আগুনে পুড়ল গুলনাহারের স্বপ্ন

আগুনে পুড়ে গেছে গুলনাহারের সব বই। কী করে জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নেবে সেই দুশ্চিন্তা তার পিছু ছাড়ছে না। ছবিটি গতকাল তোলা l প্রথম আলো
আগুনে পুড়ে গেছে গুলনাহারের সব বই। কী করে জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নেবে সেই দুশ্চিন্তা তার পিছু ছাড়ছে না। ছবিটি গতকাল তোলা l প্রথম আলো

মোর এ্যালা (এখন) কী হইবে? বাড়ি, টাকা পাইসা, বই পত্তর, স্কুল ড্রেস সউগ গেল মোর।’ নিজের শিক্ষাজীবনের অনিশ্চয়তায় শঙ্কিত গুলনাহার কান্নাজড়িত কণ্ঠে এ কথা বলছিল। নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের দক্ষিণ অসুরখাই গ্রামের গুলনাহার এবার পার্শ্ববর্তী কাশিরাম বেলুপুকুর ইউনিয়নের পশ্চিম বেলপুকুর মাঝাপাড়া বালিকা মাদ্রাসা থেকে জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষায় অংশ নেবে। গত শুক্রবার রাতে অগ্নিকাণ্ডে সর্বস্বান্ত হয়েছে তাদের পরিবার।

গুলনাহারের স্বপ্ন ছিল, ভালোভাবে লেখাপড়া করে একদিন সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। বাবা-মায়ের কষ্ট লাঘব করবে। কিন্তু সব স্বপ্ন, আশা নিমেষেই পুড়ে গেল আগুনে। তার শোবার ঘরের অন্য সব জিনিসের সঙ্গে পুড়ে গেছে সব বই। বই হারিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া নিয়ে শঙ্কিত সে। কীভাবে মাদ্রাসায় যাবে? কী পড়বে? কে তাকে বই-খাতা কিনে দেবে? এমন অনেক প্রশ্ন এখন তার মনে।

গুলনাহারের বাবা গোলজার হোসেন ঢাকায় শ্রমিকের কাজ করেন। মা হাওয়া বেগম গৃহিণী। বাবার অল্প আয় দিয়েই দিন চলে। তিনি কাজ করে যে টাকা পান, তা দিয়েই গুলনাহারের পড়াশোনার খরচ এবং তাঁদের পাঁচ সদস্যের পরিবার চলে।

গুলনাহার বলে, ‘আমি অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি। চলতি বছরের নভেম্বরে আমার জেডিসি পরীক্ষা। বাবা ঢাকায় থেকে খুব কষ্টের কাজ করে আমাদের টাকা পাঠায়, সে টাকায় গত বৃহস্পতিবার ফরম পূরণ করেছি। মাদ্রাসা থেকে এসে বই ও স্কুল ড্রেস খুলে রেখেছিলাম। বাবা অনেক কষ্টে আমার বই-খাতা-কলম কিনে দেন। আমার সব বই পুড়ে গেছে। এখন কোথা থেকে বই কিনব? খাতা-কলম কিনে দিবে কে? স্কুল ড্রেস কোথায় পাব?’ বলেই কাঁদতে শুরু করে সে।

গত শুক্রবার বেলা দেড়টার দিকে দক্ষিণ অসুরখাই গ্রামের গোলজার হোসেনের বাসায় আগুন লাগে। আগুন লাগার পর প্রতিবেশীদের তৎপরতায় একটি ঘর এবং ঘরে থাকা ২০ হাজার টাকাসহ সবকিছু পুড়ে যায়।

কামারপুকুর ইউপির চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বলেন, মেয়েটি অভাবের মধ্যে থেকেও পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্ত আগুনে তার স্বপ্ন পুড়ে গেছে। ওই ইউপির সাবেক মহিলা সদস্য অকিলা পারভীন জানান, পড়াশোনায় খুব মনোযোগী গুলনাহার। অভাবের মাঝে থেকেও সে পড়াশোনা চালিয়ে যেত। তার পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য সবার সহযোগিতা দরকার।