ইউসুফের বিরুদ্ধে গণহত্যার সাতটিসহ ১৫ অভিযোগ

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির এ কে এম ইউসুফের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালে গণহত্যার সাতটিসহ ১৫টি 
অভিযোগ আনা হয়েছে। গতকাল বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে তাঁর বিরুদ্ধে
আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন জমা দিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
দুপুর ১২টার দিকে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি হূষিকেশ সাহা, আবদুর রহমান হাওলাদার ও সৈয়দ সায়েদুল হক
আনুষ্ঠানিক অভিযোগ, তদন্ত প্রতিবেদন ও আনুষঙ্গিক নথিপত্র রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে জমা দেন। রাষ্ট্রপক্ষ জানায়,
এগুলোর সঙ্গে ইউসুফকে গ্রেপ্তারের জন্য পরোয়ানা জারির আবেদনও জমা দেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার এ
আবেদনের বিষয়ে শুনানি হতে পারে।
রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, ইউসুফের বিরুদ্ধে সাতটি গণহত্যাসহ ১৫টি অভিযোগ আনা হয়েছে। গণহত্যার অভিযোগগুলো
হলো একাত্তরের ১৩ মে বাগেরহাটের কচুয়া থানার রণজিৎপুর গ্রামে গণহত্যা, ১৯ মে মোরেলগঞ্জ বাজারে
গণহত্যা, ২১ মে রামপালের ডাকরা গ্রামে গণহত্যা, ১৪ অক্টোবর রামপালের চুলকাঠি গ্রামে গণহত্যা, ১৫ অক্টোবর
কচুয়ার মঘিয়া গ্রামে গণহত্যা এবং জুলাই ও নভেম্বরে কচুয়ার শাঁখারীকাঠিতে গণহত্যা।
আনুষ্ঠানিক অভিযোগ অনুসারে, একাত্তরে বাগেরহাটে (তৎকালীন খুলনা জেলার একটি মহকুমা) ডাকরা গ্রামের
ভয়াবহ গণহত্যার সঙ্গে ইউসুফ জড়িত ছিলেন। ডাকরা গ্রামের কালীমন্দিরের পুরোহিত বিনোদ বিহারী চক্রবর্তী
ওই অঞ্চলের হিন্দুদের ধর্মগুরু ছিলেন। একাত্তরের ২১ মে দুপুর ১২টার মধ্যে ডাকরাসহ আশপাশের প্রায় ২০-
২১টি গ্রামের প্রায় চার হাজার হিন্দু ভারতের শরণার্থী শিবিরে যাওয়ার উদ্দেশে ওই কালীমন্দিরে জড়ো হন।
ইউসুফকে এ খবর পৌঁছে দেন ডাকরা গ্রামের মুসলিম লীগের নেতা ও স্বাধীনতাবিরোধী লিয়াকত আলী গজনবী ও
আলতাব গজনবী। ইউসুফ তখন কুখ্যাত রাজাকার রজব আলী ফকিরসহ (পরে আত্মহত্যা করেন) ৪০-৫০ জন
রাজাকারকে ডাকরায় পাঠান। ওই দলটি পরিকল্পিতভাবে দুই ভাগ হয়ে কালীমন্দিরে জড়ো হওয়া হিন্দুদের ওপর
নির্বিচারে গুলি চালায়।
দুই-তিন ঘণ্টা ধরে চলা ওই হত্যাযজ্ঞে প্রায় ৭০০ হিন্দু নিহত হন। তাঁদের মধ্যে ১০৪ জনের নাম অভিযোগে
উল্লেখ করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, ইউসুফের বিরুদ্ধে হত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ প্রভৃতি মানবতাবিরোধী অপরাধ ও এতে
সহযোগিতার আরও আটটি অভিযোগ রয়েছে। এগুলো হলো একাত্তরের ১৯ এপ্রিল রামপালে শান্তি কমিটির সভায়
লুট ও ধ্বংসের প্রকাশ্য আদেশ দেওয়া, ২২ এপ্রিল কচুয়ার ১০টি গ্রামের ৩০০-৪০০ হিন্দুর বাড়ি লুট ও
অগ্নিসংযোগ, ১৩ মে মোরেলগঞ্জের আবু বক্কর সিদ্দিক হত্যা, ১৭ মে মোরেলগঞ্জ বাজারের
ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান-বসতবাড়ি লুট ও অগ্নিসংযোগ, ৯ জুন শরণখোলার তাফালবাড়ি গ্রামে হত্যাকাণ্ড, ৭ জুন
শরণখোলার রায়েন্দা গ্রামে হত্যা, ২৬ জুলাই মোরেলগঞ্জে ডা. মজিদ হত্যা এবং ২৯ জুলাই রায়েন্দাতে সালাম
হত্যা।
প্রতিটি অভিযোগে ইউসুফের বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায় আনা হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষ আরও জানায়, পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সাবেক সদস্য এ কে এম ইউসুফ একাত্তরে ৯৬ জন জামায়াত
সদস্য ও স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়ে খুলনার আনসার ও ভিডিপি ক্যাম্পে সর্বপ্রথম সশস্ত্র রাজাকার বাহিনী প্রতিষ্ঠা
করেন। একাত্তরে তিনি মালেক মন্ত্রিসভার রাজস্ব, পূর্ত, বিদ্যুৎ ও সেচমন্ত্রী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শেষে দালাল আইনে
ইউসুফের বিচার হয়েছিল এবং তিনি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিলেন। তবে ১৯৭৩ সালের ৫ ডিসেম্বর
তিনি মুক্তি পান। গত ২২ এপ্রিল মানবতাবিরোধী অপরাধ তদন্ত সংস্থা তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করে।