আম পাকে জ্যৈষ্ঠ মাসে

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার ফুলকুড়ি গ্রামের একটি বাগানে সবুজ সতেজ আমের শোভা l সাজিদ হোসেন
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার ফুলকুড়ি গ্রামের একটি বাগানে সবুজ সতেজ আমের শোভা l সাজিদ হোসেন

পৌষে কুশি, মাঘে বোল, ফাল্গুনে গুটি, চৈত্রে আটি, বৈশাখে কাটিকুটি, জ্যৈষ্ঠে দুধের বাটি। আমের ফুল বা কুশি আসা থেকে শুরু করে দুধ দিয়ে খাওয়ার মতো মিষ্টি হওয়ার সময়কাল নিয়ে খনার এই বচন এখন প্রায় অচল। কেননা বৈশাখের শুরুতে অর্থাৎ এপ্রিল থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাজারে ‘পাকা’ আম পাওয়া যাচ্ছে।
আম নিয়ে যাঁরা গবেষণা করেন তাঁরা বলছেন, এপ্রিল তো দূরে থাক, মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ ছাড়া দেশের কোথাও আম পাকারই কথা নয়। তিন দিন ধরে দেশের আমের প্রধান এলাকা চাঁপাইনবাব গঞ্জ এবং রাজশাহীর বিভিন্ন আমবাগান ঘুরেও একই ধারণা আরও পোক্ত হলো। ওই দুই জেলায় সবুজ ছাড়া অন্য কোনো রঙের আম চোখে পড়েনি।
তবে দেশে আমের সবচেয়ে বড় হাট কানসাটে গিয়ে দেখা গেল, ট্রাকে বস্তাভর্তি সবুজ কাঁচা আম তোলা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরাই জানালেন, ঢাকার কারওয়ান বাজার ও যাত্রাবাড়ীর আড়তে ওই আম বিক্রি হবে। রাসায়নিক দিয়ে ওই আম জোর করে পাকানো হবে।
শহরের বাসিন্দাদের অনেকেই আমের জীবনচক্র দেখেননি, শুধু বাজার থেকে কিনে খান। তাঁদের উদ্দেশে আমবিজ্ঞানী ও গবেষকেরা বলছেন, দেশে আমের প্রচলিত জীবনচক্রের ক্ষেত্রে কিছুটা বদল হয়েছে। আগে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে শুধু রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় আমের চাষ হতো। আম পাকত জ্যৈষ্ঠ মাসে অর্থাৎ জুনে। এখন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও দেশের তিন পার্বত্য জেলাতেও আমের চাষ হচ্ছে। একই প্রজাতির ক্ষেত্রেও আবহাওয়া ও মাটির পার্থক্যের কারণে সেখানকার আমের পরিপক্বতা আসার সময়কাল ৭ থেকে ১০ দিনের ব্যবধানে হয়ে থাকে।
আবার কোনো একটি বছরের আবহাওয়ার স্বাভাবিক ধরনে ব্যতিক্রম হলেও আম পাকার সময়কালে বদল আসে। যেমন গুটি আসার পর যদি দু-এক সপ্তাহ আম এলাকার তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি থাকে, তাহলে নির্দিষ্ট সময়ের এক সপ্তাহ আগে তা পেকে যায়।
এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. শরাফ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, মে মাসের শুরুতে দু-এক দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে হঠাৎ বৃষ্টি হয়েছে। এপ্রিলের বড় অংশজুড়ে তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি ছিল। ফলে এ বছর সারা দেশে আম নির্ধারিত সময়ের এক সপ্তাহ আগেই পাকবে।
শরাফ উদ্দিনের হিসাব অনুযায়ী এ বছরের বিভিন্ন জাতের জনপ্রিয় আমের পরিপক্বতা আসার সময়কাল:
গোবিন্দভোগ
সাতক্ষীরার গোবিন্দভোগ মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে।
গোপালভোগ
রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে গোপালভোগ মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে।
ল্যাংড়া
সাতক্ষীরায় পাকা শুরু করবে মে মাসের শেষ সপ্তাহে। রাজশাহীতে জুনের প্রথম ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে।
হিমসাগর
সবচেয়ে আগে পাকে সাতক্ষীরার ক্ষীরশাপাতি বা হিমসাগর, মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে। একই আম মেহেরপুর ও রাজশাহীতে মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে জুনের প্রথম সপ্তাহে।
লক্ষ্মণভোগ
রাজশাহীতে জুনের প্রথম সপ্তাহে ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে দ্বিতীয় সপ্তাহে।
বোম্বাই
চাঁপাইনবাবগঞ্জে জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে।
হাঁড়িভাঙ্গা
রংপুরে জুনের তৃতীয় সপ্তাহে।
ফজলি
রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে জুনের তৃতীয় সপ্তাহে।
আম্রপালি
আম্রপালি বা বারি আম-৩ জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে গাছ থেকে পাড়ার মতো পাকবে। এটি মূলত দেশের তিন পার্বত্য জেলায় হয়।
আশ্বিনা
রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে পাকা শুরু করবে জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে।


আরও পড়ুন