আন্ধারমানিকের তুর্কি বাজ

সুন্দরবনের আন্ধারমানিক খালের পাশে মরা গাছের ডালে তুর্কি বাজ l ছবি: লেখক
সুন্দরবনের আন্ধারমানিক খালের পাশে মরা গাছের ডালে তুর্কি বাজ l ছবি: লেখক

সুন্দরবনের কটকা খাল থেকে লঞ্চযোগে আন্ধারমানিকের উদ্দেশে যখন রওনা হলাম সূর্য তখন মাথার ঠিক ওপরে। বিকেলে শেলা নদী থেকে সুন্দরী খালে ঢুকলাম। মিনিট পাঁচেক পরেই দেখা হয়ে গেল বাচ্চাকাচ্চাসহ ভোঁদড় বা ছোট উদ পরিবারের সঙ্গে। কিছুটা সামনে এগোতেই একটি মরা গাছের ডালে শিকারি পাখিটিকে বসে থাকতে দেখলাম। যদিও ওকে আগেও বেশ কবার কাপ্তাই ও এই সুন্দরবনেই দেখেছি, কিন্তু এত কাছ থেকে দেখলাম এই প্রথম। তবে বেশ কাছে পেয়েও ওর ছবি তোলা হলো না। রাতটা আন্ধারমানিকে কাটিয়ে পরদিন বেশ ভোরে আন্ধারমানিক খালে ঢুকলাম। একে একে কমলাবুক হরিয়াল, সিংহরাজ, কোঁরচে বক, খুদে মাছরাঙা, থোরমোচা, ছোট সহেলির সঙ্গে দেখা হলো। এরপর হঠাৎই গতকালের দেখা সেই শিকারি পাখিটিকে বসা অবস্থায় আবিষ্কার করলাম আরেকটি মরা গাছের ডালে। দ্রুত ছবি তুললাম।

এরা আমাদের আবাসিক পাখি তুর্কি বাজ। শিকরা বাজ বা শিকরা নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম Shikra। Accipitridae পরিবারের পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম accipiter badius.

আকারে ছোট আকৃতির তুর্কি বাজের দৈর্ঘ্য ৩১-৩৫ সেন্টিমিটার। ওজন ১৯২ গ্রাম। পুরুষ পাখি স্ত্রীর চেয়ে আকারে ছোট হয়। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের মাথা, পিঠ ও চিবুক নীলচে ধূসর। বুক-পেট জলপাই বাদামি, তাতে অসংখ্য ছোট ছোট কমলা ডোরা। লেজের তলা সাদা। পায়ের গোড়ার পালকগুচ্ছ সাদাটে। স্ত্রী পাখিটির রঙে ধূসর বাদামির ভাগটা বেশি। মাথা ধূসর, পিঠ বাদামি ধূসর। উভয়েরই চোখ কমলা হলুদ ও ঠোঁট কালচে। পা ও পায়ের পাতা হলুদ। নখ কালচে। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ ফিকে বাদামি, দেহতল সাদা ও তাতে বাদামি তিল। লেজে কালচে ডোরা।

তুর্কি বাজ সচরাচর দৃশ্যমানআবাসিকপাখি। উন্মুক্ত বন, বনের প্রান্ত, সুন্দরবন ও গ্রামীণ কুঞ্জবনে বিচরণ করে। সচরাচর একাকী বা জোড়ায় দেখা যায়। এরা গাছের ডালে বসে শিকার খোঁজে ও ছোঁ মেরে পা দিয়ে শিকার ধরে খায়। ছোট ছোট পাখি, ছোট সাপ, ব্যাঙ, গিরগিটি ইত্যাদি প্রিয় খাবার।

এপ্রিল-মে প্রজননকাল। মাটি থেকে ৬-১২ মিটার উচ্চতায় গাছের শাখায় সরু ডালপালা, ঘাস ও শিকড় দিয়ে ছোট মাচার মতো বাসা গড়ে। ডিম পাড়ে ৩টি। ডিমের রং নীলচে ধূসর। ফোটে ২৬-২৯ দিনে। বাচ্চারা ৪০-৪৫ দিনে উড়তে শেখে। আয়ুষ্কাল প্রায় ৭ বছর।