অ্যাসিডে চোখ হারানো মাসুদা যেতে চান বহুদূর

অ্যাসিড-সন্ত্রাসের শিকার হয়ে দুই চোখ হারানো রংপুর শহরের মাসুদা আক্তার মোটেও দমেনি। বড় ভাইয়ের কাছে শুনে শুনে পড়া চালিয়ে এসেছে সে। এবার মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৩ দশমিক ৬ পেয়ে এসএসসি পাস করেছে। যেতে চায় আরও বহুদূর। উচ্চতর পড়াশোনা করতে চায় সে।
বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ২০১২ সালের ১৩ আগস্ট শহরের বাবু খাঁ এলাকায় নিজ বাড়িতে দুর্বৃত্তদের ছোড়া অ্যাসিড-সন্ত্রাসের শিকার হয়ে দুই চোখ হারায় মাসুদা। চিকিৎসার জন্য মাসুদা বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছে। সে রংপুর শহরের সমাজকল্যাণ বিদ্যাবীথি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ থেকে পরীক্ষা দিয়েছিল।
গত বুধবার ফল প্রকাশের পর মুঠোফোনে সে প্রথম আলোকে বলে, ‘আগে সুন্দর পৃথিবী দেখতাম। এখন কিছুই দেখতে পাই না। সবই অন্ধকার। এসব কথা বলতে গেলে ভীষণ খারাপ লাগে। কান্না পায়। আবার ভাবি, আমি থামব না। পড়াশোনা চালিয়ে যাব। পড়াশোনা শেষ করে সেবামূলক কাজ করব। অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াব। নির্যাতিত মানুষের পাশে থাকব।’
বড় ভাই মাজেদুর রহমান পাঠ্যবই থেকে শব্দ করে পড়তেন। আর বোন মাসুদা শুনত সেই পাঠ। এ ছাড়া বড় ভাই মুঠোফোনেও সেই পাঠ রেকর্ড করে দিতেন। এভাবে শুনে শুনে চলে তার পড়া। পড়া আত্মস্থ করা। শ্রুতিলেখকের সহযোগিতা নিয়ে সে পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে।
২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর ‘ভাইয়ের কাছে শুনে শুনে চলে মাসুদার পড়া’ শিরোনামে প্রথম আলোর প্রথম পাতায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর প্রথম আলো ট্রাস্ট তার পাশে এসে দাঁড়ায়। মাসুদাকে শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হয়। এই বৃত্তির আওতায় সে এসএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা চালিয়ে নিতে প্রতি মাসে এক হাজার টাকা পেয়েছে।
মাসুদার মা সুলেখা পারভিন বলেন, ‘মেয়ের দুই চোখ হারানোর কষ্ট যে কী, আমি মা হিসেবে তা বুঝতে পারি। তাকে হাত ধরে ধরে এখানে-ওখানে নিয়ে যেতে হয় প্রতিদিন।’
মাসুদার বাবা মহুবার ইসলাম যখন মারা যান, তখন সে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। বড় দুই ভাই ও মাকে নিয়ে তাদের অভাব-অনটনের সংসার। এক ভাই ঢাকায় পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। আরেক ভাই রংপুরে একটি দরজির দোকানের কর্মচারী।