আইনের প্রয়োগ ‘বাধাগ্রস্ত’ হবে, তাই তথ্য দিল না পুলিশ

দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মোট কত মামলা, কত আসামি এবং কতজন গ্রেপ্তার হয়েছেন—এই তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ পুলিশের কাছে আবেদন করেছিলেন এক মানবাধিকারকর্মী। এসব তথ্য প্রকাশ পেলে আইনের প্রয়োগ বাধাগ্রস্ত এবং জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে—এমন কারণ দেখিয়ে তথ্য দেয়নি পুলিশ।

পুলিশের কাছ থেকে তথ্য না পেয়ে আবেদনকারী সাদ হাম্মাদি অভিযোগ দায়ের করেন তথ্য কমিশনে। গতকাল মঙ্গলবার এই অভিযোগের শুনানি করে কমিশন। হাম্মাদি নিজেই শুনানিতে অংশ নেন আর বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী তাইফুল সিরাজ। দুই পক্ষের বক্তব্য শুনে ২ ফেব্রুয়ারি আদেশের দিন ধার্য করেছে কমিশন।

লেখক, গবেষক এবং মানবাধিকারকর্মী সাদ হাম্মাদি ২০২১ সালের ৭ জুন পুলিশ সদর দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেন। তিনি জানতে চান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের পর থেকে এই আইনে প্রতিবছর দায়ের করা মামলার সংখ্যা, অভিযুক্তদের সংখ্যা এবং গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের সংখ্যা। তথ্য না পাওয়ায় তিনি গত ১৮ জুলাই পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বরাবর আপিল আবেদন করেন।

নির্ধারিত সময়ে আপিল আবেদনের জবাব না পাওয়ায় সাদ হাম্মাদি গত ১০ আগস্ট তথ্য কমিশনে অভিযোগ করেন। গতকাল দুই পক্ষের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে তথ্য কমিশনে শুনানি হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন প্রধান তথ্য কমিশনার মরতুজা আহমদ, তথ্য কমিশনার আবদুল মালেক ও সুরাইয়া বেগম।

সাদ হাম্মাদি জানান, তথ্য চেয়ে তাঁর করা আবেদন খারিজ করে তাঁকে একটি চিঠি দিয়েছে পুলিশ। চিঠিতে বলা হয়, তথ্য অধিকার আইনের ধারা ৭-এর চ, ছ এবং ড উপধারা অনুযায়ী আবেদনকারীর তথ্য প্রকাশ করার মতো না। এসব তথ্য প্রকাশ পেলে আইনের প্রয়োগ বাধাগ্রস্ত হতে পারে, অপরাধ বৃদ্ধি পেতে পারে, জনগণের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে, বিচারাধীন মামলার সুষ্ঠু বিচারকার্য ব্যাহত হতে পারে, কোনো অপরাধের তদন্তপ্রক্রিয়া এবং অপরাধীর গ্রেপ্তার ও শাস্তিকে প্রভাবিত করতে পারে।

পুলিশের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেওয়া তাইফুল সিরাজ গতকাল মুঠোফোনে বলেন, যেসব তথ্য চাওয়া হয়েছে, সেগুলো খুবই সংবেদনশীল। তথ্য অধিকার আইনের কয়েকটি ধারা অনুযায়ী এই তথ্য দিতে পুলিশ বাধ্য নয়। এসব তথ্য প্রকাশ পেলে যারা কানাডা, আমেরিকা, লন্ডন থেকে সরকার, প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে, তারা উৎসাহী হতে পারে।

আবেদনকারীর পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাইফুল বলেন, আবেদনকারীর সুনির্দিষ্ট পরিচয় কী? আবেদনে বলেছেন, স্থায়ী ঠিকানা যশোর। বর্তমান ঠিকানা শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কায় বসে ওনার এমন তথ্য কেন প্রয়োজন? আবেদনকারী কোনো দুরভিসন্ধি মাথায় রেখে এমন তথ্য চেয়েছেন কি না, তা বোধগম্য হচ্ছে না।

বাংলাদেশের নাগরিক সাদ হাম্মাদি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক অফিসে (শ্রীলঙ্কা) কর্মরত। গতকালের শুনানির বিষয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। একজন লেখক, গবেষক, মানবাধিকারকর্মী এবং দেশের নাগরিক হিসেবে আমাকে তথ্য অধিকার আইনে যে অধিকার দেওয়া হয়েছে, সেই অধিকারবলে আবেদন করেছি। সেই আবেদনের তথ্য আমি পাইনি।’