আবেদনের হিড়িক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে

অবৈধ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হওয়ার পরপরই হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নিবন্ধনের জন্য আবেদনের হিড়িক পড়েছে। এক সপ্তাহে দুই হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন ও নিবন্ধন নবায়নের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আবেদন করেছে। অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, অবৈধ সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার অভিযান অব্যাহত থাকবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২৬ মে থেকে ১ জুন—এই সাত দিনে ২ হাজার ১৩৬টি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮৪৫টি আবেদন করা হয়েছে নতুন প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধনের জন্য। বাকি ১ হাজার ২৯১টি
আবেদন করা হয়েছে নিবন্ধন নবায়নের জন্য। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বছরের অন্যান্য সময়ে সপ্তাহে ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ১০০টি আবেদন জমা পড়ত। এখন দৈনিক ৩০০-এর বেশি আবেদন জমা পড়ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক আহমেদুল কবীর প্রথম আলোকে বলেন, অবৈধ প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্তের পরপরই নতুন নিবন্ধন বা নিবন্ধন নবায়নের আবেদনের সংখ্যা রাতারাতি বেড়ে গেছে। এটা ভালো লক্ষণ। নিবন্ধন না থাকা সব প্রতিষ্ঠানই অবৈধ। অবৈধ প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা হতে দেওয়া যায় না।

‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বর্তমান উদ্যোগকে আমরা ইতিবাচকভাবে নিয়েছি। এর ফলে জবাবদিহি নিশ্চিত হবে। লাভবান হবেন রোগীরা। তবে এ ধরনের অভিযানের সময় অনেক নিরীহ উদ্যোক্তা অযথা হয়রানির শিকার হন। সে ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে সতর্ক থাকতে হবে।’
প্রীতি চক্রবর্ত্তী, বাংলাদেশ প্রাইভেট হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী সদস্য ও ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান

২৫ মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অনুষ্ঠিত সভায় সারা দেশে নিবন্ধনহীন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর পরদিন থেকে নিবন্ধনহীন প্রতিষ্ঠান বন্ধের অভিযান শুরু হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সারা দেশে ১ হাজার ৪৫৬টি অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, পাঁচ ধরনের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আবেদন করে। এর মধ্যে আছে: হাসপাতাল বা ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ব্লাড ব্যাংক, ডেন্টাল ক্লিনিক ও মেডিকেল চেক-আপ সেন্টার। মেডিকেল চেক-আপ সেন্টার বিদেশগামী ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে।

বেসরকারি চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের দায়িত্ব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার। প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষকে অনলাইনে আবেদনপত্র জমা দিতে হয়। হাসপাতাল বা ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ব্লাড ব্যাংক, ডেন্টাল ক্লিনিক ও মেডিকেল চেক-আপ—প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধনের জন্য আলাদা শর্ত। গতকাল পর্যন্ত ২ হাজার ৭১৩টি প্রতিষ্ঠানের আবেদন অনুমোদনের অপেক্ষায় (পেন্ডিং) ছিল। অর্থাৎ এসব প্রতিষ্ঠানের আবেদনে ত্রুটি ছিল। অন্যদিকে নতুন ২ হাজার ২৮টি প্রতিষ্ঠানের আবেদনপত্র ঠিকঠাক থাকলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে পরিদর্শন হয়নি বলে তারা নিবন্ধন পায়নি। অর্থাৎ প্রায় পাঁচ হাজার প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের অপেক্ষায় আছে। এ ব্যাপারে অধ্যাপক আহমেদুল কবীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেসব প্রতিষ্ঠান যোগ্য বলে বিবেচিত হবে, তাদের খুব শিগগির নিবন্ধন দিয়ে দেওয়া হবে। আমরা এ ব্যাপারেও সমান গুরুত্ব দিচ্ছি।’

সর্বশেষ গতকাল পর্যন্ত নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ১০ হাজার ৯২২। এর মধ্যে ৭ হাজার ৪৩টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ৩ হাজার ৭১৭টি হাসপাতাল ও ক্লিনিক এবং ১৬২টি ব্লাড ব্যাংক।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, কিছু মালিক নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেই ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালু করে দেন। নিবন্ধিত চিকিৎসক, প্রশিক্ষিত নার্স, ডিগ্রিধারী টেকনোলজিস্ট আছে কি না, স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে তা যাচাই করার আগেই চিকিৎসা শুরু করে এসব প্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশ প্রাইভেট হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী সদস্য ও ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান প্রীতি চক্রবর্ত্তী প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বর্তমান উদ্যোগকে আমরা ইতিবাচকভাবে নিয়েছি। এর ফলে জবাবদিহি নিশ্চিত হবে। লাভবান হবেন রোগীরা। তবে এ ধরনের অভিযানের সময় অনেক নিরীহ উদ্যোক্তা অযথা হয়রানির শিকার হন। সে ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে সতর্ক থাকতে হবে।’