ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার এই দাবি জানান দিয়াজের বড় বোন জুবাঈদা ছরওয়ার চৌধুরী। দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের দামপাড়া এলাকায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কার্যালয়ে তিনি তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করেন।
সিআইডি চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. হুমায়ুন কবির মামলাটি তদন্ত করছেন। আজ বুধবার দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনটি চট্টগ্রাম আদালতে জমা দেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
‘দিয়াজ আত্মহত্যা করেননি, তাঁকে শ্বাস রোধ করে হত্যা করা হয়েছে’—দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে এই তথ্য আসার পর আবারও আলোচনায় উঠে এসেছে বিষয়টি। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে লাশের দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত হয়। গত বৃহস্পতিবার ডাকযোগে প্রতিবেদনটি সিআইডির চট্টগ্রাম কার্যালয়ে পাঠানো হয়।
দিয়াজের বড় বোন জুবাঈদা ছরওয়ার চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে তাঁর ভাইকে শ্বাস রোধ করে হত্যা করা হয়েছে। এ জন্য প্রথমবারের মতো তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করে জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তারের অনুরোধ করেছেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির প্রথম আলোকে বলেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে সব উল্লেখ করে বুধবার আদালতে প্রতিবেদনটি জমা দেওয়া হবে। এরপর আদালতের কোনো নির্দেশনা পেলে তা পালন করা হবে।
এদিকে দিয়াজের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে গতকাল দুপুরে মানববন্ধন করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একাংশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে ‘জাগরণ অস্তিত্বে ৭১’ ব্যানারে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বির সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য মো. রাকিব হোসাইন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর জীবন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বায়েজিদ সজল প্রমুখ।
২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকায় একটি ভবনের দ্বিতীয় তলার ভাড়া বাসা থেকে দিয়াজের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সেদিন বাসায় দিয়াজ ছাড়া পরিবারের আর কেউ ছিলেন না।
কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে যাওয়ার আগে দিয়াজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা-কর্মীদের মধ্যে তাঁর অনুসারীও রয়েছে। তখন তাঁরা অভিযোগ করেন, ৯৫ কোটি টাকার দরপত্রের ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে বিরোধের কারণে ছাত্রলীগের একটি পক্ষ দিয়াজকে হত্যা করে বাসায় লাশ ঝুলিয়ে রাখে। দিয়াজের লাশ উদ্ধারের পরদিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে প্রথম ময়নাতদন্ত হয়। ২৩ নভেম্বর পুলিশ জানায়, দিয়াজকে হত্যা করা হয়েছে-এমন আলামত ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মেলেনি। তখন ওই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে দিয়াজের পরিবারসহ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একটি অংশ।
ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে এমন অভিযোগ এনে গত বছরের ২৪ নভেম্বর দিয়াজের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী বাদী হয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপু (বর্তমানে কমিটি স্থগিত), সাবেক সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন চৌধুরীসহ ১০ জনকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন।