আইনি সহায়তা নিতে আসা ৮০ ভাগই নারী

আইনি সহায়তা নিতে আসা লোকজন
ছবি: সংগৃহীত

জন্মের পরপরই মা-বাবার বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়। মায়ের ভালোবাসায় বড় হতে থাকেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী তরুণী। পাননি বাবার স্নেহ ও ভরণপোষণ। ১৮ বছরের ওই তরুণী পিতৃপরিচয়ের দাবিতে ১১ এপ্রিল চট্টগ্রাম জেলা লিগ্যাল এইড (আইনগত সহায়তা) কার্যালয়ে এসে লিখিত আবেদন করেন। মাত্র ১০ দিনের মধ্যে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে তাঁকে কন্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেন বাবা। ভরণপোষণের দায়িত্ব নেন ওই বাবা। তাঁর মতো অনেক অসহায় বিচারপ্রার্থীর ভরসার জায়গা হয়ে উঠেছে জেলা লিগ্যাল এইড কার্যালয়।

আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস। ‘বিনা খরচে নিন আইনি সহায়তা শেখ হাসিনার সরকার দিচ্ছে এই নিশ্চয়তা’ এই বিষয়টিকে প্রতিপাদ্য রেখে এবার দিবসটি পালিত হচ্ছে। রয়েছে শোভাযাত্রাসহ নানা কর্মসূচি।

চট্টগ্রাম জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা (সিনিয়র সহকারী জজ) রাজিয়া সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ জন আইনি সহায়তা নিতে আসেন। তাঁদের ৮০ ভাগই নারী। প্রথমে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করা হয়। এতে ফল পাওয়া না গেলে ভুক্তভোগীর পক্ষে মামলা করা হয়।

রাজিয়া সুলতানা আরও বলেন, এই কার্যালয় থেকে বিচারপ্রার্থীরা ফৌজদারি, দেওয়ানি, পারিবারিক মামলায় আইনি সহায়তা পাচ্ছেন। আবার অনেক ভুক্তভোগীকে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থার মাধ্যমে মীমাংসায় উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। মামলা না করে আদালতের বাইরে আপস–মীমাংসার মাধ্যমে সমাধান করার ব্যবস্থাই বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি।

চট্টগ্রাম জেলা লিগ্যাল এইড সহকারী মো. এরশাদুল ইসলাম জানান, যৌতুক দাবি, নারী নির্যাতন, দেনমোহর ও ভরণপোষণ আদায়ের প্রতিকার চেয়ে করা আবেদনই বেশি। বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে তাঁদের অনেকেই ফিরে পেয়েছেন স্বামীর স্বীকৃতি, সন্তান। পুনরুদ্ধার হয়েছে অনেকের দাম্পত্য সম্পর্ক।

সূত্র জানায়, আইনি সহায়তা পেতে ২০১৫ সালে আবেদন জমা পড়ে ১ হাজার ৪২৪টি। ওই বছরই নিষ্পত্তি হয় ৩০০টি। ২০১৬ সালে ২ হাজার ১৫২টি আবেদন জমা পড়ে, নিষ্পত্তি হয় ৬৬৩টি। ২০১৭ সালে ৬৬৪টির মধ্যে নিষ্পত্তি হয় ৫৭৬টি। ২০১৮ সালে ৪৫৬টির মধ্যে ৪২১টি নিষ্পত্তি হয়। ২০১৯ সালে ৭০০টির মধ্যে ১৯৩টি। ২০২০ সালে ৪০৩টির মধ্যে ৯৩টি ও ২০২১ সালে ৫৬৬টির মধ্যে ১৩৯টি আবেদন নিষ্পত্তি হয়। এসব আবেদনকারীর ৮০ ভাগই নারী।

চট্টগ্রাম আদালত ভবনের মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের ছয়তলায় জেলা লিগ্যাল এইড কার্যালয়। মামলা পরিচালনার জন্য এই কার্যালয়ে ৮৫ জন আইনজীবী রয়েছেন। গত মঙ্গলবার দুপুরে কার্যালয়ে গিয়ে ১২ জন নারী বিচারপ্রার্থীর দেখা পাওয়া যায়।

তাঁদের মধ্যে একজন এসেছেন জেলার বোয়ালখালী উপজেলা থেকে। প্রথম আলোকে ওই নারী বলেন, দুই বছর আগে তাঁর বিয়ে হয়। টাকা, ফ্রিজ ও মোটরসাইকেলের জন্য স্বামী তাঁকে মারধর করতে থাকেন। স্বামীর নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্য মামলা করতে এসেছেন। আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় এত দিন মামলা করতে পারেননি। এক পরিচিতের মাধ্যমে জানতে পেরে এখানে এসেছেন।

স্বামী মারধর করায় বাবার বাড়িতে চলে আসেন হাটহাজারীর এক নারী। পরে লিগ্যাল এইডে এসে অভিযোগ দেন ফেব্রুয়ারি মাসে। স্বামী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সেখানে ডাকা হয়। সমঝোতা হওয়ায় স্বামী ওই নারীকে নিয়ে যান। তাঁরা এখন ভালো আছেন।

জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থার পাশাপাশি বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) কাছ থেকে চট্টগ্রামে আইনি সহায়তা পাচ্ছেন অসহায় বিচারপ্রার্থীরা। সেখানেও এগিয়ে নারীরা।

ব্লাস্ট চট্টগ্রামের সমন্বয়কারী আইনজীবী রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, বিনা মূল্যে আইনি সহায়তা নিতে আসা বিচারপ্রার্থীদের তাঁরা যাতায়াত খরচও দেন। এখানে আসা বেশির ভাগই নারী।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম জিয়া উদ্দিন বলেন, আর্থিক সামর্থ্য না থাকা বিচারপ্রার্থীরা যাতে বিনা খরচে আইনি সহায়তা পান, সে জন্য আইনজীবীরা ভুক্তভোগীদের লিগ্যাল এইড কিংবা ব্লাস্টে পাঠাতে পারেন। এ ছাড়া স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে সমাজের সচেতন মানুষেরা অসহায় মানুষদের লিগ্যাল এইডে পাঠাতে পারেন।