আ.লীগের সংসদ সদস্যের সুপারিশে মাদ্রাসার সভাপতি হলেন জামায়াত নেতা

উখিয়ার রাজাপালং এমদাদুল উলুম ফাজিল মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি পদে থাকা ব্যক্তিকে প্রত্যাহারের দাবিতে শিক্ষক-কর্মচারীদের সংবাদ সম্মেলন
ছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার রাজাপালং এমদাদুল উলুম ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি করা হয়েছে উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির ও বর্তমান রুকন আবুল হাসান আলীকে। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শাহীন আকতারের (সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির স্ত্রী) সুপারিশে সম্প্রতি তাঁকে এ পদে নিয়োগ দিয়েছেন ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।

গত ফেব্রুয়ারিতে অধ্যক্ষের দায়িত্ব থেকে অবসর নেওয়া আবুল হাসান আলীর বিরুদ্ধে মাদ্রাসার তহবিল থেকে ২ কোটি ৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আছে। ফলে মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের সর্বোচ্চ পদে তাঁর নিয়োগে ক্ষুব্ধ হয়েছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির অধিকাংশ শিক্ষক ও কর্মচারী।

আবুল হাসান আলীকে অপসারণের দাবিতে গতকাল রোববার কক্সবাজার শহরে সংবাদ সম্মেলন করেছেন মাদ্রাসাটির ২৭ জন শিক্ষক ও কর্মচারী। ওই মাদ্রাসায় মোট শিক্ষক-কর্মচারী আছেন ৩১ জন। সংবাদ সম্মেলনে যাঁরা আসেননি, তাঁরা সবাই আবুল হাসান আলীর আত্মীয়।

সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, সভাপতির নতুন দায়িত্ব নিয়েই আবুল হাসান আলী মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীদের মে মাসের বেতন-ভাতা (প্রায় ৬ লাখ টাকা) বন্ধ রেখেছেন। চাকরি থেকে বাদ দেওয়ার ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন।

মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীরা অভিযোগ করেন, মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা, দাতা সদস্য ও কমিটির লোকজন চেয়েছিলেন পরিচালনা কমিটির সভাপতি পদে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (এডিসি, শিক্ষা) রাখতে। এ জন্য গত মার্চ মাসে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর প্রস্তাবও পাঠানো হয়। কিন্তু স্থানীয় সাংসদের সুপারিশে সভাপতি পদ পেয়েছেন অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ নিয়ে অবসরে যাওয়া অধ্যক্ষ আবুল হাসান আলী। তাঁকে সরিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে এই পদে আনতে প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তাঁরা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক মুহিব উল্লাহ। বক্তব্য দেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আবদুল হক, সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ হাশেম, মো. মাহমুদুল হক, মোস্তাক আহমদ প্রমুখ।

মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আবদুল হক বলেন, সাবেক অধ্যক্ষ আবুল হাসান আলী নানা অনিয়ম এবং অর্থ আত্মসাতে জড়িত ছিলেন। গত ৯ বছরে ২ কোটি টাকার বেশি আত্মসাতের প্রমাণ মিলেছে তাঁর বিরুদ্ধে। মাদ্রাসার ধনসম্পদ কুক্ষিগত করতে অবসরে যাওয়ার পরও তিনি নানা কৌশলে পরিচালনা কমিটির সভাপতি হওয়ার চেষ্টা করেছেন। শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি থেকে বের করে দেওয়া এবং বেতন–ভাতা বন্ধ রাখার হুমকি দিচ্ছেন।

এ নিয়ে দেড় হাজার শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা উদ্বিগ্ন। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আবুল হাসান আলীকে সভাপতি করার আদেশ বাতিল চেয়ে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর গত ১৯ মে এবং কক্সবাজার জেলা প্রশাসক বরাবর ২৪ মে পৃথক লিখিত আবেদন করা হয়। কিন্তু এতেও কোনো সমাধান আসেনি। উল্টো মাদ্রাসার শিক্ষক–কর্মচারীদের হামলা-মামলার ভয়ভীতি প্রদর্শন ছাড়াও গত মে মাসে শিক্ষক–কর্মচারীদের বেতন–ভাতা বন্ধ রাখা হয়। এ জন্য বাধ্য হয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তাঁরা।

অভিযোগের বিষয়ে আবুল হাসান আলী প্রথম আলোকে বলেন, ফেব্রুয়ারিতে অধ্যক্ষের পদ থেকে তিনি অবসর নেন। কমিটির লোকজন মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে এডিসির নাম প্রস্তাব করে আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছেন, এটিও সত্যি। কিন্তু কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের আওয়ামী লীগদলীয় সংসদ সদস্য শাহীন আকতার সভাপতি পদে তাঁকে দেখতে চান।

এ জন্য এডিসির স্থলে তাঁকে সভাপতি মনোনয়ন দিতে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর ডিও লেটার ইস্যু করেন শাহীন আকতার। সেই ডিও লেটারের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি সভাপতি হয়েছেন। উপাচার্য চাইলে কমিটির প্রস্তাবনার বাইরের যে কাউকে সভাপতি নিয়োগ দিতে পারেন।

মাদ্রাসার টাকা আত্মসাৎ ও শিক্ষকদের ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে আবুল হাসান আলী বলেন, একটি প্রভাবশালী মহলের ইন্ধনে শিক্ষক-কর্মচারীরা তাঁর বিরুদ্ধে মাঠে নেমে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে এখন তিনি জড়িত নেই।

কিন্তু এ কারণে মাদ্রাসার পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে না। সভাপতি পদে আবুল হাসান আলীকে মনোনয়ন প্রসঙ্গে জানতে সদস্য শাহীন আকতারের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করেন এ প্রতিবেদক। তবে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। সে কারণে তাঁর বক্তব্য নেওয়া যায়নি।