আদি রূপে বড় সরদার বাড়ি

সংস্কারে ফিরে এসেছে বড় সরদার বাড়ির আদি রূপ। সম্প্রতি তোলা ছবি l প্রথম আলো
সংস্কারে ফিরে এসেছে বড় সরদার বাড়ির আদি রূপ। সম্প্রতি তোলা ছবি l প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে অবস্থিত ঐতিহাসিক বড় সরদার বাড়ি সংস্কার করে আদিরূপে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। কোরিয়াভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি ইয়াংওয়ান করপোরেশনের অনুদানে প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ কাজ শেষ হচ্ছে।

বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের পরিচালক রবীন্দ্র গোপ বলেন, বড় সরদার বাড়ির সংস্কারকাজ বর্তমানে শেষের পথে। আদিরূপ সংস্কারের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনার ফলে ফাউন্ডেশনের দৃশ্যপট বদলে গেছে।

প্রায় ছয় শ বছরের পুরোনো সোনারগাঁয়ের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে পরিচিত ঐতিহাসিক বড় সরদার বাড়ি বাংলা সর্বশেষ ১৩৩০ সনে সংস্কার করা হয়। ১৯৮১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ঐতিহাসিক এ ভবনটিকে সরকার লোক ও কারুশিল্প জাদুঘরে রূপান্তরিত করে। ২৭ হাজার ৪০০ বর্গফুট আয়তনের এ ভবনটির নিচতলায় ৪৭টি ও দ্বিতীয় তলায় ৩৮টি কক্ষ রয়েছে। এসব কক্ষে প্রাচীন বাংলার কৃষক, কামার, কুমার, তাঁতি, জেলে থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশার মানুষের নিত্যদিনের ব্যবহার করা তৈজসপত্রসহ নানা আসবাবপত্র সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে। সোনারগাঁয়ে বেড়াতে আসা দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে বাড়িটির কারুকাজ অন্যতম আকর্ষণ।

লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করার কারণে বড় সরদার বাড়ির ভবনের প্লাস্টার ও ছাদসহ বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাড়িটির ঐতিহ্য ও পুরোনো সৌন্দর্যের কথা বিবেচনা করে এর আদিরূপ ফিরিয়ে আনতে কোরিয়াভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি ইয়াংওয়ান করপোরেশন ২০১২ সালের ৩ জানুয়ারি সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একাজের চুক্তি করে। অনুদান হিসেবে কোম্পানিটি প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয় করে ভবনটির আদিরূপ ফিরিয়ে আনে। এ ছাড়া কোম্পানিটি ভবনের বাইরে পুকুর ও সড়কসহ আশপাশের খালি জায়গার সৌন্দর্য বাড়াতেও কাজ করে।

ইয়াংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান ও কোরিয়া ইপিজেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কিহাক সাং কিছুদিন আগে সরদার বাড়ির কাজের সর্বশেষ অগ্রগতি দেখতে এসে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বাড়ির ইতিহাস ঐতিহ্য ও সৌন্দর্য আমাদের মুগ্ধ করেছে। এ কারণে আমরা এ বাড়ির ইতিহাসের সাক্ষী হতে অনুদান দিয়ে বাড়িটির আদিরূপ ফিরিয়ে দিতে চেষ্টা করেছি।’

লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের গবেষণা কর্মকর্তা এ কে এম মুজাম্মিল হক বলেন, বাড়িটি আদিরূপে ফিরিয়ে আনার কাজের স্থপতি ছিলেন এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় প্রধান আবু সাইদ এম আহম্মেদ। এটির আদিরূপ ফিরিয়ে আনতে চীনা মাটির ভাঙা প্লেট, চিটাগুড় ও তেঁতুলের বিচির প্রলেপ দেওয়া হয়েছে। ভবনের মেঝেতে ব্যবহার করা হয়েছে টাইলস ও মার্বেল পাথর। নওগাঁ ও পাহাড়পুর থেকে আনা অভিজ্ঞ ১৫০ জন রাজমিস্ত্রি এ কাজ করেছেন।