অসহায়দের কাছে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন তরুণেরা

অসহায় পরিবারের কাছে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন শরীয়তপুরের একদল তরুণ। ছবি: প্রথম আলো
অসহায় পরিবারের কাছে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন শরীয়তপুরের একদল তরুণ। ছবি: প্রথম আলো

করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট দুর্যোগকালে অসহায় মানুষের কাছে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছেন একদল তরুণ। সচেতন করতে প্রচারপত্র ও সুরক্ষা সামগ্রীও বিতরণ করছেন তাঁরা। শরীয়তপুরের বিভিন্ন গ্রামে কয়েক শ তরুণ ও শিক্ষার্থী ঝুঁকি নিয়ে এসব কাজ করে যাচ্ছেন। গত এক মাস ধরে নানা পর্যায়ে চলছে তাদের এসব কার্যক্রম।

৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এর পরপরই শরীয়তপুরের বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, ক্রীড়া ও ছাত্র সংগঠনের তরুণেরা মাঠে নামেন। প্রথম দিকে তাঁরা মানুষকে সচেতন করতে প্রচারপত্র বিলি করেন। দ্বিতীয় ধাপে শুরু করেন সুরক্ষা সামগ্রী সাবান, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক, গ্লাভস, ব্লিচিং পাউডার ও অন্যান্য জীবাণুনাশক বিতরণের কাজ। এরপর যখন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সবাইকে ঘরে থাকতে বলা হয়, তখন অসহায় শ্রমজীবী মানুষের বাড়িতে বাড়িতে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে যাচ্ছেন তাঁরা।

ডামুড্যা উপজেলায় কাজ করছে জয়ন্তী নামে একটি সংগঠন। জাজিরায় কাজ করছে জাজিরা করোনা প্রতিরোধ কমিটি, গোসাইরহাটে উদ্ভাসিত গোসাইরহাট, শরীয়তপুর সদরে বিডি ক্লিন, এফসি ক্লাব, শরীয়তপুর জেলা ছাত্রলীগ, সদর উপজেলা যুবলীগসহ বিভিন্ন সংগঠন। সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত অধিকাংশ তরুণই স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থী। তাদের নিজেদের পড়াশোনার খরচ বাঁচিয়ে সেই অর্থ দিয়ে এসব কার্যক্রম চালাচ্ছে তাঁরা।

এফসি ক্লাবের উপদেষ্টা রুবেল মুন্সী বলেন, 'এটি একটি ফুটবল ক্লাব। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া কয়েকজন মিলে এই উদ্যোগ নিয়েছি। নিজেদের পড়াশোনার খরচ বাঁচিয়ে সেই অর্থ থেকে সংকটময় সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। যত দিন পারব, এ কাজ চালিয়ে যাব।' তিনি জানান, তাঁরা এ পর্যন্ত ৪ হাজার ৫০০ স্যানিটাইজার, ২ হাজার সাবান, ৫ হাজার গ্লাভস বিতরণ করেছেন। এ ছাড়া গত ১৫ দিন ধরে জীবাণুনাশক স্প্রে করছেন। মানুষের বাড়িতে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন।

শরীয়তপুর জেলা ছাত্রলীগ নেতা আসাদুজ্জামান শাওন বলেন, 'আমাদের নেতা সাংসদ ইকবাল হোসেন অপু দিনমজুর শ্রেণির মানুষদের খাদ্য সহায়তা দিচ্ছেন। ওই খাদ্য সহায়তা আমরা যারা তরুণ কর্মী আছি, তাঁরা মানুষের বাড়িত পৌঁছে দিচ্ছি। হাট-বাজারে জীবাণুনাশক ছিটাচ্ছি।'

অসহায় পরিবারের কাছে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন শরীয়তপুরের একদল তরুণ। ছবি: প্রথম আলো
অসহায় পরিবারের কাছে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন শরীয়তপুরের একদল তরুণ। ছবি: প্রথম আলো

জাজিরা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্য মো. পলাশ খান বলেন, 'আমাদের মতো দেশে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকানো অনেক কঠিন। মানুষ ঘরে থাকলে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখলে সংক্রমণ ঠেকানো যেতে পারে। এ কারণে আমরা এক মাস ধরে মানুষকে সচেতন করার কাজ করে যাচ্ছি। এখন অসহায় হয়ে পড়া দিনমজুর শ্রেণির ঘরে খাবার পৌঁছে দিচ্ছি।'

বিডি ক্লিন সংগঠনের সদস্য আবদুল মোতালেব বলেন, 'কয়েক দিন ধরে আমরা প্রশাসনের পক্ষে খাদ্যসামগ্রী নিজেরা বহন করে দরিদ্র মানুষের বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছি। বিভিন্ন স্থানে জীবাণুনাশক ছিটাচ্ছি।'

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, 'অন্যরকম একটি সংকট মোকবিলা করছি আমরা। সরকারের একার পক্ষে এই সংকট কাটিয়ে ওঠা প্রায় অসম্ভব। সব মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে পারব। মানুষ মানুষের জন্য—এমন আবেদন থেকেই শরীয়তপুরে বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি এগিয়ে এসেছেন। আমি সরকারের পক্ষ থেকে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।'