আমার এত শান্তি লাগছে: হেনস্তাকারী নারীকে গ্রেপ্তারের পর তরুণী

নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনে তরুণীকে হেনস্তার অভিযোগে মার্জিয়া আক্তার ওরফে শিলা ওরফে সায়মাকে (৬০) গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব-১১
ছবি: প্রথম আলো

‘আমার কী যে শান্তি লাগছে! কী যে শান্তি লাগছে, আপনাকে বোঝাতে পারব না,’ নরসিংদীতে পোশাক নিয়ে হেনস্তা করা নারীকে গ্রেপ্তারের পর এভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন আক্রান্ত তরুণী।

ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওই তরুণী আজ সোমবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্রেপ্তারের তথ্যটি যেন সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। তাহলে কোনো মেয়েকে আর কখনো কেউ পোশাক নিয়ে হেনস্তা করার সাহস পাবে না।’ ঘটনায় জড়িত অন্যদেরও গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

অনলাইনে রাস্তায় তৈরি করা বিভিন্ন খাবারের ভিডিও দেখে এক বন্ধুকে নিয়ে ১৭ মে ঢাকা থেকে নরসিংদীতে গিয়েছিলেন ২২ বছর বয়সী ওই তরুণী। ফেরার পথে পরদিন ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে নরসিংদী রেলস্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষার সময় জিনস ও টপস পরার কারণে গালিগালাজ ও মারধরের শিকার হন তিনি। তাঁর সঙ্গে থাকা দুই বন্ধুও মারধরের শিকার হন। এক ব্যক্তি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে পুরো দৃশ্যটি ভিডিও করেন এবং তা ফেসবুকে পোস্ট করেন। পোশাক নিয়ে এভাবে হেনস্তা করার সমালোচনা করেন অনেকে। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র এবং বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানায়।

আরও পড়ুন

পোশাকের জন্য ওই তরুণীকে আক্রমণের সূচনা যিনি করেছিলেন, সেই নারীকে গতকাল রোববার দিবাগত রাত তিনটার দিকে নরসিংদী থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। ওই নারীর নাম মার্জিয়া আক্তার ওরফে শিলা ওরফে সায়মা (৬০)। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তাঁকে শনাক্ত করে মামলার আসামি করেছিল পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তাঁর ছবি দেখে ওই তরুণী বলেছেন, এই নারীই তাঁকে হেনস্তা করেছিলেন।

ওই দিনের ঘটনা সম্পর্কে তরুণী আজ প্রথম আলোকে বলেন, ওই নারী প্রথমে তাঁকে হেনস্তা করা শুরু করেন এবং পরে অন্যরা তাতে যোগ দেন। এ কারণে আজ ওই নারীর গ্রেপ্তারের কথা শুনে তিনি শান্তি পেয়েছেন। এখনো ওই দিনের ঘটনা তাঁকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।

আরও পড়ুন

ওই ঘটনা তাঁর ওপর কতটা প্রভাব ফেলেছে, তা তুলে ধরে এই বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি সাত দিন ঘুমাতে পারিনি। কিছু খেতে পারিনি। যতবার মনে হয়, আমার গা শিউরে ওঠে। চোখের সামনে শুধু ভেসে ওঠে ১০–১২টা হাত আমার জামা ধরে টানছে।’ তরুণী আরও বলেন, ‘আজ আমার মনটা অনেকখানি শান্ত। বৃষ্টিতে ভিজে রাস্তায় ছোট শিশুদের সঙ্গে ফুটবল খেলেছি। আমার অনেক আনন্দ হচ্ছে। আজ রাতে আমি আমার একটা ছবি আঁকব। তারপর দেয়ালে টাঙিয়ে রাখব। কাল আমার ব্রুনোর (পোষা বেড়াল) জন্মদিন। আজ আমি ব্রুনোর জন্য কেনাকাটা করব। কাল ওকে সাজাব।’

তাঁকে হেনস্তার ঘটনায় যাঁরা প্রতিবাদ করছেন, সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তরুণী। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি প্রতিবাদের ঘটনা আমি জেনেছি। আমি মানসিকভাবে সব কটি প্রতিবাদের সঙ্গে আছি। আমার মা–বাবার দিকে যেন কেউ আঙুল না তোলে, সে জন্য সশরীর প্রতিবাদে অংশ নিতে সাহস পাই না। তবে এখন আমি বুঝি, সব মানুষ এক রকম নয়। যাঁরা পাশে আছেন, তাঁদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।’

আরও পড়ুন

তরুণী জানান, ঘটনার পর বন্ধুরা পাশে থেকে বিষণ্নতা কাটিয়ে উঠতে তাঁকে সহযোগিতা করেছেন। তবে মা পাশে থাকায় তিনি বেশি স্বস্তি পেয়েছেন। আজ ওই নারীকে গ্রেপ্তারের কথা মাকে জানানোর পর তিনিও অনেক খুশি হয়েছেন। মা বলেছেন, ‘তোমার ভয় না পেয়ে শক্ত হয়ে প্রতিবাদ করা উচিত ছিল।’

ওই তরুণী বলেন, গ্রেপ্তারের তথ্য সব জেলায় জেলায় পৌঁছে দেওয়া দরকার। যাতে পোশাক পরার কারণে কোনো মেয়েকে ভবিষ্যতে যেন কেউ হেনস্তা করার সাহস না পায়।

তরুণীকে হেনস্তার এই ঘটনায় ভৈরব রেলওয়ে থানার পুলিশ বাদী হয়ে ২১ মে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করে। এ মামলায় মার্জিয়া আক্তারের আগে মো. ইসমাইল নামের এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।

আরও পড়ুন