আফ্রিকায় বাংলাদেশের বাণিজ্যের বিপুল সম্ভাবনা দেখছেন নালেডি প্যান্ডর

বিসের আলোচনায় বক্তৃতা করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও দক্ষিণ আফ্রিকার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সহায়তাবিষয়ক মন্ত্রী নালেডি ম্যানডিসা প্যান্ডর
ছবি: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দক্ষিণ আফ্রিকার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সহায়তাবিষয়ক মন্ত্রী নালেডি ম্যানডিসা প্যান্ডর বলেছেন, আফ্রিকা মহাদেশের বাজারে বাংলাদেশের বাণিজ্যের যেমন বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে, তেমনি বাংলাদেশের বাজারেও আফ্রিকার বাণিজ্য করার সমান সম্ভাবনা রয়েছে। অথচ এ সম্ভাবনার বিষয়টি উভয় পক্ষের কাছে এখন পর্যন্ত অজানাই রয়ে গেল।

বৃহস্পতিবার রাজধানীতে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজে (বিআইআইএসএস—বিস) মন্ত্রিপর্যায়ের এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে নালেডি প্যান্ডর এ মন্তব্য করেন।

ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনের (আইওআরএ) মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠকে অংশ নিতে ঢাকা সফরে এসেছেন নালেডি প্যান্ডর। বিস এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
সম্ভাবনা থাকার পরও বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার বাণিজ্যের পরিমাণ খুবই কম। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে নালেডি প্যান্ডর বলেন, বাংলাদেশের বাজারের সম্ভাবনার বিষয়টি আফ্রিকায় এখন পর্যন্ত স্বীকৃত নয়। তাই পারস্পরিক স্বার্থে বৃহত্তর সহযোগিতা জরুরি। প্যান্ডর বলেন, তিনি চান বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো দক্ষিণ আফ্রিকাসহ আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন দেশে তাদের শাখা খুলুক। পাশাপাশি দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণ পণ্য আমদানি করুক।

দক্ষিণ আফ্রিকার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সহায়তাবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘১৬ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশের বাজারটা বড়। আবার আফ্রিকা মহাদেশের জনসংখ্যা ১০০ কোটির বেশি। এই বাজারটাও অনেক বড়। তাই আমাদের একে অন্যকে উৎসাহিত করা উচিত।’

বিসের আলোচনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ আফ্রিকার দেশগুলোর ওপর বাংলাদেশের অগ্রাধিকার রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়াকে আকর্ষণীয় অঞ্চল অভিহিত করে অন্যদের এখানে আরও বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মতে, দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা ও বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে প্রবৃদ্ধি জোরদার এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।

‘শক্তিশালী দেশের কর্তৃত্বে থাকতে চাই না’

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগর ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের প্রতিযোগিতা বেড়েই চলেছে। এ প্রেক্ষাপটে আইওআরএর মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

ভারত মহাসাগর ঘিরে প্রতিযোগিতার প্রেক্ষাপটে আইওআরএ বিষয়টি কীভাবে দেখছে, জানতে চাইলে নালেডি প্যান্ডর বলেন, ‘আইওআরএ একটি শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত হবে এবং কোনো শক্তিশালী দেশের কর্তৃত্ব মেনে নেবে না। বিশেষ করে শক্তিশালী দেশগুলোর পাগলামিতে জড়ানো উচিত হবে না। আমরা যেন তাদের সংঘাতের অংশ না হই। কারণ, আইওআরএর কর্মসূচি অনেক বিবেচনা করে ঠিক করা হয়।’

কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করে দক্ষিণ আফ্রিকার আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ভারত মহাসাগরীয় দেশ হিসেবে জোটের সদস্য। অন্যদের স্বার্থ জড়িত বলে তারা আমাদের সঙ্গে কাজ করতে চায়। তবে আমরা সব সময় নিজেদের স্বকীয়তা রক্ষা করে চলব।’

টিকা নিয়ে উন্নত দেশগুলোর স্বার্থপরতার অভিযোগ

করোনাভাইরাসের সংক্রমণে আফ্রিকা মহাদেশের দেশগুলো পর্যুদস্ত হলেও চাহিদা অনুযায়ী করোনার টিকা পায়নি। এ জন্য নালেডি প্যান্ডর উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর স্বার্থপরতাকে দায়ী করেন।

প্যান্ডর বলেন, ‘উন্নত দেশগুলো বিপুল পরিমাণ টিকা পেতে আগে থেকে চাহিদাপত্র দিয়েছিল। পরে এসব টিকা তারা সংরক্ষণ করে রাখে। এর মধ্য দিয়ে করোনার টিকাকে সর্বসাধারণের পণ্যে রূপান্তরের আশ্বাস ওই দেশগুলো পূরণ করেনি। দরিদ্র জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে আফ্রিকা মহাদেশে চাহিদা অনুযায়ী টিকা সরবরাহ করা হয়নি। তাই টিকাকে সর্বসাধারণের পণ্যে পরিণত করে আমাদের সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার পূরণে বিশ্বের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানাই।’

নালেডি প্যান্ডর বলেন, আফ্রিকাসহ উন্নয়নশীল বিশ্ব যাতে তাদের জনগণের ৬০ শতাংশকে টিকা দিতে পারে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে করোনার সংক্রমণে প্রতিরোধক্ষমতা গঠন নিশ্চিত হয়। তাঁর মতে, করোনার টিকা নিয়ে উন্নত দেশগুলো স্বার্থপর আচরণ করেছে। করোনার টিকা নিয়ে যে বৈষম্য চলছে, তার অবসান হওয়া জরুরি।