আরব আলীর মামলায় অবশেষে সাক্ষী এসেছেন আদালতে
৩৮ বছর আগে রূপালী ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা আরব আলীর (৯০) বিরুদ্ধে হওয়া অর্থ আত্মসাতের মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন একজন। তাঁর নাম মোজাফফর হোসেন। তিনি রূপালী ব্যাংকের নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৬ জুন ঢাকার বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক সৈয়দ কামাল হোসেন এই সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন। প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রেজাউল করিম।
এদিকে ৯০ বছর বয়সী আরব আলীর মামলা নিয়ে ১৪ জুন প্রথম আলো অনলাইনে প্রকাশিত ‘আরব আলীর বয়স বেড়ে ৫২ থেকে ৯০, বিচার শেষ হয়নি’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রধান বিচারপতির নজরে এসেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ সাইফুর রহমান আজ বুধবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘দীর্ঘকাল বিচারাধীন আরব আলীর মামলা নিয়ে প্রথম আলোর প্রতিবেদনটি প্রধান বিচারপতি মহোদয়ের নজরে এসেছে। মাননীয় প্রধান বিচারপতি মহোদয় সারা দেশের আদালতে পুরোনো দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা নিষ্পত্তির ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।’
আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সাক্ষী মোজাফফর হোসেন আদালতে বলেছেন, ১৯৮৪ সালে তিনি রূপালী ব্যাংকের নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে ফকিরেরপুল শাখায় কর্মরত ছিলেন। তখন ওই শাখার ব্যবস্থাপক ছিলেন আরব আলী। এই আসামিসহ অন্যদের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন। ওই মামলার বিষয় কী ছিল, তা তাঁর মনে নেই। তবে দুর্নীতির মামলা হয়েছিল বলে জেনেছিলেন। তিনি আরব আলীকে চিনতেন।
দুদকের পিপি রেজাউল করিম বলেন, এই মামলার সব সাক্ষীকে আদালতে হাজির করার চেষ্টা চলছে। আগামী ৪ জুলাই মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন রেখেছেন আদালত।
আরব আলীর বিরুদ্ধে যখন অর্থ আত্মসাতের মামলা হয়, তখন তাঁর বয়স ছিল ৫২ বছর। সে সময় তাঁর বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে ১৭ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এ মামলা হয়েছিল। চাকরিও হারিয়েছিলেন তিনি। বছরের পর বছর পুরান ঢাকার বিচারিক আদালত থেকে হাইকোর্ট-সর্বোচ্চ আদালতের বারান্দায় ঘুরেছেন আরব আলী। চাকরি ফিরে পাওয়ার পক্ষে একবার আদালতের রায়ও এসেছিল। তবে উচ্চ আদালতে তা আটকে যায়। এরপর তিন যুগের বেশি সময়ে আরব আলীর অর্থ আত্মসাতের ওই মামলার বিচার এগোয়নি।
বয়সের ভারে ন্যুব্জ আরব আলী রাজধানীর নয়াপল্টনে পরিবারের সঙ্গে থাকেন। তিনি ঠিকমতো হাঁটাচলাও করতে পারেন না। কিন্তু মামলার আসামি হওয়ায় তাঁকে নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিতে হয়। এই মামলার বাদী ছাড়াও পাঁচ আসামির তিনজনই মারা গেছেন। মৃত তিন আসামির মধ্যে আরব আলীর এক স্ত্রী জাহানারা বেগমও রয়েছেন।
দুই বছর আগে মামলার বিচারে নতুন করে অভিযোগ গঠিত হয়, সেখানে আসামি শুধু আরব আলী ও তাঁর জীবিত স্ত্রী মনোয়ারা বেগম। তবে মনোয়ারা আরও বেশি অসুস্থ। আদালতের অনুমতি নিয়ে সশরীর হাজিরা থেকে রেহাই পেয়েছেন তিনি। তাঁর পক্ষে আইনজীবী নিয়মিত আদালতে হাজিরা দেন।