‘আব্বু কেন যে ডিপোতে গেলেন’

বাবা খালেদুল রহমানের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে দেন নাফিসা আইমান
ছবি: প্রথম আলো

খালেদুল রহমান এশার নামাজ আদায় করে রাতের খাবার খাচ্ছিলেন। তখনই তাঁর কাছে ফোন এল। ডিপোতে আগুন লেগেছে।

ফোন পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে নিজের গাড়ি নিয়ে ছুটে গেলেন খালেদুল। গাড়ি থেকে নেমে ডিপোতে ঢোকেন তিনি। তারপর তাঁর আর খোঁজ মিলছিল না। পরে তাঁকে হাসপাতালে খুঁজে পান স্বজনেরা।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোর জেনারেল ম্যানেজার খালেদুল। ডিপোতে গতকাল শনিবার রাতের বিস্ফোরণ-অগ্নিকাণ্ডে খালেদুলের শরীরের একপাশ ও দুই পা ঝলসে গেছে। তাঁর গাড়িটাও পুড়ে গেছে।

খালেদুলকে প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতাল নেওয়া হয়। সেখান থেকে নেওয়া হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পরে গতকাল রাতে তাঁকে ঢাকায় আনা হয়। তিনি এখন ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুনঃ

আশপাশের গ্রামগুলোয় ছাই আর পোড়া গন্ধে বিপাকে শিশু, বৃদ্ধরা

আগুন, উত্তাপ ও ধোঁয়া ছড়িয়েছে আড়াই বর্গকিলোমিটারজুড়ে

ফায়ার সার্ভিসের চার কর্মী নিখোঁজ, অসুস্থ দুজন এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায়

সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৯, আগুন এখনও জ্বলছে

‘অভাব দূর হলো ঠিকই, ছেলে আমার বেঁচে রইল না’

ইনস্টিটিউটে খালেদুলের বড় মেয়ে নাফিসা আইমানের সঙ্গে কথা। তিনি তাঁর বাবার কথা বলতে গিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন।

নাফিসা বলেন, ‘আব্বু বাসায় ছিলেন। এশার নামাজ আদায় করে তিনি রাতের খাবার খাচ্ছিলেন। তখনই ডিপোতে আগুন লাগার খবর আসে। বাবা ছুটে যান ডিপোতে। সেখানে আগুন-বিস্ফোরণে আব্বুর শরীরের একপাশ ও দুই পা ঝলসে যায়। আব্বুর গাড়িটাও পুড়ে যায়। আব্বু কেন যে ডিপোতে গেলেন!’

খালেদুলের স্ত্রী ও দুই মেয়ে আছেন। হঠাৎ নেমে আসা বিপদে তাঁরা এখন বিপর্যস্ত। বাবার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বলতে গিয়ে নাফিসা বলেন, ‘আব্বুর দিকে তাকাতে পারছি না। আব্বুকে চিনতে পারছি না।’

দায়িত্ব পালনকালে আহত এসআই

এসআই কামরুল হাসান
ছবি: সংগৃহীত

শিল্পপুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) কামরুল হাসান (৩৭) মাস ছয়েক আগে সীতাকুণ্ডে বদলি হন। আগুন লাগার পর তিনি লোকজনকে ডিপো থেকে সরাতে দায়িত্ব পালন করছিলেন। দায়িত্ব পালনকালে বিস্ফোরণ হয়। বিস্ফোরণে কামরুলের আশপাশে কয়েকজন ছিন্নভিন্ন হয়ে যান। তাঁর পা পুড়ে যায়। আজ সকালে তাঁকে ঢাকায় আনা হয়।

কামরুলের বাড়ি চাঁদপুর। তিনি এক সন্তানের বাবা। কামরুলের খালাতো ভাই আজহারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘খবর পেয়ে পরিবারের সবাই ছুটে এসেছি। কামরুলের বাড়ি চাঁদপুরে। এক সন্তানের জনক তিনি।

মাকফারুলের দুই চোখ ক্ষতিগ্রস্ত

এ কে এম মাকফারুল (৬৫) গতকাল রাত পৌনে ১০টার দিকে তাঁর চাচাতো ভাই আসাদুল হকের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন। মাকফারুল তাঁর চাচাতো ভাইকে জানান, ডিপোতে আগুন লেগেছে।

পরে বিস্ফোরণে আহত হন মাকফারুল। তিনি এখন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন।

মাকফারুলের বাড়ি বগুড়ায়। তাঁর দুই মেয়ে আছে।

আসাদুল প্রথম আলোকে বলেন, মাকফারুল অবসরপ্রাপ্ত এএসপি। তিনি ডিপোতে সিকিউরিটি ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত। ডিপোর ভেতরে কর্মীদের থাকার জন্য একটি আবাসিক ভবন আছে। তিনি সেখানেই থাকেন। একের পর এক বিস্ফোরণের ঘটনায় মাকফারুল আহত হন। তাঁর দুই চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন-বিস্ফোরণের ঘটনায় যাঁরা দগ্ধ হয়ে এই হাসপাতালে এসেছেন, তাঁরা কেউই শঙ্কামুক্ত নন।

গতকাল শনিবার রাতে সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন-বিস্ফোরণের ঘটনার সূত্রপাত হয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪১ জন নিহত হয়েছেন। আহত শতাধিক। ডিপোর আগুন এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি।