আনোয়ারা উপকূলে এখনো রোয়ানুর ক্ষত

বেড়িবাঁধের সঙ্গে ভেঙেছে রাস্তাও। বাঁধের ভাঙা অংশে রাস্তা পারাপারের জন্য তৈরি করা হয়েছে বঁাশের সাঁকো। চট্টগ্রামের আনোয়ারার রায়পুর ইউনিয়নের ফকিরহাট এলাকা থেকে গত শুক্রবার তোলা ছবি l প্রথম আলো
বেড়িবাঁধের সঙ্গে ভেঙেছে রাস্তাও। বাঁধের ভাঙা অংশে রাস্তা পারাপারের জন্য তৈরি করা হয়েছে বঁাশের সাঁকো। চট্টগ্রামের আনোয়ারার রায়পুর ইউনিয়নের ফকিরহাট এলাকা থেকে গত শুক্রবার তোলা ছবি l প্রথম আলো

সাত মাস পরও চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপকূলে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর তাণ্ডবের ক্ষত রয়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড়ে ভেসে যাওয়া বেড়িবাঁধ এখনো সংস্কার করা হয়নি। উল্টো দিনে দুবার জোয়ারের পানি ঢুকে বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ এখন খালে পরিণত হয়েছে। পূর্ণিমা ও অমাবস্যার সময় জোয়ারের পানি উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের চারটি গ্রামে ঢোকে। তখন এসব গ্রামের সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে যায়।

গত ২১ মে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু। ঝড়ে আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের বার আউলিয়া, পূর্ব গহিরা, দক্ষিণ সরেঙ্গা ও ধলঘাট এই চার গ্রামের প্রায় ২৫ মানুষ হাজার বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। এই চার গ্রামের উপকূলীয় বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। এতে প্রায় যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন এসব গ্রামের মানুষ।

গত শুক্রবার সকালে দক্ষিণ সরেঙ্গা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, রোয়ানুর তাণ্ডবের কারণে বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশে খালের মতো জলাধার সৃষ্টি হয়েছে। দুপুরে পূর্ব গহিরা গ্রামের ফকিরহাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় চলাচলের রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। রাস্তার ভাঙা অংশ পার হতে সাঁকো তৈরি করেছেন স্থানীয় লোকজন। ফকিরহাট থেকে ধলঘাট গ্রাম পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে অন্তত সাতটি বাঁশের সাঁকো তৈরি করা হয়েছে। একেকটি সাঁকোর দৈর্ঘ্য কমপক্ষে ৩০ ফুট।

ফকিরহাট এলাকার বাসিন্দা আবদুর রহিম (৩৪) প্রথম আলোকেবলেন, ‘এলাকার একজন মানুষ মারা গেলে কিংবা কারও কোনো অনুষ্ঠান হলে আমরা বিপদে পড়ে যাই। চলাচলের রাস্তা নাই।’

বাঁধের ভাঙা অংশ পার হতে সাঁকো বানানো হয়েছে। রায়পুর ইউনিয়নের ফকিরহাট এলাকা থেকে তোলা ছবি l প্রথম আলো
বাঁধের ভাঙা অংশ পার হতে সাঁকো বানানো হয়েছে। রায়পুর ইউনিয়নের ফকিরহাট এলাকা থেকে তোলা ছবি l প্রথম আলো

ধলঘাট গ্রামের রাস্তারও একই অবস্থা। স্থানীয় বাসিন্দা মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, বেড়িবাঁধের কারণে রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জানে আলম প্রথম আলোকে বলেন, রোয়ানুর তাণ্ডবের পর থেকে এলাকার মানুষ চরম দুর্ভোগে রয়েছে। তিনি দ্রুত বেড়িবাঁধ সংস্কার করার দাবি জানান।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, গত ৯ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপকূল রক্ষায় ২৮০ কোটি ৩০ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পতেঙ্গা উপকূলীয় এলাকার জন্য ৩০ কোটি টাকা, বাকি ২৫০ কোটি টাকা ব্যয় হবে আনোয়ারা-কর্ণফুলী উপকূল রক্ষায়।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী কাইছার উদ্দিন বলেন, আনোয়ারা উপকূলে ১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয়ে জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আড়াই শ কোটি টাকার উন্নয়নকাজেরও দরপত্র শিগগিরই আহ্বান করা হবে।

জানতে চাইলে আনোয়ারা উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বছর খুবই কষ্ট পেয়েছেন উপকূলের বাসিন্দারা। আশা করি একনেকে অনুমোদিত প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পাল্টে যাবে উপকূলের চেহারা।’