আগুন লাগার পর লঞ্চ ‘ছেড়ে যান চালক–কর্মচারীরা’
এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানির ঘটনায় এর চালক ও কর্মচারীদের দায়ী করেছেন মালিক হামজালাল শেখ। তিনি বলেছেন, আগুন লাগার পর কর্মীরা নেভানোর চেষ্টা না করে লঞ্চটি ত্যাগ করেন, তাতেই এই অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানি ঘটেছে। একই সঙ্গে নৌযানটিও সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে।
লঞ্চমালিক হামজালাল শেখ জিজ্ঞাসাবাদে এসব বলেছেন বলে র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। সোমবার সকালে রাজধানীর কেরানীগঞ্জে এক আত্মীয়ের বাসা থেকে হামজালাল শেখকে (৫৩) গ্রেপ্তার করে র্যাব। সন্ধ্যায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে হামজালালকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য তুলে ধরেন আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
এই র্যাব কর্মকর্তা বলেন, লঞ্চে আগুন লাগার ১০ মিনিটের মধ্যে বৃহস্পতিবার আনুমানিক রাত ৩টার দিকে সুপারভাইজার আনোয়ার মুঠোফোনে মালিক হামজালালকে বিষয়টি অবহিত করেন। চালক প্রথমে লঞ্চটিকে সুগন্ধা নদীর ঝালকাঠি শহরের অংশের দিকে চর বাটারকান্দায় ভেড়ানোর চেষ্টা করেন। জলন্ত লঞ্চটিকে রেখে এখানেই লঞ্চের সব কর্মীরা নেমে গেছেন বলে ধারণা করছেন হামজালাল শেখ।
এরপর লঞ্চটি স্রোতের টানে সামনের দিকে চলতে থাকে। প্রায় ৪৫ মিনিট চলার পর লঞ্চটি বাটারকান্দার উল্টো দিকের দিয়াকুল গ্রামের তীরে ভেড়ে। এ সময় যেসব যাত্রী কেবিনে ঘুমিয়ে ছিলেন বা আগে নামতে পারেননি, তাঁরা পুড়ে মারা যান। তবে খবর পাওয়ার পরও মালিক হামজালাল শেখ কোনো সংস্থা বা জরুরি সেবার নম্বরে ফোন করেননি বলে জানিয়েছেন।
মালিকের বরাত দিয়ে র্যাব আরও জানিয়েছে, লঞ্চের রাত্রীকালীন যাত্রীধারণ ক্ষমতা ৪২০ হলেও বৃহস্পতিবার হওয়ায় ওই দিন ৭০০–৮০০ যাত্রী ছিলেন। ঢাকার সদরঘাটের পর আরও দুটি ঘাট ধরেছিল লঞ্চটি। দেরিতে ছেড়ে আগে পৌঁছানোর জন্য হামজালাল শেখ কিছুদিন আগে অভিযান–১০–এর ইঞ্জিন বদলান। নিয়ম অনুযায়ী নৌপরিবহন অধিদপ্তরের অনুমতি নেননি তিনি। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার সদরঘাটে গিয়ে কর্মচারীদের যাত্রাপথের সময় কমাতে নির্দেশও দিয়েছিলেন তিনি। লঞ্চটিতে কর্মীদের জন্য ২২টি লাইফজ্যাকেট থাকলেও যাত্রীদের জন্য কোনো লাইফজ্যাকেট ছিল না। লঞ্চটির কোনো বিমা করা ছিল না।
লঞ্চে কর্মরত ব্যক্তিদের কারও পরিবারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কেউ নিখোঁজ বা মারা যাওয়ার খবর পাননি বলে র্যাবকে জানিয়েছেন হামজালাল শেখ।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী অভিযান-১০ লঞ্চে আগুন লাগে। এ সময় আগুনে পুড়ে ও নদীতে ঝাঁপ দিয়ে অন্তত ৩৯ জন নিহত হয়েছেন। এখনো অর্ধশতাধিক যাত্রী নিখোঁজ রয়েছেন বলে যুব রেড ক্রিসেন্ট ঝালকাঠির স্বেচ্ছাসেবকেরা জানিয়েছেন। তবে স্থানীয় প্রশাসন বলছে, এ ঘটনায় ৩৩ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
এ ঘটনায় লঞ্চের চার মালিকসহ আটজনকে আসামি করে গতকাল রোববার নৌ আদালতে মামলা করে নৌপরিবহন অধিদপ্তর। ওই দিনই বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। অপর তিন মালিকসহ বাকি আসামিরা পলাতক।
র্যাবের তথ্যমতে, গ্রেপ্তার হামজালাল শেখ ১৯৮৮ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত জাপানে ছিলেন। দেশে ফিরে এসে লঞ্চ ব্যবসা শুরু করেন। এমভি অভিযান–১০–সহ বর্তমানে তাঁর মালিকানায় তিনটি লঞ্চ রয়েছে।
র্যাব-১০–এর উপ-অধিনায়ক মেজর শাহরিয়ার জিয়াউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আইনি প্রক্রিয়া শেষে হামজালাল শেখকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হবে। সংশ্লিষ্ট থানা যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাঁকে নৌ আদালতে হাজির করবে।