আন্দোলনে উসকানি দেখছে সরকার

কোটা সংস্কার আন্দোলনে জড়িত ব্যক্তিরা বলে আসছেন, তাঁদের আন্দোলনে কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নেই। ফাইল ছবি
কোটা সংস্কার আন্দোলনে জড়িত ব্যক্তিরা বলে আসছেন, তাঁদের আন্দোলনে কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নেই। ফাইল ছবি
>

• কোটা পর্যালোচনায় ৮ জুলাই বসছে কমিটি।
• ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দিতে হবে
• ১১ এপ্রিল সংসদে প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন

সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি পর্যালোচনা, সংস্কার বা বাতিলে সরকার গঠিত কমিটি ৮ জুলাই প্রথম বৈঠকে বসতে যাচ্ছে। ওই বৈঠকে কাজের ধরন ঠিক করা হবে।

কমিটি বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি পর্যালোচনা, সংস্কার বা বাতিলের বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করে কোটা পদ্ধতি সংস্কার বা বাতিলের প্রয়োজন হলে তার যৌক্তিকতাসহ সুপারিশ করবে। ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ সরকারের কাছে প্রতিবেদন দিতে হবে।

সরকারের বিভিন্ন সূত্র বলছে, কোটা সংস্কারে কমিটি করা হলেও সরকার এই আন্দোলনের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা আছে বলে মনে করছে। বিশেষ করে, বিএনপি-জামায়াত নেপথ্যে থেকে এই আন্দোলনে উসকানি দিচ্ছে—এমন অভিযোগে ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বাধা দিচ্ছে। যদিও কোটা সংস্কার আন্দোলনে জড়িত ব্যক্তিরা বলে আসছেন, তাঁদের আন্দোলনে কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নেই।

সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি পর্যালোচনা, সংস্কার বা বাতিলে গত সোমবার রাতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করে সরকার। তবে কমিটি প্রয়োজন মনে করলে যেকোনো বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিকে সদস্য হিসেবে নিতে পারবে।

জানতে চাইলে ওই কমিটির আহ্বায়ক ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, খুব তাড়াতাড়িই তাঁরা বসবেন, সেটা ৮ জুলাই হতে পারে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোটা পদ্ধতি পর্যালোচনা, সংস্কার বা বাতিলের বিষয়টি পুরোপুরি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। তাঁরা এই কমিটির মাধ্যমে বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করে তা সরকারের কাছে তুলে ধরবেন। এরপর সরকার যে সিদ্ধান্ত দেবে, সেটাই চূড়ান্ত হবে। তবে তাঁরা মনে করছেন, বিদ্যমান কোটাব্যবস্থা একেবারে বাতিল হবে না। কোটা বাতিল হলে এর সুবিধাভোগীদের পক্ষ থেকে আদালতে মামলার আশঙ্কা রয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারি সূত্রমতে, কোটার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেওয়ার পরও এ নিয়ে আন্দোলনকে সরকার ভালোভাবে নিচ্ছে না। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এই আন্দোলন শেষ পর্যন্ত বিএনপির দাবি আদায়ের ইস্যুতে পরিণত হয় কি না, সে বিষয়েও সতর্ক সরকার।

জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সদ্যবিদায়ী কমিটির সভাপতি সাইফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরই কোটার আন্দোলন শেষ হয়ে গেছে। এরপর যাঁরা বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলন করছেন, তাঁদের পেছনে জামায়াত-শিবিরের লোক ছাড়া কেউ নেই। ছাত্রদল আছে, তাদের সঙ্গে জঙ্গি সম্পৃক্ততা আছে। তারা আন্দোলনকে ভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে।

সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্ররা আন্দোলন করছেন, সরকার পতনের জন্য নয়। কারা ছাত্রদের সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড় করাচ্ছে, সেটা খুঁজে দেখা দরকার ছিল।

বর্তমানে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৫৫ শতাংশ নিয়োগ হয় অগ্রাধিকার কোটায়। বাকি ৪৫ শতাংশ নিয়োগ হয় মেধা কোটায়। সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, কোটা নিয়ে আন্দোলন করার কোনো প্রয়োজন নেই। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন। তারপরও কিছু জটিলতা রয়েছে, সেগুলো নিরসনে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে কমিটি কাজ করছে। মন্ত্রী আরও বলেন, প্রতিবেদন পাওয়ার পর সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলাপ-আলোচনা হবে।

এদিকে গত শনি, রবি ও সোমবার টানা তিন দিন কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলনে নামা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। কোথাও কোথাও পুলিশের বাধার কারণে কর্মসূচি পালন করতে পারেননি আন্দোলনকারীরা।

বিবিসি বাংলার খবরে গতকাল বলা হয়, সরকার আন্দোলনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। অন্যদিকে, মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের জন্য কোটা রাখার পক্ষে সংসদে বক্তব্য আসায় ছাত্রদের মধ্যে পুরো বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।

আওয়ামী লীগের এমন অবস্থানের পেছনে রাজনৈতিক বিবেচনা কাজ করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। তবে এসব অভিযোগ মানতে রাজি নন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম।

বিবিসিকে এইচ টি ইমাম বলেন, ‘জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ দাবি করেছেন যে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোটা রাখা হোক এবং তখন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে এটা পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে। তবে পুনর্বিবেচনা করে কীভাবে হবে বা কতটুকু, সেটা তো এই কমিটি দেখবে।’

প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা বলেন, ‘একটি প্রশ্ন হলো, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা কত এবং তাঁরা এর থেকে উপকৃত হচ্ছেন কি না এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী যারা, তাদের জন্য কত অংশ আসবে? এগুলোও তো দেখা দরকার। সে জন্য এটার সমাধান সহজ নয়।’