
‘আল্লাহ ছাড়া কারও কাছে আমি মাথা নত করব না। ভয়ভীতি আমার নেই। জীবনে বারবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছি। যেখানে এক মিনিটে বাবা-মাসহ সব হারিয়েছি, সেখানে হারাবার আর কী আছে।’
গতকাল শনিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ এ সভার আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জীবনে কী পেলাম, না পেলাম, সেটা বড় কথা নয়। এ দেশের মানুষকে কী দিয়ে যেতে পারলাম, সেটাই বড় কথা।’ বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে বাঙালি জাতির কপালে কলঙ্কের তিলক এঁকে দিয়েছিল খুনিরা। বিজয়ী জাতিকে খুনির জাতি হিসেবে বিশ্বে পরিচিত করেছিল। এ দেশের মানুষ যাতে কোনোভাবেই স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে না পারে, সে জন্যই এই হত্যাকাণ্ড।
সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বলেন, খুনি ফারুক-রশিদ সাক্ষাৎকার দিয়ে বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধু এতই জনপ্রিয় ছিলেন যে তাঁকে সরাতে হলে খুন করা ছাড়া কোনো গত্যন্তর ছিল না। তাঁরা জিয়ার কাছে সমর্থন চাইলে নীরব সম্মতি দেন। সহায়তার ইঙ্গিত করেন। আর এটা প্রমাণ করে, বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জিয়াও জড়িত ছিলেন।
এই হত্যাকাণ্ড রাষ্ট্রকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র থেকে হয়েছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা ও এর চেতনা নিশ্চিহ্ন করাই ছিল এর উদ্দেশ্য। জয় বাংলা নিষিদ্ধ হয়। স্বাধীন দেশকে পাকিস্তানের একটি প্রদেশ বানাবার চক্রান্ত চলে। ২১ বছর বঙ্গবন্ধুর নাম নেওয়া নিষিদ্ধ ছিল। রেডিও, টেলিভিশন—কোথাও নামটা নেওয়া হতো না।
১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসার বর্ণনা দিতে গিয়ে আবেগতাড়িত হন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘জিয়া দেশে আসতে দিতে চায়নি। যখন ফিরে আসি, লক্ষ মানুষ আমাকে বুকে টেনে নিয়েছিল। লক্ষ্য ছিল, যারা দেশের মানুষের কপালে কলঙ্কের তিলক এঁকে দিয়েছে তাদের বিচার করব। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনব। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাব। এখন সেই কাজই করে যাচ্ছি।’
১৫ আগস্ট কেক কেটে খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালনের তীব্র সমালোচনা করে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুতে যারা কেক কাটে, তাদের সঙ্গে সংলাপ হতে পারে না। এটা মানবতাবিরোধী এবং যুদ্ধাপরাধের মতো অপরাধ।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, অনেক সাংবাদিক ১৫ আগস্টের খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে প্রশ্ন করেন। তাঁদের প্রশ্নে খুনিদের ফিরিয়ে আনার সঙ্গে অন্য কিছু আছে। এর মাধ্যমে আসলে শেখ হাসিনা ও সরকারের ব্যর্থতা দেখানোর উদ্দেশ্য আছে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহদীন মালিকের সমালোচনা করে সৈয়দ আশরাফ বলেন, তিনি কোনো দিন রাজনীতি করেছেন বলে জানা নেই। এখন নাম লিখিয়েছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে। নিজেকে শিক্ষিত লোক দাবি করেন। তিনি আবার পরামর্শ দেন কাকে স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র কিংবা যোগাযোগমন্ত্রী বানাতে হবে। আরেকজন করেন এনজিও। কিন্তু আলোচনা করেন নির্বাচন নিয়ে। যিনি মানবাধিকার নিয়ে কাজ করেন, তিনি আবার আলোচনা করে বেড়াচ্ছেন সন্ত্রাস নিয়ে।
দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে আশরাফ বলেন, এমন কিছু করবেন না, যা দলের ভাবমূর্তি ও শক্তি নষ্ট করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারি ও চাঁদাবাজির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা দলের সভাপতিকে দুর্বল করে দিতে পারে। আওয়ামী লীগকে ব্যবহার করে চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি শোভা পায় না।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন আমির হোসেন আমু, মতিয়া চৌধুরী, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, মোহাম্মদ নাসিম, সাহারা খাতুন, আসাদুজ্জামান নূর; সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়া ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ।