আবদুন নূরকে সম্পাদক ঘোষণার ফল প্রত্যাখ্যান বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সম্পাদক পদে পুনরায় ভোট গণনা করে সম্পাদক পদে আবদুন নূরকে বিজয়ী ঘোষণার ফল প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি-সমর্থক আইনজীবীদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। ফোরামের নেতারা সাংবিধানিকভাবে গঠিত নির্বাচন কমিশনের (নির্বাচন পরিচালনায় গঠিত আগের উপকমিটি) মাধ্যমে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা এই দাবি জানান।

সমিতির সাবেক সভাপতি ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ফলাফল ঘোষণার মুহূর্তে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যে অনভিপ্রেত আচরণ করা হয়েছিল, তারই ধারাবাহিকতায় অত্যন্ত ন্যক্কারজনকভাবে এই কোর্টের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যকে লঙ্ঘন করে নজিরবিহীনভাবে সন্ত্রাসী এবং অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ৭৫ বছরের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে ‘কলঙ্কিত’ করা হয়েছে মন্তব্য করে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘অবিলম্বে সাংবিধানিকভাবে গঠিত নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ করে এই অচলাবস্থা নিরসনের দাবি জানাচ্ছি, সঙ্গে আবদুন নূরের অবৈধ প্রক্রিয়ায় সম্পাদকের কক্ষ দখলকে প্রত্যাখ্যান করছি।’

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্যসচিব ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমাদের সম্পাদক (রুহুল কুদ্দুস) ৫০-এর বেশি ভোটে নির্বাচিত ছিলেন। তাঁকে বেআইনিভাবে বঞ্চিত করে যে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটানো হয়েছে, তা আমরা মানি না।’

গত ১৫ ও ১৬ মার্চ সমিতির নির্বাচনে (২০২২-২৩) ভোট গ্রহণ হয়। পরদিন ভোট গণনা শুরু হয়। আইনজীবীদের দেওয়া তথ্যমতে, আওয়ামী লীগ-সমর্থিত সাদা প্যানেল সভাপতিসহ ছয় পদে এবং বিএনপি-সমর্থিত নীল প্যানেল সম্পাদকসহ আট পদে এগিয়ে ছিল। ভোট গণনার একপর্যায়ে অনিয়মের অভিযোগ তুলে পুনরায় গণনার আবেদন করেন সাদা প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী আবদুন নূর। এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে হইচই ও হট্টগোলের একপর্যায়ে নির্বাচন পরিচালনাসংক্রান্ত উপকমিটির আহ্বায়ক এ ওয়াই মসিউজ্জামান পদত্যাগপত্র দেন। এরপর প্রায় দেড় মাস ফল ঘোষণা আটকে ছিল।

গত বুধবার বিএনপি-সমর্থক আইনজীবীদের বাধা উপেক্ষা করে আইনজীবী মো. অজি উল্লাহর নেতৃত্বে নবগঠিত উপকমিটি সমিতি ভবনের সম্মেলনকক্ষের তালা ভেঙে সম্পাদক পদে পুনরায় ভোট গণনা করে ফলাফল ঘোষণা করে। তাতে সভাপতি পদে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও সম্পাদক পদে আবদুন নূরসহ সাতটি পদে জয়ী হন আওয়ামী লীগ-সমর্থকেরা। অন্যদিকে দুটি সহসম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষসহ সাতটি পদে জয়ী হন বিএনপি-সমর্থকেরা।

সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও জাতীয়তাবাদী ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘পুলিশ কীভাবে এল, তা-ও তদন্ত হওয়া দরকার। সমিতির সুন্দর পরিবেশ নষ্ট করেছে, তাই দাবি প্রধান বিচারপতির কাছে কোর্ট খোলার আগে (অবকাশ শেষে) বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করবেন। নির্বাচিত কমিটি যাদের সেদিন রাতে নির্বাচিত হতে দেখেছি, তাদের পুনর্বহাল করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। সম্পাদক পদে মো. রুহুল কুদ্দুসসহ আমাদের আটজন এবং বিজয়ী অন্য যাঁরা একসঙ্গে কাজ করতে পারেন, সে রকম একটি রুলিং আমরা বিচারপতির কাছ থেকে চাই। এই প্রাঙ্গণকে আমরা সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে রেখেছিলাম, এখানে একটি নির্বাচন হতো, বাংলাদেশের অন্য কোথাও না হলেও ফল ঘোষণা হতো।’

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক ও সমিতির সাবেক সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন অভিযোগ করে বলেন, ‘যুবলীগ ও ছাত্রলীগের লোকজন কালো কোর্ট পরে এসেছে। প্রধান বিচারপতির অনুমতি ছাড়া পুলিশের ছত্রচ্ছায়ায় তারা তিনতলায় অবস্থিত কক্ষে ব্যালট বাক্স হাইজ্যাক করেছে। হাইজ্যাক করে ভোট গুনে ভুয়া ফলাফল প্রকাশ করেছে। প্রধান বিচারপতির কাছে দাবি জানাচ্ছি, অনতিবিলম্বে একজন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি দিয়ে তদন্ত করা হোক। সুপ্রিম কোর্টে এই ন্যক্কারজনক ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে সমিতির সাবেক সম্পাদক ও ফোরামের সদস্য এম বদরুদ্দোজা, বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ও ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক কায়সার কামাল, নীল প্যানেল থেকে সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী মো. রুহুল কুদ্দুস, ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সভাপতি আবদুল জব্বার ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া নীল প্যানেল থেকে এবারের নির্বাচনে জয়ী সাতজন উপস্থিত ছিলেন।