আসামি বিএনপি-জামায়াত ও হেফাজতের নেতারা

হেফাজত ইসলামের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচির দিন গত রোববার পল্টন-মতিঝিল এলাকায় সহিংসতার ঘটনায় মোট ১৬টি মামলা হয়েছে।

গত সোমবার রাতে দায়ের হওয়া এসব মামলার একেকটিতে আসামি হিসেবে নিম্নে ছয়জন থেকে সর্বোচ্চ ২৪৭ জন পর্যন্ত ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। হেফাজতের কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন জেলা পর্যায়ের শীর্ষস্থানীয় নেতা, বিএনপি, জামায়াত ও দল দুটির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের কয়েকজন নেতার নামও রয়েছে আসামিদের তালিকায়। এ ছাড়া এসব মামলায় অজ্ঞাতনামা লক্ষাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে, ১৬টি মামলার মধ্যে পল্টন থানায় ছয়টি, মতিঝিল থানায় নয়টি ও রমনা থানায় একটি দায়ের করা হয়। এর মধ্যে তিনটিতেহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। বিএনপি ও জামায়াতের নেতাদের দুটি হত্যা মামলাসহ ছয়টি মামলায় আসামি করা হয়েছে।

এদিকে সোমবার রাতে গ্রেপ্তার হওয়া হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীকে গতকাল নয় দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। এ ছাড়া রোববার রাতে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার হওয়া হেফাজতের ৪০ জন নেতা-কর্মীকে দুদিন করে রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

বিভিন্ন থানার ১৬টি মামলার মধ্যে পাঁচটি করেছে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ। বাকি ১১টির মধ্যে ঢাকা সিটি করপোরেশন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম, ট্রাফিক পূর্ব বিভাগ, আনসার ভিডিপি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, যুবক কমিশনের প্রতিনিধি ও পুলিশের একজন গাড়ি চালক একটি করে মামলার বাদী। রেজাউল করিম নামে এক ব্যাক্তি তাঁর স্ত্রীর বড় ভাই নাহিদকে (২২) হত্যার অভিযোগে অপর মামলাটি করেছেন। এর মধ্যে পাঁচটি মামলায় শুধু অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়।

এসব মামলার মধ্যে মতিঝিল থানা উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শাহজহানকে হত্যার ঘটনায় মামলা (১৩ নং) করেছেন এসআই জাকির হোসেন। ওই মামলায় ২৪৭ জনের নাম উল্লেখ করে ৩০ থেকে ৪০ হাজার অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এই ২৪৭ জনকেই ঘুরেফিরে সবগুলো মামলার আসামি করা হয়েছে। সবগুলো মামলা মিলিয়ে অজ্ঞাতনামা আসামির সংখ্যা লক্ষাধিক। দুটি মামলায় আসামি করা হয়েছে ‘অজ্ঞাতনামা অগণিত’ ব্যক্তিকে।

পুলিশ হত্যা মামলার ২৪৭ জন আসামির মধ্যে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী, হেফাজতের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি মাইনুদ্দিন রুহি, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ফরিদ উল্লাহ, ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক নূর হোসাইন কাশেমিসহ হেফাজতের ১৮১ জন কেন্দ্রীয় ও জেলার নেতা রয়েছেন। একই মামলায় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব উন নবী সোহেল, সাধারণ সম্পাদক সরাফত আলী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল বারী, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম, বিএনপির সহছাত্রবিষয়ক সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দীন (টুকু), ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজিজুল বারী, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল কাদের ভুঁইয়াসহ বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের ২০ জন নেতাকে আসামি করা হয়। আর জামায়াত নেতা সাংসদ হামিদুর রহমান আযাদ, রফিকুল ইসলাম, শফিকুল ইসলামসহ (মাসুদ) জামায়াত-শিবিরের ৪৬ জন নেতাকে আসামি করা হয়।

হেফাজত নেতাদের মধ্যে জুনায়েদ বাবুনগরী নয়টি মামলার প্রধান আসামি। তাঁকে আরও দুটি মামলায় দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে। তবে হেফাজতের আমির শাহ আহমদ শফীকে কোনো মামলাতেই আসামি করা হয়নি।

স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল বারী প্রথম আলোকে বলেন, হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচির দিন যা ঘটনা প্রবাহ সেটা সরকার ও তার প্রতিপক্ষের মধ্যে ঘটেছে। সেখানে বিএনপি ও তাঁর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না। সরকারের এই পদক্ষেপ বিরোধী দলের নেতাদের দমন করার একটা প্রচেষ্টা বলে তিনি দাবি করেন।

বাবুনগরীসহ ৪১ জন রিমান্ডে: গতকাল মঙ্গলবার মতিঝিল থানার পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মহানগর হাকিম মোহাম্মদ তারেক মঈনুল ইসলাম ভূঁইয়া জুনায়েদ বাবুনগরীর নয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে তাঁর পক্ষে করা জামিনের আবেদন নাকচ করে দেন।

এ ছাড়া গত রোববার ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় আটক হওয়া হেফাজতে ইসলামের ৪০ জন কর্মীকে দুই দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন মঞ্জুর করেন মহানগর হাকিম মো. ইসমাইল হোসেন। তাঁদের মধ্যে ২০ জনকে রমনা থানা ও ২০ জনকে শাহবাগ থানার পুলিশ রিমান্ডে নিয়েছে।

জুনায়েদ বাবুনগরীকে বিভিন্ন ভবনে অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ, হত্যা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মারধর করার অভিযোগে মতিঝিল থানায় পুলিশের করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে গতকাল আদালতে হাজির করা হয়। তাঁকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ।

পুলিশের রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, আসামি জুনায়েদ বাবুনগরীর হুকুমে ও প্রত্যক্ষ মদদে হেফাজতে ইসলামের অবরোধ কর্মসূচির নামে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা জঙ্গি কায়দায় রাজধানীর মতিঝিল ও তার আশপাশ এলাকায় বিভিন্ন ভবনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে ত্রাসের সৃষ্টি করেন। হেফাজতের মাওলানা মইনুদ্দিন রুহীর মদদে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোটের কেন্দ্রীয় নেতা-কর্মীরা পুলিশ বক্সে হামলা করেন। তাঁরা পুলিশ বক্সের অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠেন। আসামিরা পুলিশের উপপরিদর্শক শাহজাহানকে লোহার রড ও বাঁশের লাঠি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন এবং পুলিশের পিস্তল ও গুলি নিয়ে যান। আসামিরা ১৮-দলীয় জোটের সহযোগিতায় হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা বাস্তবায়নের নামে ধ্বংস ও হত্যাযজ্ঞ চালান। পলাতক আসামিদের নাম-ঠিকানা ও অবস্থান জানতে বাবুনগরীকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।

রিমান্ডের শুনানিতে বাবুনগরীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, ইকবাল হোসেন, খোরশেদ আলম, গোলাম মোস্তফা খান, আবদুর রাজ্জাক প্রমুখ।