ইকবালের স্ত্রী-সন্তানদের আত্মসমর্পণ করতে হবে

দুর্নীতির মামলায় আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ এইচ বি এম ইকবালের স্ত্রী মমতাজ বেগম, দুই ছেলে মোহাম্মদ ইমরান ইকবাল ও মঈন ইকবাল এবং মেয়ে নওরীন ইকবালকে তিন বছর করে দেওয়া কারাদণ্ডাদেশ স্থগিত করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ (রুল খারিজ) বাতিল করেছেন সর্বোচ্চ আদালত।

হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) নিষ্পত্তি করে গতকাল রোববার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।

গতকাল আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। এইচ বি এম ইকবালের পরিবারের সদস্যদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফ ও কামরুল হক সিদ্দিকী।

দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান প্রথম আলোকে বলেন, এখন মমতাজ বেগম, তাঁর দুই ছেলে এবং এক মেয়েকে দেওয়া তিন বছরের কারাদণ্ড পুনরুজ্জীবিত হলো। দণ্ডিত হয়ে পলাতক অবস্থায় তাঁরা রিট করেছিলেন। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হওয়া রুল খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ, অর্থাৎ হাইকোর্টের আদেশটি বাতিল হলো। এখন তাঁরা আইনের দৃষ্টিতে পলাতক। তাঁদের গ্রেপ্তারে এখন আইনগত কোনো বাধা নেই, তবে চাইলে তাঁরা নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে পারেন বলে জানান খুরশীদ আলম খান।

দুদক, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, সাজাপ্রাপ্ত হলেও এইচ বি এম ইকবালের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে সরকারের সংস্থাগুলো কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছিল না। বিশেষ আদালতের রায়ে সাজাপ্রাপ্ত হলেও ইকবাল পরে হাইকোর্ট থেকে খালাস পান। খালাসের বিরুদ্ধে দুদক সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেও পরে পিছিয়ে যায় এবং মামলা না চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

আবার সাজাপ্রাপ্ত হয়েও মোহাম্মদ ইমরান ইকবাল বেসরকারি প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালক আছেন। মঈন ইকবাল ও নওরীন ইকবালও সাজাপ্রাপ্ত অবস্থায় একই ব্যাংকের পরিচালক ছিলেন। অথচ ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী সাজাপ্রাপ্ত কেউ ব্যাংকের পরিচালক হতে পারেন না। কিন্তু তাঁদের ব্যাপারে কখনোই আইনের ধারা প্রয়োগ করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। পুলিশও তাঁদের গ্রেপ্তারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা অবশ্য গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের আজকের (গতকালের) আদেশ হাতে পাওয়ার পর এবার যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

নথিপত্র থেকে জানা যায়, এইচ বি এম ইকবালসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের কারণে দুদক মামলা করে ২০০৭ সালে। ২০০৮ সালের ১১ মার্চ সাজা দিয়ে বিশেষ জজ আদালত রায় ঘোষণা করেন। রায়ে এইচ বি এম ইকবালকে অসাধু উপায়ে সম্পদ অর্জনের দায়ে ১০ বছর এবং মিথ্যা সম্পদ বিবরণী দাখিলের কারণে আরও তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তাঁর স্ত্রী মমতাজ বেগম, দুই ছেলে মোহাম্মদ ইমরান ইকবাল ও মঈন ইকবাল এবং মেয়ে নওরীন ইকবালকে দেওয়া হয় তিন বছর করে কারাদণ্ড।

এইচ বি এম ইকবাল ২০১০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠান। পরে তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিনে মুক্তি পান। পরে সাজার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে ২০১১ সালের ১৮ জানুয়ারি হাইকোর্ট তাঁকে খালাস দেন।

আইনজীবী সূত্র জানায়, এইচ বি এম ইকবালের স্ত্রী ও সন্তানেরা এত দিন আত্মগোপনে ছিলেন। তবে তাঁদের করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাজার কার্যকারিতা স্থগিত করে হাইকোর্ট রুল দেন, যার মেয়াদ শেষ হয় ২০১০ সালের ৪ নভেম্বর। এরপর প্রায় ছয় বছর চুপচাপ থেকে সাজা স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়াতে আবারও হাইকোর্টে আবেদন করা হয় এ বছরের সেপ্টেম্বরে।

গত ১৮ অক্টোবর হাইকোর্ট সাজা স্থগিতের মেয়াদ ছয় মাসের জন্য বৃদ্ধি করেন। এর বিরুদ্ধে ১৫ নভেম্বর আবেদন করে দুদক। পরদিন চেম্বার বিচারপতি হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে বিষয়টি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেন। এর ধারাবাহিকতায় শুনানি হয় গতকাল এবং হাইকোর্টের দেওয়া রুল খারিজ করে দুদকের করা লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করে আদেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত।