয় বাকশালি খুন করিতে যাই, লাশের মালা গলায় দিয়ে শপথ নিতে যাই।’

এ সময় স্পিকার তাঁকে বিধি মেনে বক্তব্য দেওয়ার জন্য বলেন। জবাবে রানু বলেন, আমরা এখানে সরকারের গুণগান করতে আসিনি, রবীন্দ্রসংগীত করতে আসিনি। আমরা এসেছি, সরকারের সমালোচনা করতে। এই সরকার গত চার বছরে করেনি এমন কোনো অপকর্ম নেই। এরা কেবল নারীকে পুরুষ আর পুরুষকে নারী করেনি। সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৪-০তে হেরেছে। তাঁদের জনপ্রিয়তা তলানিতে এসে ঠেকেছে। এখন তাঁরা পরাজয়ের বেদনায় ভুগছেন। তিনি বলেন, সরকার চাচ্ছে বিরোধী দল যেন সংসদে না আসে। আমরা ওয়াকআউট করব। কিন্তু সংসদ ছাড়ব না। সরকারের দুর্নীতির যে তথ্য আছে তা প্রকাশ করব। দুর্নীতির এই কাগজপত্র দেখালে, মতিউর রহমান রিন্টু লেখা বইটা পড়া শুরু করলে সরকারি দলের ওনারা বান্দরের মতো লাফালাফি করবেন, কিন্তু ওয়াকআউট করতে পারবেন না।

গত ২০ জুন সংসদে সরকারদলীয় এক সাংসদের বক্তব্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, এই বক্তব্য অশ্লীল, অশোভন, অন্ধকার জগতের বক্তব্য। তিনি ফেনসিডিল ও ইয়াবা খেয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সম্পর্কে কুিসত ও নোংরা বক্তব্য দিয়েছেন। আমাদের নেত্রী সম্পর্কে যে বইয়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বক্তব্য দিয়েছেন, সে ধরনের কোনো বইয়ের অস্তিত্ব নেই। তাঁর স্বপ্নদোষ আছে। তিনি স্বপ্নে পেয়েছেন। সংসদ নেতা এখান থেকে বসে চিরকুট পাঠান, তাঁর অন্যেরা বলেন। সংসদের এক নম্বর ব্যক্তি ঠিক হলে, আমরাও ঠিক হব। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি নামাজ পড়েন আর আমাদের নেত্রীর বাসায় নাকি মদ পাওয়া যায়। আমাদের নেত্রীকে বাড়ি থেকে বের করা হয়েছে। অর্ধেক মদ প্রধানমন্ত্রী খেয়ে বাকি অর্ধেক ওই ফ্রিজে রেখে এসেছেন। প্রধানমন্ত্রীর ছেলে জয় মাতাল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মাতালের মায়ের বড় গলা’। এই খলনায়িকাদের এ দেশের মানুষ চেনে। আমরা এর ধিক্কার জানাই।

স্পিকার রানুকে বিধি অনুযায়ী বক্তব্য দেওয়ার আহ্বান জানালে তিনি বলেন, ‘২০ জুন যে বক্তব্য সরকারদলীয়রা দিয়েছেন, তা কি বাজেট বক্তব্য ছিল। আমি কেবল পাল্টা জবাব দিচ্ছি। আমাকে বলতে দিতে হবে। আপনি যদি বক্তব্য দিতে না দেন, তবে সবাই আপনাকে মাজাভাঙা স্পিকার বলবে।’

কর্নেল তাহেরকে নিয়ে দেওয়া রায়কে বিএনপি মানে না বলে মন্তব্য করে রানু বলেন, এটা থাবা বাবার রায়। এই রায় মানি না, মানব না। উচ্চ আদালত তো বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে রং হেডেড বলেছেন। তা হলে তো তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারেন না। তিনি প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে বলেন, ‘খুনি বাবার খুনি কন্যা, নাম তার ভালোবাসিনা’। রানু বলেন, আমাদের ভাষা যদি নিষিদ্ধপল্লির হয়, তবে তাদের ভাষা সেই পল্লির সর্দারণীর।

রেহানা আক্তার বলেন, বিএনপি জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করেনি। জঙ্গি নেতা শায়খ আবদুর রহমান আওয়ামী লীগের এক নেতার আত্মীয়। আওয়ামী লীগের সবাই হলো ওই জঙ্গির শালা। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা তাঁর স্বামী নির্যাতিত পুরুষ ওয়াজেদ মিয়াকে শান্তি দিতে পারেননি। অশান্তিতে রেখেছেন। তিনি কীভাবে ১৬ কোটি মানুষকে শান্তি দেবেন।

রানু বলেন, দুই পুলিশ কর্মকর্তা হারুন ও বিপ্লব বিরোধী দলের চিফ হুইপকে পিটিয়েছেন। বিপ্লব বিরোধী দলের সাংসদদের শুয়োরের বাচ্চা বলেছেন।

বিরোধী দলের ওয়াকআউট

ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পী বলেন, বিরোধী দলের একজন সাংসদ সরকারি সাংসদদের মস্তিষ্ক বিকৃত বলেছেন। আসলে ওই সাংসদেরই বিকৃত মস্তিষ্ক। তার মানসিক চিকিত্সা হওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, জিয়া ছিলেন অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী  একজন খুনি। তাঁর হাত রক্তে রঞ্জিত। এই খুনি কালো চশমায় চোখ ঢেকে রাখতেন।

বাপ্পীর বক্তৃতার সময় বিরোধী দল ওয়াকআউট করে। অবশ্য ১০ মিনিট পর বাপ্পীর বক্তৃতা শেষ হলে তাঁরা আবার ফিরে আসেন। স্পিকার দুইবার তাঁর মাইক বন্ধ করে বাজেটের ওপর বক্তব্য রাখার অনুরোধ করেন।

বাপ্পী বলেন, গর্ব মোদের আলাদা ম্যাট্রিক ফেল ফালুদা। তিনি জানজুয়ার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন। তিনি বাঙালি, না পাকিস্তানি জানতে ইচ্ছা করে। তিনি স্বামী হত্যার বিচার চান না। স্বামীর মৃত্যুতে কাঁদেননি। কিন্তু বাগিয়ে নিয়েছেন বাড়িসহ নানা সুযোগ-সুবিধা। আদালতের রায়ে বাড়ি থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর তিনি বাড়ির জন্য কেঁদেছেন। বাপ্পী বলেন, খালেদা জিয়া ওমরাহ করতে যান একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে নিয়ে। ওই ব্যক্তি তার হুইল চেয়ার বহন করেন। ওই ব্যক্তি কী তার মাহরাম? তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার পাঁচটি জন্মদিন। চা-বাগানে ইহুদি পিতার ঔরসজাত সন্তান বলেই তাঁর জন্মের ঠিক নেই। উইলসন ও লক্ষ্মী রানির মারমার নাতি তারেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় মুচলেকা দিয়ে বিদেশ চলে যান। তিনি বলেন, তারেক একটি আতঙ্কের নাম। দুবাইয়ে মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহিম ও ছোটা শাকিলের সঙ্গে বৈঠক করে দেশকে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের স্বর্গরাজ্যে বানাতে চেয়েছিল। তিনি বলেন, কোকো ফুসলিয়ে আরেকজনের স্ত্রীকে বাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করেন।

বাপ্পীর বক্তব্য চলাকালে সাতটা ৪৫ থেকে সাতটা ৫৫ মিনিট পর্যন্ত সংসদ থেকে ওয়াকআউট করে বিএনপি।

এদিকে সরকারদলীয় সাংসদ আফছারুল আমিন বলেন, জিয়ার লাশ ওই কবরে নেই। এ জন্য বিএনপি কবর জিয়ারত করে না। তার বক্তব্য দিয়ে সংসদে আবার উত্তেজনা সৃষ্টি করে বিএনপি।